ফালাকাটা: প্রেমের টানে ফালাকাটার এক গ্রাম থেকে পালিয়ে সোজা হায়দরাবাদে চলে গিয়েছিল এক নাবালিকা। কিন্তু স্বপ্নেও কল্পনা করেনি তার জন্য কী উপহার নিয়ে অপেক্ষা করছে প্রেমিক। অবশেষে ফালাকাটা পুলিশের চেষ্টায় অন্য জায়গায় পাচারের আগে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হল। আরেক নাবালিকা প্রেমিকের সঙ্গে চলে গিয়েছিল কলকাতার একটি অন্ধগলিতে। প্রেমের টানে ঘরছাড়া এমন চারজন নাবালিকাকে উদ্ধার করল পুলিশ। প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন এক বিবাহিতাও। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁদের সকলকে উদ্ধার করে সোমবার হোমে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশের ভূমিকায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন পরিবারের অভিভাবকরা।
ফালাকাটা থানার আইসি অভিষেক ভট্টাচার্য বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া সহ নানা কারণে প্রেমে পড়েই নাবালিকাদের পালানোর ঘটনা ঘটছে। আবার বিবাহিত মহিলারাও পালাচ্ছেন। সোমবার আমরা এমন ৫ জনকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। তবে এইসব ঘটনা যাতে কমে তার জন্য স্কুল, কলেজ সহ গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেও আমরা সচেতনতা শিবির শুরু করব।’
ফালাকাটা থানার পুলিশ জানিয়েছে, গত এপ্রিল মাসের ৮, ১০ এবং ১৮ তারিখ চার নাবালিকা নিখোঁজ হয়েছে বলে থানায় অভিযোগ জমা পড়ে। আবার গত সপ্তাহে এক মহিলা তার দুই নাবালক সন্তানকে নিয়ে পরপুরুষের হাত ধরে চলে গিয়েছেন বলে অভিযোগ জমা পড়ে। গত এপ্রিল মাসেই থানায় নাবালিকা নিখোঁজ হওয়ার, মহিলা পালিয়ে যাওয়ার প্রায় ১২ থেকে ১৫টি অভিযোগ জমা পড়ে।
ফালাকাটা থানার পুলিশ এইসব মামলার তদন্তে নেমে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেয়। নাবালিকা সহ মহিলাদের ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ। আর এতেই মেলে সাফল্য। একজন নাবালিকাকে হায়দরাবাদ থেকে উদ্ধার করা হয়। একজনকে কলকাতা এবং বাকিদের কাউকে কোচবিহার, কাউকে জলপাইগুড়ি এবং ২ জনকে ফালাকাটার গোপন জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪ নাবালিকা এবং দুই সন্তান সহ এক মহিলাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধার হওয়া নাবালিকাদের স্পেশাল কোর্টে তুলে হোমে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ফালাকাটা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত প্রায় ১৫৫টি নিখোঁজের ডায়েরি হয়েছে থানায়। এর মধ্যে স্কুল-কলেজ ছাত্রী নিখোঁজ হয়েছে অন্তত ৬৩ জন। বাকি ৯২ জন বিবাহিত মহিলা। এই নাবালিকা এবং কলেজ ছাত্রীরা বেশিরভাগ প্রেমের কারণে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছে। আবার কয়েকজন পরে উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রেমে পড়ে পালিয়ে যাওয়া নাবালিকার সংখ্যাই বেশি। অনেককেই ফুসলিয়ে পাচারের উদ্দেশ্য ছিল। যে সব মহিলা নিখোঁজ হয়েছেন তার পিছনে আবার পরকীয়াই মূল কারণ। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, মহিলারা পালানোর সময় অনেকেই স্বামীর ঘরের গয়না, টাকাপয়সাও নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ সন্তান নিয়ে গেলেও বেশিরভাগ সন্তান রেখেই চলে যাচ্ছেন।
ফালাকাটার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতি শুভজিৎ সাহা বলেন, ‘নাবালিকাদের প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে অন্যত্র পাচার, বাল্যবিবাহ, নারী নিগ্রহ রুখতে আমরা লাগাতার প্রচার করছি। গ্রাম পঞ্চায়েত এবং স্কুলগুলিকেও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’ আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুপ্রিম বসু বলেন, ‘দাম্পত্য সম্পর্কে টানাপোড়েন থাকলে তবেই অন্য একটি সম্পর্কের খোঁজ করেন মহিলারা। আবার দীর্ঘদিন একই ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকতে থাকতেও একঘেয়েমি চলে আসে। সেক্ষেত্রে মহিলা-পুরুষ উভয়ই নতুন অনুভূতির খোঁজে পরকীয়ায় জড়ান। তবে পরকীয়ার এখন অন্যতম কারণ হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। এই সম্পর্কগুলি অবশ্য বেশিদিন টেকে না। এইসব ক্ষেত্রে উভয়ের কাউন্সেলিং করিয়ে স্বাভাবিক পথে আনা সম্ভব।’