সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫

শেষ আপডেট:

প্রেতপুরী

সোমা দাশ 

 

একে একে নিভছে আলো।

গলিটার শেষ প্রান্তে এক বিরাট প্রাসাদ,

পোষা চাঁদের আলোয় জ্বলজ্বলে।

ভঙ্গুর অস্তিত্ব নিয়ে পাড়ি দিয়েছি এই পথে,

প্রাসাদে যে করেই হোক পৌঁছোতে হবে।

সেখানে বিক্রি হচ্ছে স্বপ্ন…

দাম বেশি নয়,

নিজের আত্মাটুকু শুধু বিকিয়ে দিলেই হয়।

অন্ধগলির পঙ্কিল আবর্তে শুধুই ঘুরে মরি।

মনে ক্লেদ,

গায়ে চকচকে পোশাক।

হাঁটতে হাঁটতে গ্রাস করি

যত পূতিগন্ধময় আবর্জনা।

শেষমেশ, প্রাসাদের প্রহরী প্রেত

মিষ্টি হেসে আমাকে স্বাগত জানায়।

 

নীরব দর্শক চুপ!

পিয়ালী দাস দে

 

মুহুর্মুহু ধ্বংসলীলা, আকাশে হত্যাকারীদের কলরব,

ভূগর্ভ অগ্নি লাভা, অর্ধভগ্ন, সম্পূর্ণ ভগ্ন, সব নীরব দর্শক।

চিৎকার, অভিমান, রাগ, সব মুছে গেছে,

শুধু পড়ে আছে ভয়, শুধু ভয়, চোখের জল শুকিয়েছে।

আপন, পর কেই বা কার?

নিজেরে বাঁচাই শুধু হাহাকার।

দূরে, কাছে কেই বা আছে?

সব বয়ে চলে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা গোগ্রাসে।

এই চুপ চুপ, শব্দ নয়,

মা… ওমা… বড্ড খিদে পায়।

ওরে কীসের খিদে, আগে প্রাণ তো….

বিকট আওয়াজ,

হায়, আল্লাহ হায়!

অসহযোগ

শর্মিষ্ঠা ঘোষ

 

অসহযোগের দু’রকম ব্যাখ্যা হয়

হয় বসবাস সংক্রান্ত নয় মানুষ

মানুষ তো এমনি এমনিই কম

বসবাস ফাঁকা শরীরী কারিকুরিহীন

উদ্বায়ী চেষ্টায় টুকিটাকি সাজানো-গোছানো

তায় বিতৃষ্ণা চিল কাক তাড়ানো

চারটেই চোখ থাকে বাড়ির ভেতর

দুটো দুটো দেয়ালের পার

দুটো দুটো শীত গাছ ফুল পাতাহীন

পাহাড় নদী বন অ্যালবাম খুঁজে

খুঁটে খুঁটে ছবি হাহা হিহি ঝরনার জল

আকর্ণ ডুব হ্যাংগ্লাইডিং

সাপ না না পথ শেষে উলোঝুলো ঘুম

আবছা লাইনের ধারে অভিযোগ তির

আরও দূর আরও দূর কাচের মানুষ

বসবাস নাকি মানুষের গন্ধ শব্দ সুর

কাছে এক রূপকথা লেখা

আদর্শ সংসার পাতা জোড়া আহ্লাদ

তুলনায় কত কিছু হাতছানি মায়া

সেই ভালো আরও ঘন গল্পের টানে

এইসব মান্ডেন না বলা কথা

এক অরোরা বোরিয়ালিস

পালাতে পালাতে সাথে এলিয়ট যান

‘বিটুইন দ্য কনসেপশন অ্যান্ড ক্রিয়েশন

ফলস দ্য শ্যাডো’

শ্যাডো লাইন বরাবর আমাদের বাস।

ঝাঁপ

তীর্থঙ্কর দাস পুরকায়স্থ

 

জলের মরিয়া স্রোত নেমে আসে

ঢালু বেয়ে অন্ধকার খাদে

অপরিবর্তনীয় পথে

দৃঢ় প্রতিজ্ঞায়।

 

অচল আকাশ দেখে, তার

নক্ষত্রের হার একদিন সে

গলায় পরেছে।

অনড় বৃক্ষরা জানে

একদিন স্থির ছায়া পড়েছিল

সর্ব অঙ্গে, সীমন্তিনী নারী

ঘাটের তুচ্ছাতিতুচ্ছ গল্পে খুশি।

 

নিয়তির কালো খাদে

নদীটি স্বেচ্ছায় নামে একদিন,

প্রতিস্পর্ধী

অক্ষয়, অব্যয় জীবনের।

বিবেক প্রপঞ্চ

সুকুমার সরকার

 

বৈশাখে নবপঞ্জিকা হাতে ছুটছেন পুরোহিত

সমুদ্রের ঢেউ আর আকাশের নক্ষত্র গুনে

এই একুশ শতকেও তিনি লিখবেন ভাগ্যরেখা;

বৃথাই আমাদের মঙ্গলে পাড়ি দেওয়া বিবেক প্রপঞ্চ!

