Must-Read News

Heavy Rain in Sikkim | সিকিমে ধসে মৃত বেড়ে ৬, তিস্তাপাড়ে বিপদের আশঙ্কা

সানি সরকার, শিলিগুড়ি: সিকিম-বাংলা সীমানায় মেল্লির কাছে তিস্তা (Teesta River) আর রাস্তা মিলেমিশে একাকার। উথালপাতাল নদীতে ভেসে আসা কাঠ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সড়কে। কোনটা ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক আর কোনটা তিস্তার খাত তা বুঝে ওঠা কঠিন। তিস্তাগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে কালিম্পং-দার্জিলিংয়ের সংযোগকারী পেশক রোডের একাংশও। সিকিমে প্রবল বর্ষণের (Heavy Rain in Sikkim) জেরে যেভাবে ফুঁসতে শুরু করেছে পাহাড়ি নদীটি, তাতে ফের বিপদঘণ্টা দেখছেন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা।

দিনভর তিস্তার জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়েছে তিস্তাবাজারে বাড়ির পর বাড়িতে। তিস্তার জলে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন চমকডাঙ্গি, লালটংবস্তির বাসিন্দারাও। একের পর এক রাস্তা উড়ে যাওয়ায় সিকিমের লাচুং এবং চুংথাং মিলিয়ে আটকে পড়েছেন প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। ধসের জেরে একের পর এক বাড়ি ধসে যাওয়ায় মাটি চাপা পড়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। জখম হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। সন্ধ্যায় সিকিম ও কালিম্পংয়ে ফের ঝেঁপে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সমস্যা আরও বাড়তে শুরু করেছে।

তিস্তাপাড়ের বিপদ আঁচ করে ইতিমধ্যে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে (NH 10) যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কালিম্পং জেলা প্রশাসন। শুধু পাহাড়ি নয়, সমতলেও যেভাবে ‘খেল দেখাচ্ছে’ তিস্তা, তাতে ঘুম উড়ে গিয়েছে তিস্তাবাজার, চমকডাঙ্গি, লালটংবস্তি, টাকিমারির চর, টটগাঁওয়ের মতো নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের। চমকডাঙ্গির বিষ্ণু ওরাওঁ বলছেন, ‘কয়েকদিন আগেও তিস্তার জল গ্রামে ঢুকে গিয়েছিল। যেভাবে তিস্তা ফুঁসছে, তাতে মনে হয় না বাড়িঘর আস্ত থাকবে। কোথায় গিয়ে উঠব কিছুই বুঝতে পারছি না।’ এরইমধ্যে গজলডোবার তিস্তা ব্যারেজ থেকে ৩৫০০ কিউমেক জল ছাড়ায় বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে ময়নাগুড়ির চাঁপাডাঙ্গা, চ্যাংমারি, কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারাও। সেচ দপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলছেন, ‘৬৮টি রেইনগেজে নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনভিত্তিতে জল ছাড়া হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেচ দপ্তর সজাগ রয়েছে।’

ভবিষ্যতে দুর্ভোগ যে আরও বাড়বে, তার ইঙ্গিত দিয়েছে হাওয়া অফিসও। আপাতত বৃষ্টি থামার কোনও লক্ষণ যে নেই, বরং বর্ষণের তীব্রতা এবং ব্যাপ্তি বাড়বে, বলছেন আবহবিদরা। যে কারণে টানা দু’দিনের জন্য সিকিমের মংগনের পাশাপাশি কালিম্পংয়ে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলছেন, ‘গৌড়বঙ্গের বাইরে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি আরও কয়েকদিন চলবে। কয়েকটি জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’

আবহাওয়া দপ্তরের তরফে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস ছিলই। বুধবার একরাতে মংগনে বৃষ্টি হয়েছে ২২০.৮ মিলিলিটার। বর্ষার সময় এমন বৃষ্টি উত্তর সিকিমে অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু রাতভরের বৃষ্টি চরম দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে পাহাড় থেকে সমতলকে। প্রবল বর্ষণে একদিকে ধস, রাস্তা উড়ে যাওয়া, অন্যদিকে পলির জন্য নাব্যতা কমে যাওয়ায় ত্রাস হয়ে ওঠা তিস্তার ছোবলে গ্রামের পর গ্রামের বিপন্ন হয়ে পড়া, বৃহস্পতিবার ফিরিয়ে এনেছে গত বছরের ৪ অক্টোবরের স্মৃতি।

বুধবার রাতে ভারী বৃষ্টি শুরু হতেই মংগনের একাধিক জায়গায় ধূলিসাৎ হতে থাকে একের পর এক বাড়ি। এমন ধসের জেরেই পাকশেপে তিনজন এবং আমাবিথাংয়ে তিনজন মারা যান। কবি, আমাবিথাং, পাকশেপে অনেককে বিকেল পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে স্থানীয়দের বক্তব্য। মংগন জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো  হয়েছে, জখমদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিখোঁজদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। কিন্তু ধসে যাওয়া বাড়িগুলির ভবিষ্যৎ কী, তা স্পষ্ট নয়। কতদিন ত্রাণশিবিরে থাকতে হবে, তা বুঝতে পারছেন না নিরাশ্রয়ী মানুষগুলি। যেমন বোঝা যাচ্ছে না ভূমিধসে তলিয়ে যাওয়া সাংকালাংয়ের সেতুর কী হবে, কবে নতুন করে রাস্তা তৈরি হবে উত্তর সিকিমে।

