মহম্মদ হাসিম, নকশালবাড়ি : চারু মজুমদারের মৃত্যুর মাসে আবার জমি আন্দোলন নকশালবাড়িতে। দুটি পৃথক জায়গায় প্রায় ৯৯ বিঘা জমি দখল হল রবিবার। খবর পেয়ে পুলিশ উপস্থিত হলেও নির্বিঘ্নে লালঝান্ডা পুঁতে ও ট্র্যাক্টর দিয়ে চাষ করে জমি দখল করা হয়। তবে নকশালবাড়ি আন্দোলনের ৫৬ বছর পর রবিবার এই আন্দোলনের নেতৃত্বে কোনও নকশালপন্থী গোষ্ঠী নয়, ছিল সিপিএম প্রভাবিত বর্গা উচ্ছেদ বিরোধী কমিটি।
ভারত-নেপাল সীমান্তে মেচি নদীর ওপারে মণিরামজোতে ওই জমি জোতদারদের হাত থেকে চলে গিয়েছিল বর্গাদারদের হাতে। সিপিএমের অভিযোগ, বর্গাদারদের অন্ধকারে রেখে গোপনে ওই জমি কলকাতার কিছু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল পুরোনো জোতদারদের উত্তরাধিকারীরা। রবিবারের আন্দোলনে ফিরে এসেছিল সেই ছয়ের দশকের কৃষক আন্দোলনের স্লোগান, ‘লাঙল যার, জমি তার।’
পুলিশ জমি দখলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও বাধা দেয়নি। পরে নকশালবাড়ি থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, কেউ কোনও অভিযোগ জানায়নি পুলিশের কাছে। তবে জমি দখলের ঘটনাটি দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জানানো হয়েছে। শিলিগুড়ি মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক প্রবাল দাশগুপ্ত বলেন, ‘নকশালবাড়িতে কোনও জমি দখল হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সোমবার অফিস খুললে বিএলএলআরও-কে দিয়ে তদন্ত করিয়ে রিপোর্ট নেওয়া হবে। তারপর ব্যবস্থা নিতে পারব।’
গত এপ্রিলে আরেকবার জমি দখলের আন্দোলন হয়েছিল নকশালবাড়িতে। প্রয়াত নকশাল নেতা কানু সান্যালের গোষ্ঠী ওই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল। তখন জমি দখল হয় হাতিঘিসা এলাকায়। সেই ঘটনার ঠিক তিন মাস পর ফের লালঝান্ডা হাতে নিয়ে জমি দখলের ঘটনা প্রত্যক্ষ করল নকশালবাড়ি। সিপিএমের স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন বাম সংগঠনকে নিয়ে গঠিত বর্গা উচ্ছেদ বিরোধী কমিটি রবিবার বড় মণিরামজোতের কার্গিল মোড়ে সভা করে মিছিল নিয়ে গ্রাম ঘুরে মেচি নদী পেরিয়ে জমি দখল অভিযানে নামে।
নকশাল আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চারু মজুমদারের ছেলে তথা নকশালপন্থী দল সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার বলেন, ‘বর্গাদার উচ্ছেদের বিরুদ্ধে যদি কোনও প্রতিরোধ হয়ে থাকে, তাহলে আমরা সমর্থন জানাই। মেচি নদীর চরে বেশিরভাগ জমি খাস অর্থাৎ সরকারি জমি। বাইরের কিছু লোক মোটা টাকায় এই জমি বিক্রি করে দিচ্ছে। তবে এই বর্গাদাররা নথিভুক্ত কি নথিবহির্ভূত, সেটা দেখতে হবে।’
সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম ঘোষ বলেন, ‘বর্গাদারদের অন্ধকারে রেখে চাষের জমি কলকাতার পুঁজিপতিদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। সেই জমিতে চাষের অধিকার হারিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন ভাগচাষিরা। আজ সেই জমির দখল নিয়ে চাষের অধিকার তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হল।’ সারা ভারত কৃষকসভার দার্জিলিং জেলা সভাপতি ঝরেন রায়ের দাবি, ‘এর আগে আমরা নকশালবাড়ির বিএলএলআরও-কে একাধিকবার ডেপুটেশন দিয়েছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয়নি। তাই আমরা নিজেরাই জমি দখল করে স্থানীয় ভূমিহীনদের হাতে তুলে দিলাম।’
প্রশাসন কোনও কিছু করলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে বলে তিনি হুমকি দেন। বড় মণিরামজোত মৌজায় জমি দখলে শামিল হন পুরুষদের সঙ্গে একদল মহিলাও। বাঁশ হাতে মেচি নদী পার হয়ে স্লোগান দিতে দিতে জমিতে খুঁটি পুঁতে দেন তাঁরা। নকশালবাড়ি ব্লকে মণিরাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই অধিকাংশ মানুষ মেচি নদীর তীরে কৃষিকাজ করে সংসার চালান। ৯৯ বিঘা জমি পুনরুদ্ধারে যে বর্গা উচ্ছেদ বিরোধী কৃষক কমিটি তৈরি হয়েছিল, তাতে আছে সারা ভারত কৃষকসভা, সারা ভারত কৃষক মজদুর সভা সহ ৭টি সংগঠন।
জমি জখলের আন্দোলনকারীদের অন্যতম বনমালী বর্মন বলেন, ‘ওই ৯৯ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করতেন প্রায় ৫৭ জন বর্গাদার। এঁদের অন্ধকারে রেখে জোতদারদের উত্তরাধিকারীরা এই জমি বিক্রি করে দেন। বহু অনুনয়-বিনয় করেও জমির অধিকার ফিরে পায়নি বর্গাদাররা। দখল নেওয়ার পর সেই জমিতে প্রবল উত্সাহ-উদ্দীপনার মধ্যে ভাগচাষিরা আজকেই ডাল চাষ শুরু করলেন।’
জমি দখলের এই আন্দোলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের নকশালবাড়ি এরিয়া কমিটির সম্পাদক বিকাশ চক্রবর্তী, নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহ সভাপতি মহম্মদ ইসলাম, রাজু সরকার প্রমুখ।
আসানসোল: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা’কে (Amit Shah) বিদায় জানাতে পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্ডালে কাজি নজরুল…
বালুরঘাট: বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে (Balurghat hospital) আকাল এক্স-রে প্লেটের (Insufficiency of X-ray plates)। প্লেটের অভাবে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: জনগণের বিক্ষোভে উত্তাল পাক অধিকৃত কাশ্মীর (POK)। কয়েকদিন আগেই নতুন কর…
শিলিগুড়ি: অন্যত্র খাদ্য সামগ্রী সরিয়েও কাজের কাজ কিছু হল না, ফের হাতির হামলার মুখে পড়তে…
বেলাকোবা: নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেল পাথর বোঝাই ডাম্পার (Dumper loaded with stones)। অল্পের জন্য প্রাণে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: রাষ্ট্রপতির পর এবার রাজ্যপাল। বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কে রাজ্যের কারাগার মন্ত্রী…
This website uses cookies.