সানি সরকার, শিলিগুড়ি: অসম চাহিদা মেটাতে জোগানে টান, লাফিয়ে বাড়ছে মুরগির দাম। মূলত ব্রয়লার(Broiler) মুরগির মাংসের দাম দিন প্রতিদিন এতটাই ঊর্ধ্বমুখী যে বাঙালির ‘হেঁশেলের হাসি’ উধাও। কিন্তু হঠাৎ কেন মহার্ঘ হয়ে উঠল মুরগি? টানা গরমে মুরগির মড়ক এবং ‘ভোট-পিকনিক’ তত্ত্ব সামনে নিয়ে আসছেন সিংহভাগ মাংস বিক্রেতা। তবে অসমে রপ্তানি উত্তরবঙ্গের(North Bengal) জোগানে ঘাটতি ডেকে আনছে বলেও বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অন্তত আরও এক-দুই সপ্তাহ লাগবে বলে বিভিন্ন ফার্ম সূত্রে খবর। অর্থাৎ কিছুটা কম খরচে ছুটির দিনে মাংস-ভাত খাওয়ার ইচ্ছে কিছুদিনের জন্য মুলতবি রাখতে হবে।
পাঁঠা বা খাসির মাংসের দর এতটাই বেশি যে সাধারণ বাঙালিদের কাছে বাড়িতে তা রান্না করে খাওয়া ‘বিলাসিতা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় মূল্যবৃদ্ধির জমানায় তাই মাংস-ভাতের ক্ষেত্রে বাঙালির এখন প্রথম পছন্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্রয়লার মুরগি। কিন্তু তারও যা এখন বাজারদর, তাতে হাতে ছ্যাঁকা লাগার জোগাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছ্যাঁকা লাগবেই না কেন? ক’দিন আগে যেখানে ব্রয়লার মুরগির গোটা কেজি প্রতি দাম ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে। এখন তা কেজি প্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। বুধবার ছুটির দিনে অনেক বাজারেই বিক্রি হয়েছে ১৮৫-১৯০ টাকা কেজি প্রতি। কাটা মাংস বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। এক্ষেত্রেও কেজি প্রতি দর বেড়েছে ৬০-৭০ টাকা। তবে দেশি মুরগির দাম কেজি প্রতি আটকে রয়েছে ৪৬০-৪৭০ টাকায়। প্রতি কেজি আলুর দামও ২০’র পরিবর্তে ৩০-এ গিয়ে ঠেকেছে। ফলে মাংস খাওয়া এখন সিংহভাগ মানুষের কাছেই কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজার মন্দা হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে মাংস বিক্রেতাদের।
কিন্তু হঠাৎ এমন পরিস্থিতি কেন? বিভিন্ন বাজার ঘুরে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে প্রথম কারণ হিসেবে উঠে আসছে টানা তাপপ্রবাহের জেরে ব্রয়লার মুরগির মড়ক। ময়নাগুড়ির রামশাইতে তিনটি ফার্ম রয়েছে যতীন পালের। তিনি বলছেন, ‘টানা গরমে কত মুরগি মারা গিয়েছে, ভাবতে পারবেন না। এমন আর্থিক ক্ষতির মুখে অতীতে পড়তে হয়নি।’
এদিন ফুলেশ্বরীতে পাওয়া গিয়েছিল আমবাড়িতে ফার্ম থাকা সুবীর সরকারকে। তাঁর বক্তব্য, ‘মড়কের পর দু’দিন হল ডিম থেকে ছানা বের হয়েছে। বড় হতে অন্তত এক মাস তো লাগবেই। আশা করছি কিছুদিন পর দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’
দ্বিতীয় কারণ, ভোট পিকনিক। অনেক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, ভোটের জন্য প্রতিটি এলাকাতেই প্রচুর পিকনিক হয়েছে। চাহিদা অনুপাতে জোগান দিতে ছোট সাইজের মুরগিও বাজারজাত করা হয়েছিল। ঘাটতির ক্ষেত্রে এটাও একটা কারণ বলে জানালেন দেশবন্ধুপাড়ার মাংস বিক্রেতা শম্ভু ঘোষ। পাশাপাশি রয়েছে বেশি মুনাফার জন্য অসমে রপ্তানি।
মূল্যবৃদ্ধির জন্য তাঁদেরও ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে জানিয়ে চম্পাসারির প্রদীপ নন্দী বলছেন, ‘দাম না কমলে রক্ষা নেই। দাম বৃদ্ধির জন্য এখন তেমন কেউই দোকানে আসতে চাইছেন না।’ শান্তিনগরের গৌতম মণ্ডল, বিশু দাসদের কথায়, ধাপে ধাপে এভাবে দাম বাড়বে তা ভাবতে পারেননি।
ফুলেশ্বরীর মাংস বিক্রেতা সুজন সাহা বলছেন, ‘কয়েকদিন ধরে মাংসের দাম শুনে পালাচ্ছেন ক্রেতারা। পাশাপাশি যাঁরা এক কেজি নিতেন, তাঁরা ৫০০ গ্রাম নিচ্ছেন। এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে বুঝতে পারছি না।’