ভবিষ্যৎ কোন পথে বুঝতে পারছেন না সেবক সংলগ্ন লালটং, চমকডাঙ্গির বাসিন্দারাও। সেবকের কাছের গ্রাম দুটিতে সকালেই একহাঁটু জল দাঁড়িয়ে যায়। স্থানীয়দের বক্তব্য, সকাল ১০টা নাগাদ গ্রামে তিস্তার জল ঢোকা শুরু হয়। নীচের বাড়িগুলিতে জল ঢুকে যাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দারা পড়শিদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তাঁদের অভিযোগ, গ্রামে তিস্তার জল ঢুকলেও প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

প্রকৃতিপ্রেমী অমিতাভ বসু বলছেন, ‘যেভাবে তিস্তা ভয়ংকর হয়ে উঠছে, তাতে এই দুটি গ্রামের অস্তিত্ব সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। ব্যাপক ক্ষতি হতে চলেছে মহানন্দা অভয়ারণ্যের। কিন্তু সেচ বা বন দপ্তরের কোনও উদ্যোগ নজরে পড়ছে না।’

গজলডোবার মিলনপল্লি-টাকিমারির চরেও ভয় বাড়ছে। সেখানকার বাসিন্দা বিশু দাস, দীপক দাসদের বক্তব্য, ‘বাড়িতে এখনও পর্যন্ত জল না ঢুকলেও চাষের জমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তিস্তা যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে ভয় বাড়ছে।’

সাউথ লোনাক লেক বিপর্যয়ের জেরে তিস্তাবাজারেও একাধিক বাড়ি ধসে গিয়েছিল, কিছু বাড়িতে পলি জমে গিয়েছে। এদিনও যথারীতি এই অঞ্চলে একের পর এক বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। পেশক রোডের ওপর দিয়ে জল বইতে থাকায় প্রশাসনের তরফে দার্জিলিং-কালিম্পং রুটে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কালিম্পংয়ের জেলা শাসক বালাসুব্রহ্মণিয়ান টি বলছেন, ‘পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জাতীয় সড়কটির কয়েকটি জায়গায় যান চলাচলে বিধিনিষেধ কার্যকর করা হয়েছে।’

তিস্তার এমন পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্ট। তাঁর অভিযোগ, ‘অক্টোবরের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর রাজ্যের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাজ্য পদক্ষেপ করলে কালিম্পং এবং দার্জিলিংয়ের মানুষকে এতটা সমস্যায় পড়তে হত না।’

Kuhelika Barman

Kuhelika Barman is working as Sub Editor Since 2016. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Digital. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.

Recent Posts

Dilip Ghosh | ‘রাজনীতিকে টা টা-বাই বাই!’ পরাজয়ের দুঃখ ভুলতেই এমন সিদ্ধান্তের পথে দিলীপ?

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্য সভাপতি, সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি, সাংসদ একের পর এক ‘পদ’…

2 mins ago

Noida Shopping Mall Fire | বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড নয়ডার শপিং মলে, আতঙ্কে হুড়োহুড়ি

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড নয়ডার শপিং মলে। শুক্রবার সকালে উত্তরপ্রদেশের নয়ডার একটি শপিং…

4 mins ago

Islampur | ইলুয়াবাড়িতে শিল্পহীন তালুক, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পালটা অভিযোগ সরকারি সংস্থার

ইসলামপুর: ইসলামপুর ইলুয়াবাড়ি শিল্পতালুক যেন রূপকথা গল্পের সেই 'কুমিরছানা।' একাধিক ব্যবসায়ী জমি বাবদ সবমিলিয়ে প্রায়…

21 mins ago

Darjeeling landslide | দার্জিলিংয়ে ধস, প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ, জারি সতর্কতা

শিলিগুড়ি: প্রবল বৃষ্টিতে দার্জিলিংয়ের লেবং কার্ট রোডে ধস (Darjeeling landslide) নেমে বিপত্তি। ক্ষতিগ্রস্ত হল দুটি…

24 mins ago

Naxalbari | বেহাল নকশালবাড়ি উপস্বাস্থকেন্দ্র, সাপের আতঙ্কে রোগীরা

নকশালবাড়ি: উপস্বাস্থকেন্দ্রের বেহাল দশায় ক্ষোভ বাড়ছে বাসিন্দাদের। সাপের ভয়ে রোগীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রমুখী হচ্ছেন না। এলাকার একমাত্র…

46 mins ago

TMC Leader Arrest | জমিকাণ্ডে গ্রেপ্তার শিলিগুড়ির আরও এক তৃণমূল নেতা

শিলিগুড়ি: সম্প্রতি সরকারি জমি জবরদখল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) কড়া বার্তার জের।…

55 mins ago

This website uses cookies.