রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: আরও তিনটি মেডিকেল কলেজ পেতে চলেছে উত্তরবঙ্গ(North Bengal)। আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং ও বালুরঘাটে মেডিকেল কলেজ(Medical College) তৈরির অনুমোদন শীঘ্রই এসে যাবে বলে জানালেন রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ডাঃ সুদীপ্ত রায়। মেডিকেল কলেজ তৈরির জন্য জমি চেয়ে জেলা শাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান মেডিকেল কলেজগুলিই যেখানে চিকিৎসকের অভাবে ধুঁকছে, সেই উত্তরবঙ্গে আবার নতুন মেডিকেল কলেজ তৈরি করে লাভ কী হবে? এত চিকিৎসক পাওয়া যাবে কোথায়? এসব প্রশ্ন এড়িয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা বলছেন, ‘ধাপে ধাপে সমস্ত ব্যবস্থা হবে। চিকিৎসক, নার্স সমস্ত বিভাগেই নিয়োগ হবে।’
খাতায়-কলমে উত্তরবঙ্গের মেডিকেলে পোস্টিং থাকা চিকিৎসকরাও মাসের পর মাস কলকাতায় বসে মাইনে পেয়ে যাচ্ছেন। এমন অভিযোগ রয়েছে ভূরিভূরি। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার বক্তব্য, ‘এখন অনলাইন বায়োমেট্রিক উপস্থিতি চালু হয়েছে। এর জেরে স্বাস্থ্য ভবন এমনকি দিল্লিতে ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশনও (এনএমসি) সরাসরি চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে নজরদারি করছে। ফলে ফাঁকিবাজি সম্ভব নয়।’ যদিও বাস্তব অন্য কথা বলছে। মেডিকেলের চিকিৎসা ব্যবস্থা সিংহভাগই জুনিয়ার ডাক্তার নির্ভর হয়ে রয়েছে।
উত্তরবঙ্গে আগে দুটি মেডিকেল কলেজ ছিল। একটি উত্তরবঙ্গ মেডিকেল, অন্যটি মালদা মেডিকেল। রাজ্যে ২০১১ সালে সরকার বদলের পর একে একে কোচবিহার, রায়গঞ্জ এবং জলপাইগুড়িতে মেডিকেল কলেজ হয়েছে। রাজ্য সরকারের নতুন নীতি অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ তৈরি করা হবে। সেই নীতি মেনেই উত্তরবঙ্গের বাকি তিন জেলা কালিম্পং, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং আলিপুরদুয়ারে মেডিকেল কলেজ হচ্ছে। জেলা শাসকদের কাছে জমি চাওয়ার পাশাপাশি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকে ফাইল পাঠানো হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে পুেরানো উত্তরবঙ্গ মেডিকেল দীর্ঘদিন চিকিৎসকের অভাবে ভুগছে। এখানে প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মিলিয়ে প্রায় ২৫০ জন সিনিয়ার ডাক্তার রয়েছেন। যার ৭৫ শতাংশই কলকাতার বাসিন্দা। এই চিকিৎসকরা কেউ মাসের শেষে এসে সই করে চলে যান, কেউ সপ্তাহে একদিন আসেন, কেউ কেউ আবার রোটেশনের ভিত্তিতে ডিউটি করেন। ফলে এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থার সিংহভাগই ডাক্তারি পডুয়া, ইন্টার্ন, হাউস স্টাফ নির্ভর। বায়োমেট্রিক অ্যাটেনড্যান্স ব্যবস্থা চালু করেও লাভ হয়নি। এখানে নিউরোলজি ও নেফ্রোলজি বিভাগের অবস্থা সবথেকে খারাপ।
কলকাতা থেকে দূরত্ব কম হওয়ায় মালদা মেডিকেলের অবস্থা সামান্য ভালো হলেও রায়গঞ্জ, কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে সমস্যা বেশি। কেননা নতুন মেডিকেল হওয়ায় সেখানে সিনিয়ার রেসিডেন্স, ইন্টার্ন, হাউস স্টাফ তুলনায় অনেক কম। জেলা হাসাপাতালগুলিকেই মেডিকেলের নামে চালানো হচ্ছে, ফলে পরিকাঠামোও সেভাবে গড়ে তোলা যায়নি। অন্যদিকে, এই মেডিকেলগুলিতেও কলকাতা থেকে চিকিৎসকরা সিংহভাগ আসেন না। ফলে শুধু চিকিৎসা নয়, এমবিবিএস, এমডি পডুয়াদের নিয়মিত পাঠদানও হচ্ছে না।
স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকেই বলছেন, বেশি কড়াকড়ি করলে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন চিকিৎসকরা। কলকাতায় বাড়ি হলেও এখানে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়া চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, ‘আরও তিনটি মেডিকেল চালু হলে সেগুলির চিকিৎসা ব্যবস্থা, পঠনপাঠন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়।’
ডাঃ সুদীপ্ত রায় অবশ্য সাফাই দিচ্ছেন, ‘উত্তরবঙ্গে আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে। এখানে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসও তৈরি করা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। আগামী কয়েক বছরে আমরা রাজ্যের মেডিকেল কলেজগুলি থেকেই প্রচুর চিকিৎসক পাব।’