শুভদীপ শর্মা, মৌলানি: মৌলানির বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর সজন রায়ের বেড়ার ছোট্ট কুঁড়েঘর। কষ্ট করে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বছরকয়েক আগে। ছোট মেয়ে নন্দিতা জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রী। দিনমজুরি করে মেয়েকে কোনওক্রমে পড়াচ্ছেন। অভাবের সংসারে এভাবেই দিন কাটছে তাঁদের। তবে সম্প্রতি আবাস যোজনার (Awas Yojana) সার্ভে হওয়ার পর আশা করেছিলেন ঘরের টাকা পেয়ে একটা ঘর বানাবেন। তবে সেই গুড়ে বালি। আবাসের তালিকায় নামই নেই তাঁর। এতেই হতাশ সজন। তাঁর স্ত্রী শান্তি রায়ের কথায়, ‘গোটা শীতকালেই বাসের বেড়া দিয়ে ঘরে হুহু করে ঠান্ডা হাওয়া ঢোকে। গ্রামের অনেকের নাম বাংলা আবাস যোজনার ঘরপ্রাপকের তালিকায় থাকলেও আমাদের নাম নেই।’ এই জন্মে আর হয়তো ভালো ঘরে থাকা হবে না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন সজন। তবে শুধু সজন নয়, ক্রান্তি ব্লকের মৌলানি (Moulani) গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ২৮০০ উপভোক্তা ঘর না পেয়ে হতাশ। যদিও গোটা বিষয়টি ব্লক প্রশাসনকে গ্রামসভা করে রেজোলিউশন করে জানানো হয়েছে বলে গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে খবর। মৌলানি গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০১৮ সালে আনুমানিক ৩৮০০ গ্রামবাসীর নাম নথিভুক্ত করা হয় ঘরপ্রাপক হিসাবে। ২০২২ সালে নতুন করে সার্ভে হলে সেই নাম কমে দাঁড়ায় ২২০০-তে। চলতি বছর বাংলা আবাস যোজনায় নাম আসার পরে দেখা যায় কেটেছেঁটে ৯৩৬ জনের নাম ঘরপ্রাপকের তালিকায় রয়েছে। তাতেই হতাশ গ্রামবাসীরা।
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রঞ্জিত রায়ের কথায়, ‘প্রাপকদের নামের তালিকা পাওয়ার পর নতুন করে গ্রামসভায় রেজোলিউশন করে বাকি ঘরের দাবিদারদের নাম ফের ব্লক প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।’ তবে আদতেও বাকি দাবিদাররা ঘর পাবেন কি না তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি ক্রান্তির বিডিও রিমিল সোরেন। তিনি বলেন, ‘যে তালিকা এসেছে সেই হিসেবেই প্রাপকরা টাকা পাবেন।’
মৌলানি রেলগেট লাগোয়া ময়নাগুড়িগামী লাটাগুড়িগামী ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের গা ঘেঁষে দক্ষিণ চক মৌলানি গ্রাম। সেখানে কারও বাঁশের বেড়ার ছোট্ট কুঁড়েঘর। কেউ আবার টাকার অভাবে দীর্ঘদিন চালের টিন বদলাতে পারেননি। সেই ফুটো দিয়ে বর্ষায় ঘরে জল পড়ে। এরপরও আবাসের তালিকা থেকে তাঁদের নাম কেন বাদ পড়ল সেই প্রশ্ন উঠছে।
বাজারপাড়ার বিপ্লব শীল কর্মসূত্রে কেরলে থাকেন দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। গ্রামে টিনের ঘরে কোনওরকমে তাঁর স্ত্রী অনুরাধা শীল ও মেয়ে দিয়া দিন গুজরান করেন। অনুরাধা বলেন, ‘বর্ষায় টিনের ফুটো দিয়ে ঘরে জল ঢুকে বিছানা ভিজে যায়। কিন্তু টাকার টিন বদলাতে পারছি না। ভেবেছিলাম টাকা পেয়ে সাধের ঘর তুলব। সেটা আর হল না। মৌলানি একই অবস্থা গণ্ডগোলপাড়ায় দিনমজুর বিমল রায়ের। ঝড়ে কয়েকবার তাঁদের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে সেই ঘরেই বাস করছে। এভাবে আর কতদিন চলবে সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিমলের স্ত্রী বাসন্তী।