Tuesday, May 21, 2024
HomeBreaking Newsএক বছর আগের পুনরাবৃত্তি, বাবার পর মায়ের পচাগলা দেহ আগলে মেয়ে

এক বছর আগের পুনরাবৃত্তি, বাবার পর মায়ের পচাগলা দেহ আগলে মেয়ে

পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: দোতলা ওই বাড়িটা বাইরে থেকে বোঝার উপায় ছিল না, সেখানেই মস্ত বড় অঘটন ঘটে গিয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। সন্দেহটা দানা বাঁধে কয়েকদিন ধরে মা-মেয়েকে বাড়ির বাইরে দেখতে না পেয়ে। তারপর হঠাৎ যখন পড়শি আত্মীয়দের নাকে পচা গন্ধ এল, তখন আর বুঝতে বাকি ছিল না অঘটনটা ঠিক কী। যখন পুলিশ এসে দরজা খোলাল, তখন মায়ের পচাগলা দেহ আগলে নির্বিকার মেয়ে।

জলপাইগুড়ির কলেজপাড়ার কর্মকারবাড়ির এই ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। ঠিক এক বছর আগে ১৯ অগাস্ট ওই বাড়িতেই বাবা অজিত কর্মকার (৭৫)-এর মৃতদেহ আগলে দিনের পর দিন ঘর বন্ধ করে ছিলেন মেয়ে অনিন্দিতা কর্মকার। এবার সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। শুধু বাবার জায়গায় মা। বাথরুমে পড়ে থাকা বছর সত্তরের অঞ্জলি কর্মকারের দেহ নিয়েই দিব্যি দিন কাটাচ্ছিলেন মেয়ে অনিন্দিতা। হাড়হিম করা এই ঘটনায় স্তম্ভিত জলপাইগুড়ির বাসিন্দারা।

২০১৫ সালে কলকাতার রবিনসন কাণ্ড হইচই ফেলে দিয়েছিল গোটা রাজ্যে। দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস দিদি দেবযানীর কঙ্কালের সঙ্গে ঘর করেছিলেন পার্থ দে। তারপর একইরকম কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায়। কিন্তু জলপাইগুড়ির এই ঘটনা ব্যতিক্রমই বটে। বাবা ও মায়ের দেহ নিয়ে এক বছরের মধ্যে একই ঘটনা ঘটায় নানারকম প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনিন্দিতার মানসিক অবস্থা নিয়ে তো আগেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন পড়শিরা।

পুলিশ অবশ্য এখনই এনিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। সোমবার মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পরই যা বলার বলবেন কোতোয়ালি থানার আধিকারিকরা। আইসি অর্ঘ্য সরকার শুধু বলেছেন, ‘বাড়ি থেকে অঞ্জলি কর্মকারের মৃতদেহ উদ্ধারের পর অনিন্দিতাকে তার আত্মীয়দের হেপাজতেই রেখে আসা হয়েছে। আত্মীয়দের মাধ্যমেই তার চিকিৎসা করানো দরকার।’

অনিন্দিতাদের বাড়ির পাশেই থাকেন আত্মীয় অমিত কর্মকার। রবিবার সকালে তিনিই প্রথম পচা গন্ধ পান। সন্দেহ হতেই জানান বাকি প্রতিবেশীদের। অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা খুলতে চাইছিলেন না অনিন্দিতা। পরে পুলিশ এসে দরজা খুলতে কার্যত বাধ্য করে। ঘরে ঢুকে দেখা যায়, বাথরুমে পড়ে রয়েছে অঞ্জলিদেবীর দেহ। অনিন্দিতার দাবি, সপ্তাহখানেক আগে তাঁর মা বাথরুমে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন। পুলিশ যখন ঘরের ভেতরে দেহ উদ্ধার করছে, তখন বাড়ির বাইরে ভাবলেশহীনভাবে বসে অনিন্দিতা। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, মা মারা যাওয়ার পর কাউকে জানালেন না কেন? প্রথমে নিস্পৃহ থাকলেও পরে রেগে গিয়ে তাঁর জবাব, ‘আপনাদের কেন জানাব?’

অমিত বলছেন, ‘বেশ কয়েকদিন ধরেই মা ও মেয়ের কোনও খবর পাচ্ছিলাম না। ওদের খাবার দিলে খাবারও নিতে চাইত না। এদিন সকালে পচা গন্ধ পেয়ে এলাকাবাসীকে খবর দিই। তারপর পুলিশ এসে ঘরে ঢুকলে দেহ উদ্ধার করে।’ তাঁর সংযোজন, ‘গতবছর যেভাবে জেঠুর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল, এবারও ঠিক একইভাবে জেঠিমার দেহ মিলল বাথরুম থেকে।’
গতবছর বাবার দেহ নিয়ে মেয়ের ঘর করার কথা প্রথম বাইরে এনেছিলেন অঞ্জলিদেবীই। বাবার মৃত্যুর খবর যাতে বাইরের কেউ জানতে না পারে তার জন্য মাকেও কার্যত ঘরবন্দি করে রেখেছিলেন অনিন্দিতা। পরে ওষুধ কেনার অছিলায় বাইরে এসে স্বামীর মৃত্যুর খবর সবাইকে জানিয়েছিলেন অঞ্জলিদেবী। এবার তাঁর ক্ষেত্রেও সেই এক ঘটনা।

