পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: গত জুনে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে জলদাপাড়ায় হলং বনবাংলো পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপরই গরুমারার বনবাংলোগুলির নিরাপত্তা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট বন্যপ্রাণ বিভাগ। প্রায় ১৫ দিন ধরে বনবাংলোগুলির (Bungalow) সংস্কারের কাজ চলছে। সেইসঙ্গে চলছে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার কাজ।
কিন্তু এখনও কাজ শেষ করতে না পারায় পুজোর মধ্যে চালু হচ্ছে না গরুমারার (Gorumara) সাতটি বাংলো। কাজ শেষ হয়ে কবে সেগুলো চালু হবে, নিশ্চিত করে বলতে পারেনি বন্যপ্রাণ বিভাগ। প্রশ্ন উঠছে, তিন মাস জঙ্গল বন্ধ থাকার সময় কেন বাংলোগুলির মেরামতির কাজ শেষ করা হল না। পুজোর মুখেই বা কেন সংস্কারকাজ শুরু হল।
ডুয়ার্সের পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে মৌচুকি বনবাংলো, মূর্তি বাংলো। ১০-১৫ দিন ধরে বাংলোগুলির সংস্কারকাজ চলছে। রামশাইয়ের রাইনো কটেজ এবং কালীপুর কটেজ, ধূপঝোরার গাছবাড়ি এবং লাটাগুড়ির হর্নবিল নেস্টেও কাজ চলছে। অন্যদিকে, চালসার পানঝোরা ওয়াইল্ডনেস নেচার ক্যাম্পের অবস্থাও শোচনীয়। তিন মাস জঙ্গল বন্ধ থাকার পরে পুজোর সময়ও বনবাংলোয় থাকার অভিজ্ঞতা পাবেন না পর্যটনপ্রেমীরা। কোচবিহারের বাসিন্দা মৌসম রক্ষিতের কথায়, ‘পুজোর সময় কলকাতা থেকে আত্মীয়রা ডুয়ার্সে আসবেন বেড়াতে। কিন্তু কালীপুর বা মৌচুকির মতো সুন্দর লোকেশনে থাকার কোনও বাংলোই বুকিং করা যায়নি। অগত্যা বেসরকারি রিসর্ট বুক করতে হয়েছে।’
বেশ কয়েকবছর ধরে বিশেষ করে করোনার আগে থেকে মৌচুকি এবং পানঝোরা বন্ধ রয়েছে। তারপর থেকে সেগুলো আর খোলা হয়নি। গতবছর জঙ্গল বন্ধ থাকার পর খুললে দেখা যায় বাকি পাঁচটি বনবাংলো এবং ইকো পর্যটনকেন্দ্রে মেরামতির প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু তারপর সেরকম কোনও পদক্ষেপ না করায় এবছর সেগুলো ব্যবহারের আরও অযোগ্য হয়ে ওঠে। গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন জানান, বনবাংলোগুলির সংস্কারকাজ চলছে। চেষ্টা করা হচ্ছে, পুজো থেকে যেন বনবাংলোগুলি খুলে দেওয়া হয়। এদিকে কাজ চললেও বাংলোগুলিতে সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। তাই ইনভার্টার বা সৌরবিদ্যুতের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলোগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ঢেলে সাজানো হচ্ছে বলে জানান ডিএফও।
এবার সিকিমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঘনঘন বৃষ্টির জন্য মাঝেমধ্যে দার্জিলিং, কালিম্পংয়ের মতো সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে, বনবাংলোগুলো বন্ধ থাকার জন্য এবার ডুয়ার্সে পর্যটকদের ভিড়ের সেরকম সম্ভাবনা নেই। ডুয়ার্সে সরকারি ফরেস্ট বাংলোগুলি চালু থাকলে পর্যটকের ভিড় উপচে পড়ত বলেই মনে করছেন অনেকে।
ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সভাপতি দিব্যেন্দু দেব বলেন, ‘বেসরকারি কটেজের মজা একরকম। বিভিন্ন লোকেশনে বনবাংলোগুলির প্রতি আকর্ষণ আলাদা।’
তবে রামশাইয়ের বনবাংলোগুলো শুধু সংস্কার করা হলেই পর্যটকরা আসবেন না। কারণ এখনও রামশাইয়ের হাতি সাফারি এবং জলাশয়ে বোটিং পরিষেবা চালু হয়নি। অন্যগুলিতে অবশ্য পর্যটকরা কাছাকাছি হাতি সাফারির পরিষেবা নিতে পারবেন। রামশাইয়ের বাসিন্দা অলোক রায় বললেন, ‘রামশাইয়ের জলাশয় সংস্কার করে সেখানেও বোটিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারত। তাছাড়া হাতি সাফারিও বন্ধ। ফলে পর্যটকরা এখনই রামশাইমুখী হচ্ছেন না।’

