মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ ও নীহাররঞ্জন ঘোষ, আলিপুরদুয়ার: হরিণ, বাইসন, গন্ডার, হাতিদের খাবারের জন্য জলদাপাড়া(Jaldapara) বনাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় নতুন করে তৃণভূমি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বন দপ্তর(Forest Department)। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী বর্ষায় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ৭০০ একর জমিতে বন দপ্তর ওই তৃণভূমি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। বনাঞ্চলে থাকা তৃণভোজী প্রাণীদের খাবারের জোগান বাড়াতে বন দপ্তরের ওই উদ্যোগ। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুন, জুলাইয়ে বনাঞ্চলের পতিত জমি, নদীর চরে তৃণভূমি গড়ে তোলার কাজ শুরু হবে। জলদাপাড়ায় তৃণভোজী হরিণ, বাইসন, হাতি সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী রয়েছে। এছাড়া একশৃঙ্গ গন্ডারের জন্য বিখ্যাত জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। এদের প্রিয় ঘাস মালসা, ঢাঢডা, পুরুন্ডি, চেপ্টি, নল। জাতীয় উদ্যানে ওই তৃণভোজী প্রাণীদের খাবার ক্রমশ কমে গিয়েছে। সেই কারণে বনাঞ্চলে থাকা ওই সকল ঘাসের এলাকাই ক্রমশ বাড়াতে চাইছে বন দপ্তর। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বনাধিকারিক পারভিন কাশোয়ান বলেন, ‘রুটিন কাজ হিসেবে সামনের বর্ষায় স্থানীয় জাতের বিভিন্ন ঘাস, লতা, গুল্ম বনাঞ্চলের ফাঁকা জায়গায় লাগানোর একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ২১৬.৫১ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে। ওই জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে বইছে তোর্ষা ও হলং নদী। ১৯৪১ সালে জলদাপাড়া অভয়ারণ্য ঘোষণা হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালের ১০ মে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ঘোষিত হয়। জলাদাপাড়ার বনাঞ্চলে কয়েক হাজার হরিণ রয়েছে। গন্ডার, বাইসন, হাতি, চিতাবাঘ, ময়ূর, সাপ ও অসংখ্য পশুপাখিতে সমৃদ্ধ ওই বনাঞ্চল। জলাদাপাড়ার মোট আয়তনের প্রায় ৪০ শতাংশ জায়গাজুড়ে তৃণভূমি রয়েছে। বন্যপ্রাণীর সংখ্য যেভাবে বাড়ছে, তাতে বনাঞ্চলে তৃণভূমির পরিমাণ না বাড়লে মানুষ ও বন্যপ্রাণ সংঘাতের আশঙ্কা বাড়তে পারে বলে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলিও মনে করছে। আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের সম্পাদক ত্রিদিবেশ তালুকদার বলেন, ‘জলদাপাড়া গন্ডার, হাতি, বাইসন, হরিণের মতো বহু তৃণভোজী প্রাণীদের আবাসস্থল। তৃণভোজীদের জন্য বন দপ্তর থেকে সেখানে কিছু এলাকায় মাঝেমধ্যে ঘাস লাগানো হয়। কিন্তু তৃণভোজীদের জন্য বড়সড়ো এলাকাজুড়ে ঘাস লাগানো হলে তার সুফল অনেক বেশি পাওয়া যাবে। এরফলে বন্যপ্রাণীরাও জঙ্গলের বাইরে লোকালয়ে সহজে বেরোবে না।’
বন দপ্তর সূত্রে খবর, ২০২২ সালের ২৫ ও ২৬ মার্চ জলদাপাড়ায় গন্ডার গণনা হয়েছিল। ওই সময় ২৯২টি গন্ডার চিহ্নিত করা হয়। ২০১৯ সালে জলদাপাড়ায় গন্ডারের সংখ্যা ছিল ২৩৭টি। গন্ডারের পাশাপাশি হরিণ, বাইসন, হাতি সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও দিন-দিন বাড়ছে বলে ধারণা পরিবেশকর্মীদেরও। বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে তাদের খাদ্যের জোগান বাড়াতে জোর দিচ্ছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষও।