প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: জবরদখলের সমস্যা তো রয়েছেই। আর সেই জবরদখলের জেরেই আলিপুরদুয়ারের(Alipurduar) সংশোধনাগারের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সংশোধনাগারের(Correctional Home) একেবারে বাইরের দেওয়াল ঘেঁষেই তৈরি হয়েছে নির্মাণ। এমনকি বাজারও বসছে। আর সেই বাজার ও গজিয়ে ওঠা হোটেলের একাংশের আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে সংশোধনাগারের জমিতেই। এমনটাই অভিযোগ।
আলিপুরদুয়ার সংশোধনাগারের পূর্ব দিকে সার্কিট হাউস ও আলিপুরদুয়ার থানা। সেদিকে কিন্তু এই নিরাপত্তাজনিত সমস্যা খুব একটা নেই। আর বাকি তিন দিকেই গড়ে উঠেছে দোকানপাট ও বাড়িঘর। এমনিতে অবশ্য সংশোধনাগারের চারিদিকই উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। নিরাপত্তার আঁটোসাঁটো ব্যবস্থাও রয়েছে পুলিশের। তারপরেও এই অবৈধ নির্মাণগুলি চিন্তা বাড়াচ্ছে। আশপাশে দীর্ঘদিন ধরে জমি দখল করে যেসব বাড়ি ও হোটেল রয়েছে, সেগুলির মধ্য দিয়েই দিব্যি চলে যাতায়াত। সেসবের উপর কিন্তু সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই। এছাড়াও সীমানাপ্রাচীরের ভিতরের দিকেও কয়েকটি নির্মাণ রয়েছে বলে অভিযোগ। দোকানগুলি তো রীতিমতো কংক্রিটের তৈরি বহুতল। যেভাবে খুশি জমি দখল করে নির্মাণ করায় নিকাশি ব্যবস্থা বলেও কিছু নেই। অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। এছাড়া হোটেল ও মিষ্টির দোকানের আবর্জনার দুর্গন্ধে নাজেহাল হতে হয় বাসিন্দাদের।
মূল রাস্তার পাশে একটি ছোট পাবলিক টয়লেট ছিল। স্থানীয়রাই বলছেন, জবরদখলের চাপে সেটিও উধাও হয়ে গিয়েছে। এখান সংশোধনাগার সংলগ্ন সেই এলাকা এতটাই ঘিঞ্জি যে এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে দমকলের ইঞ্জিন ঢোকাটাই সমস্যামূলক হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে, সংশোধনাগারের কর্তৃপক্ষ অবশ্য ভরসা করছেন তাঁদের উঁচু পাঁচিলের উপরই। সংশোধনাগাড়ের এক কর্তার কথায়, ‘এখন তাও পরিস্থিতি অতটাও খারাপ হয়নি। তবে নতুন করে যাতে আর দোকানপাট ও বসতি না গড়ে ওঠে, সেটাই দেখতে হবে। আমাদের সংশোধনাগারের উঁচু প্রাচীর নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট।’
এদিকে, সংশোধনাগারের জমি দখল করেই যে তাঁরা নির্মাণ করেছে সেকথা কিন্তু মানতে নারাজ দখলদাররা। তাঁদের দাবি, ওই এলাকায় বাজার ও দোকানপাট প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সম্মতিতেই হয়েছিল। কলেজ হল্ট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কমল নাথ বলেন, ‘অনেক বাড়িঘর চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে থেকে সেখানে একই অবস্থায় রয়েছে। কয়েকটি দোকান বড় করা হয়েছে, কিন্তু বাড়িঘরের কোনও পরিবর্তন হয়নি।’ আর তাঁর কথায়, ‘নিরাপত্তাজনিত কোনও সমস্যা এখানে হয়নি কখনও। সরকার সাধারণ মানুষের কথা ভাবুক।’
তবে তাঁরা সেকথা বললেও, নথিপত্র কিন্তু অন্য কথা বলছে। সংশোধনাগারের জমির রেকর্ড বলছে, যেখানে ওই নির্মাণগুলি হয়েছে, সেসব তাদেরই জমি। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই জবরদখলের এই বাড়বাড়ন্ত বলে অভিযোগ।