উত্তরবঙ্গ ব্যুরো: ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ন্যায়পাল নিয়োগের জন্য এক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে (University) বারে বারে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC)। তারপরও বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ হয়নি ন্যায়পাল। ফলে ক্ষুব্ধ ইউজিসি তালিকা দিয়ে প্রকাশ্যে আনল নির্দেশ অমান্যকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নাম। দেশের ১০৮টি সরকারপোষিত, ৪৭টি বেসরকারি এবং দুটি ডিমড বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির নির্দেশ মানেনি। সেই তালিকায় রয়েছে রাজ্যের ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা। তবে দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও (Dakshin Dinajpur University) ইউজিসির নির্দেশ মানেনি। সুকান্ত নিজে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ও (University of Gour Banga) ন্যায়পাল নিয়োগ করেনি। আলিপুরদুয়ার (Alipurduar University) এবং দার্জিলিং হিল (Darjeeling Hill University) উত্তরের এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ও অগ্রাহ্য করেছে ইউজিসির নির্দেশ।
ইউজিসির তালিকা প্রকাশ্যে আসতে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। শিক্ষক, আধিকারিকদের একাংশের আশঙ্কা ইউজিসির নির্দেশ না মানায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য অনুদান বন্ধ করে দিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে একধাপ এগিয়ে সুকান্তর বক্তব্য, ‘নির্দেশ না মানার জন্য ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বৈধতা বাতিলও করে দিতে পারে। সেটা হলে আমাদের কাছে খুবই লজ্জার কারণ হবে।’
২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কমিটির বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ইউজিসি। সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক মাসের মধ্যেই ন্যায়পাল নিয়োগের কথা বলা হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বারে বারে চিঠিও দেয় ইউজিসি। তারপরও নিয়োগ হয়নি ন্যায়পাল। ২০২৩-এর ৫ ডিসেম্বর ফের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে চিঠি পাঠিয়ে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ন্যায়পাল নিয়োগের অনুরোধ করে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ। তাতেও কাজ না হওয়ায় তৈরি করা হয় খেলাপিদের তালিকা।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিশ্বজিৎ দাসের কথায়, ‘কিছুদিন হল দায়িত্ব পেয়েছি। ইউজিসির চিঠি পাওয়ার পরই পদক্ষেপ করা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই ন্যায়পাল নিয়োগ করে ইউজিসিকে নথি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’ দার্জিলিং হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সুজাতারানি রাই অবশ্য নানা সমস্যার কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনও স্থায়ী শিক্ষক বা আধিকারিক নেই। উপাচার্য নেই। তাই ন্যায়পাল নিয়োগ করা বাস্তবে সম্ভব নয়। রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে ওই বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’
সূত্রের খবর, কারা ন্যায়পাল হতে পারেন তাঁদের একটি তালিকা মাসখানেক আগেই রাজ্য শিক্ষা দপ্তর সরকারিভাবে প্রকাশ করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সেই তালিকা থেকেই ন্যায়পাল নিযুক্ত করতে পারত। তারপরও কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গড়িমসি করল তার সদুত্তর মেলেনি। দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবব্রত মিত্রের কথা, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও কোনও নিয়োগ হয়নি। ফলে নানা সমস্যা রয়েছে। ইউজিসি কয়েকটা দিন সময় দিলে আমরা ন্যায়পাল নিয়োগ করে দেব।’