সরকারি দপ্তরের গাড়ির চালক ছিলেন অজিতবাবু। তাঁর মৃতু্যর পর পেনশন দিয়েই মা ও মেয়ের সংসার চলত। পড়শিদের ধারণা, ইদানীং কোনও কারণে মা-মেয়ে দুজনেই হয়তো খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সেই কারণেও অঞ্জলিদেবীর মৃত্যু হতে পারে। প্রতিবেশী পলি দত্ত বিশ্বাস বলছেন, ‘মা-মেয়েকে দেখেই মনে হচ্ছে অনেকদিন হয়তো কিছু খায়নি। সেটাই মৃতু্যর কারণ কি না জানি না। আর অনিন্দিতার স্বাস্থ্যও খুব খারাপ হয়েছে বলে মনে হল। আসলে ওরা পাড়ার কারও সঙ্গেই মেলামেশা করত না। কেউ খাবার দিতে চাইলেও নিত না।’

কিন্তু এভাবে কেন বাবা ও মায়ের মৃতদেহ আগলে রইলেন মেয়ে? জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের চিকিৎসক স্বস্তিশোভন চৌধুরীর ধারণা, ‘মানসিক অবসাদগ্রস্ত হলেই কেউ এই ভাবে নিজের কাছের মানুষের মৃতদেহ দিনের পর দিন বন্ধ ঘরে আগলে রাখতে পারেন না। মেয়েটির মানসিক কী অসুখ হয়েছে তা আগে দেখা দরকার। পুলিশ মনে করলে মেয়েটিকে আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আনলে তখন আদালতের নির্দেশে মেডিকেল বোর্ড গড়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে।’

পরপর এমন ঘটনায় স্তম্ভিত ও হতবাক স্থানীয় কাউন্সিলার তারকনাথ দাস। তাঁর কথায়, ‘গতবারের ঘটনার পর মা ও মেয়েকে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির অধীনে চিকিৎসা করানো হয়েছিল। অজিতবাবুর মৃত্যুর সার্টিফিকেট নিতে মা ও মেয়ে একসঙ্গে আমার কাছে এসেছিলেন। কিন্তু ইদানীং দুজনের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না। কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটল, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।’

Sushmita Ghosh
Sushmita Ghoshhttps://uttarbangasambad.com/
Sushmita Ghosh is working as Sub Editor Since 2018. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Digital. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

Malda | অপরিপক্ক লিচুর বিক্রি বন্ধে টাস্কফোর্সের অভিযান

0
মালদা: অপরিপক্ক লিচুর বিক্রি বন্ধে এবার মালদায় (Malda) আমবাজারে হানা দিল স্বাস্থ্য সুরক্ষা দপ্তর। মঙ্গলবার বাজারে অভিযান চালিয়ে কয়েক কুইন্টাল অপরিণত লিচু (Lychee) বাজেয়াপ্ত...

Chit fund | অল্প সময়ে দ্বিগুন টাকার টোপ, প্রতারণার জাল ছড়াচ্ছে উত্তর দিনাজপুরে

0
হেমতাবাদঃ আবারও কি ফিরে আসছে চিটফান্ড? কম সময়ের মধ্যে টাকা দ্বিগুণ করার টোপ দিয়ে হেমতাবাদে সক্রিয় প্রতারণা চক্র। চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে মোবাইল অ্যাপের...

Malda | বিয়ের পরেও স্ত্রীর মর্যাদা দিতে নারাজ, অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা তরুণীর!

0
মালদা: আইনত বিয়ের পরেও স্ত্রীর মর্যাদা দিতে নারাজ স্বামী। এমনকি, ওই তরুণীকে মারধরের পাশাপাশি খুনের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই অপমান সহ্য করতে...

Old Malda | পুরাতন মালদায় একাধিক বেআইনি মার্কেট কমপ্লেক্স ঘিরে বিতর্ক, মুখে কুলুপ পূর্ত...

0
সিদ্ধার্থশংকর সরকার, পুরাতন মালদা: পুরাতন মালদা (Old Malda) শহরের মির্জাপুর মোড়ের উপর পূর্ত দপ্তরের রাস্তা দখল করে বহুতল মার্কেট তৈরি ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।...

Malda | অনলাইন গেম খেলতে বাধা, ‘পার্টনারে’র হাতে আক্রান্ত মা!

0
বৈষ্ণবনগর: বাস্তব এবং ভার্চুয়াল, এই দুই জগতের দৌড়ে বোধহয় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে বাস্তবতা। শনিবার এক ভয়ানক ঘটনার সাক্ষী থাকল মালদার (Malda) বৈষ্ণবনগর (Baishnabnagar) থানার...

Most Popular