শালকুমারহাট: প্রকাশ্যে ট্র্যাক্টর ট্রলিতে করে বালি, পাথর পাচার রুখে দিলেন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। শালকুমার-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানপাড়ার বুড়িতোর্ষা নদী থেকে দিনে ৫০-৬০টি ট্র্যাক্টর ট্রলিতে করে অবৈধভাবে বালি, পাথর পাচার করা হয়। কিন্তু সোমবার তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শ্রীবাস রায় পাচারকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। শালকুমারহাট-জলদাপাড়া সড়কের সুলকুর মোড়ে ট্র্যাক্টর আটক করেন প্রধান। পরে সোনাপুর ফাঁড়ির পুলিশ সুলকুর মোড়ে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। যদিও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
এমন পদক্ষেপে শাসকদল অবশ্য প্রধানের পাশেই দাঁড়িয়েছে। তৃণমূলের শালকুমার-১ অঞ্চল সভাপতি দিলীপ বর্মন বলেন, ‘প্রশাসনেরই স্থানীয় অংশ হলেন প্রধান৷ তাই বালি, পাথর পাচার রুখতে প্রধান পদক্ষেপ করে ঠিকই করেছেন।’ এদিকে প্রধানের দাবি, রুখে দাঁড়ানোর পর বালি মাফিয়াদের হুমকির মুখে নাকি পড়তে হয়েছে তাঁকে। এদিকে বিরোধীরা অবশ্য প্রধানকে ক্লিনচিট দিতে নারাজ। বিরোধীদের দাবি, পাচারের টাকার ভাগ না পেয়েই হয়তো প্রধান এই পদক্ষেপ করেছেন। যদিও বিরোধীদের কথায় গুরুত্ব দিতে নারাজ প্রধান।
জলদাপাড়া বনাঞ্চল লাগোয়া বুড়িতোর্ষা নদীতে আগে বালি, পাথর তোলার রয়্যালটি চালু ছিল। সেই বেডের মেয়াদ শেষ হয়েছে বছর তিনেক আগে। নতুন করে রয়্যালটি চালু না হলেও রাতের অন্ধকারে মাঝেমধ্যেই বুড়িতোর্ষা নদীর বালি, পাথর পাচার চলে বলে অভিযোগ৷ প্রশাসন কখনও পদক্ষেপ করে, কখনও করে না। তবে লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকে পাচারের কারবার বেড়ে যায়। ভোট শেষের পর এখনও অবাধে পাচার চলছে। ভোর চারটা থেকে ট্র্যাক্টর ট্রলিতে করে এখানকার বালি, পাথর তুলে নানা জায়গায় বিক্রি করে মাফিয়ারা। এমন পাচার রুখতেই এদিন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পদক্ষেপ করেন।
শ্রীবাস বলেন, ‘জলদাপাড়া লাগোয়া বুড়িতোর্ষা নদীখাত থেকে এখন বালি তোলার অনুমোদন নেই। তবু স্থানীয় স্তরে কিছু বালি, বজরি তোলা হলেও আমরা গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু ভোটের পর থেকে লাগামহীনভাবে প্রায় ৫০-৬০টি ট্র্যাক্টর ট্রলিতে করে বালি, পাথর বাইরেও পাচার চলছে। এর মধ্যে প্রশাসনের জেলা স্তর থেকে বিষয়টি দেখার জন্য আমার কাছে ফোন আসে। তাই এদিন ট্র্যাক্টর ট্রলি আটকে দিই।’ এমন পদক্ষেপ করায় মাফিয়ারা নাকি পালটা প্রধানকে হুমকি দেয়। শ্রীবাসের কথায়, ‘ক’জন মাফিয়া আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তবে স্থানীয় প্রশাসন হিসেবে যা সঠিক আমি সেটাই করেছি।’
এদিকে বিজেপির কিষান মোর্চার জেলা সহ সভাপতি শালকুমারহাটের স্বপন রায়ের কথায়, ‘এতদিন প্রধান পাচারের ভাগ পেতেন। এখন পাচ্ছেন না বলেই হয়তো এই পদক্ষেপ করেছেন।’ অনেকটা একই সুরে সিপিএমের আলিপুরদুয়ার-১ পশ্চিম এরিয়া কমিটির সদস্য অরবিন্দ রায়ের বক্তব্য, ‘কয়েক বছর থেকে রাজ্য সরকার রয়্যালটির অনুমোদন দিচ্ছে না। তাই হাজার হাজার শ্রমিক, গাড়ির চালকরা অসহায়। আর কোনও অবৈধ উদ্দেশ্যসাধন হয়নি বলেই হয়তো প্রধান এই পদক্ষেপ করেছেন।’ যদিও শ্রীবাসের পালটা বক্তব্য, ‘বিরোধীরাও তো এতদিন এই পাচার নিয়ে কোথাও লিখিত অভিযোগ করেনি। আর আমাকে হুমকি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিরোধীদের ইন্ধন রয়েছে।’