নৃসিংহপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়, বারবিশা : নজিরবিহীন কাণ্ড। সংকোশ নদীর ঘোলা জলে ভেসে এল হাতির কাটা মুণ্ডু। শুক্রবার বিকেলে ভল্কা বারবিশা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব শালবাড়ি কাঁঠালতলা এলাকায় নদীর চরে আটকে যায় শুঁড় সহ মুণ্ডুটি। বাড়ি ফেরার সময় কয়েকজন স্কুল পড়ুয়া সেটি দেখতে পেয়ে ঘাবড়ে যায়। ঘটনার কথা বড়দের কানে দিতেই তাঁরা গিয়ে বিষয়টি দেখেন। হাতির কাটা মাথা দেখে শিউরে ওঠেন অনেকে। দ্রুত ফোন করে তাঁরা বনকর্মীদের জানান। বাসিন্দাদের মুখে এমন কথা শুনে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ভল্কা এবং কুমারগ্রাম রেঞ্জের অফিসার থেকে শুরু করে বনকর্মীরা। সংকোশ নদীর চরে হাঁটুজলে ভেসে থাকা হাতির কাটা মুণ্ডু উদ্ধারের তোড়জোড় শুরু করে বন প্রশাসন। এদিকে, ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই বাচ্চা, বুড়ো সহ আশপাশের এলাকার মহিলা, পুরুষ নির্বিশেষে প্রচুর উৎসাহী মানুষ পূর্ব শালবাড়ি কাঁঠালতলায় ভিড় জমান।
বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকার্তা অপূর্ব সেন বলছেন, ‘সংকোশ নদী থেকে একটি বয়স্ক মর্দা হাতির কাটা মাথা উদ্ধার করা হয়েছে। পাশেই অসম। তাই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, সেটি অসম থেকে ভেসে আসার সম্ভাবনা আছে। আমরা ভল্কা এবং কুমারগ্রাম রেঞ্জ সহ আশপাশের জঙ্গলে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু নিদর্শন পাইনি। বাকি বিষয় ময়নাতদন্তের পরই জানা যাবে।’
কাটা মুণ্ডুর খবর পেয়েই ১০-১২ জন বনকর্মী মোটা দড়ি এবং পলিথিন নিয়ে নদীর চরে পৌঁছান। হাতির কাটা মাথা টেনেহিঁচড়ে এবং ঠেলে নদীর কিনারে আনার পর কালো পলিথিন দিয়ে মুড়ে দেন। তারপর সেটিকে মোটা দড়ি দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে টেনে টেনে সংকোশ নদীর উঁচু পাড়বাঁধের ওপর তোলা হয়। এরপর সেটিকে গাড়িতে চাপিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে আসা হয় বারবিশা বিট অফিসে। ততক্ষণে আলিপুরদুয়ার থেকে সেখানে এসে হাজির হন পশু চিকিৎসক দল সহ বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্পের (পূর্ব) উপক্ষেত্র অধিকর্তা দেবাশিস শর্মা। শিলবাংলোর পেছনে জঙ্গল ঘেরা ফাঁকা জায়গায় শুরু হয় নদীর জলে ভেসে আসা হাতির কাটা মুণ্ডুর ময়নাতদন্ত। দেবাশিস জানিয়েছেন, হাতিটির দাঁত দুটো নেই। শুধু মাথাটা পাওয়া গিয়েছে। দেহ এখনও পাওয়া যায়নি।
প্রবীণ এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে বহুমূল্যবান ধবধবে সাদা লম্বা দাঁতের জন্য হাতিটিকে গুলি করে মেরে ফেলেছে চোরাশিকারিরা। দাঁত সংগ্রহের পর তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় হাতির দেহটি টুকরো টুকরো করে কেটে সংকোশ নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছে। কোনওভাবে মাথাটি নদীর চরে হাঁটুজলে আটকে যায়। যে কারণে গোটা বিষয়টি সামনে এল। আমরা চাই, গোটা বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করুক বন প্রশাসন। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে কঠিন সাজা দিক।’
একই কথা বলেন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে হাতির কাটা মুণ্ডু উদ্ধারকাজ দেখতে ব্যস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে। আরেক যুবক বলছেন, ‘হাতির কাটা মাথার কাছে যেতেই তীব্র দুর্গন্ধ নাকে লাগে। খুব কাছে থেকে দেখেছি, দুটি দাঁত নেই। একদম চোয়ালের গোড়া থেকে কাটা ছিল। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে হাতিটিকে কয়েকদিন আগে মারা হয়েছিল। দাঁত দুটি কেটে নিয়ে সংকোশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা আমাদের এলাকায় এই প্রথম ঘটল।’