 

তালপাতার বাঁশি, মেলা বসেছে নদীর ধারে

গামছা বাঁধা সুখ, কিছু কিছু দৃশ্যের বদল ঘটেনি আজও।

কবি বলেন, যার যার শৈশব তার তার নিজের কাছে

পিছনে ফেলে আসা জীবন আর দূরের ওই বাঁশির সুর

কবিতা দিয়েই দু’পাড়ের সাঁকো গড়েন তিনি।

মহাজীবন আর মহাকাব্য তো একই সরগমে বাঁধা

এ যুগে মহাকাব্য লিখতে বসে কোনও ভুল করেননি কবি

তবু কেন নির্জন দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হল তাঁকে!

বিবেক প্রপঞ্চ এখনও কি জাগেনি আমাদের?

 

বৈশাখ তো চুপিসারে আসে না —

আম্রমুকুল, শিমুল-পলাশ, চৈত্রের চড়কমেলা,

প্রকৃতি আর মনের মধ্যে প্রচণ্ড কালবৈশাখী ঝড়;

ভাগ্যগণনার পুরোহিত যদি সেসব দেখেও না দেখেন

নবজীবনের হালখাতায় তিনি কী লিখবেন ধারাপাত?

 

আমি তো বসে আছি একটি একুশ শতকের মহাকাব্য লিখব বলে!

 

 

 

বিষণ্ণ রাতের জ্যোৎস্না 

হাবিবুর রহমান 

 

বিষণ্ণ রাতের জ্যোৎস্না

আমার বুকের কাছে শুয়ে পড়ে

আমাকে ভালোবাসো শেখায়

যে ভালোবাসায় নক্ষত্রের আলো নেই

শ্রাবণের ঝমঝম বৃষ্টি নেই

কবিতার সব উপমা চোখের জল

শিমুল তুলোর বালিশ ভিজে যায়

আমিও পুড়তে পুড়তে আঁকড়ে ধরি

বিষণ্ণ রাতের জ্যোৎস্নাকে।

 

ছুটির পরে

তনুশ্রী পাল

 

এই বালি পাথরের পাহাড়

ধু-ধু ঘূর্ণি হাওয়ার শব্দ

কানে তালা লেগে যায়-

অসময়ে মনে পড়ে

বটের চারা গজানো মুখরা

দেওয়ালের গল্পগুলো-

ব্ল্যাকবোর্ড জুড়ে এঁকে ফেলেছি

অপ্রয়োজনের বৃত্ত

অর্থহীন এলোমেলো রেখা-

 

ছুটির পরে

নানাবিধ বিজ্ঞাপনে মগ্ন

আমার দৃষ্টিহীন চোখ

ক্রমে দিগন্তে মিলিয়ে গেছে

শষ্পাবৃত মাঠ, আকাশ-চেরা অগ্নিরেখা

অশ্বরথ

রথের রশি-

 

ভালো আছি

মধুমিতা দাস

আসলেই, এমন হাজার সম্পর্কে আজ মন কেমনের দিন,
স্বপ্নগুলো ভাঙছে কেবল, ভালো থাকাটাই বিলীন
‘ভালো আছি’— এক নিছক কথা, বলার বলতে হয়
কেউ জানে না এর পেছনে এক আলোকবছর অশ্রুর ধারা বয়।

তাই আজ শুধু প্রশ্ন নয়, একটু বোঝার চেষ্টা করা
কারও হয়তো হাসির মাঝেও, দুঃখের মুখোশ পরা।
হয়তো প্রয়োজন তার আলতো সময়, একবার হাতটি ধরার,
এভাবেই না হয় চেষ্টা চালাই আশার সিঁড়ি গড়ার।

মনকে আমি বোঝাই শুধু , যেমন আছিস থাক
কিছু ‘ভালো আছি’র উত্তরেতে, না হয় তাদের পাশে থাক।
মন দেওয়ালে পিঠ ঠেকলেও স্বপ্নগুলো বাঁচুক
মন খারাপের রোগটা যে আজ
বড্ড ছোঁয়াচে এক অসুখ।

Sabyasachi Bhattacharya
Sabyasachi Bhattacharyahttps://uttarbangasambad.com/
Sabbyasachi Bhattacharjee Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 23 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.

Share post:

Popular

More like this
Related

সরকারি চাকরি মানেই শান্তির জীবন নয়

মানসী কবিরাজ অ্যালবামের পাতা ওলটালেই দেখা যাবে  আমাদের প্রায় ...

কবিতা

১ অ-কৃতজ্ঞ সোমা দে সভ্যতার ভেতরে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্বরতা শরীর থেকে...

সোনার সংসার, যুদ্ধের সংসার

অরিন্দম ঘোষ বাংলায় ‘সোনার-সংসার’ বলে একটা শব্দবন্ধ আছে। এই...

গুজরাট যখন বাংলাকে মনে করায়

দেবদূত ঘোষঠাকুর  সম্প্রতি গুজরাটের পশ্চিম উপকূল ধরে ঘুরে একটা...