মালবাজারঃ গত বছর মহা দশমীর সন্ধ্যায় মাল নদীর বিসর্জন ঘাটে হড়পা বানে ৮ জনের মৃত্যু হয়। সে সময়ে প্রাণ হাতে নিয়ে জলে ঝাঁপ এক যুবকের। তৎপরতার সঙ্গে বেশ কয়েকজনকে প্রবল জলস্রোত থেকে উদ্ধার করেন। তিনি মহম্মদ মানিক। মাল শহরের পাশে তেশিমলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। রবিবার ভোরে গ্রামের কুমলাই নদীর জলোচ্ছ্বাস থেকে ফের এক যুবককে উদ্ধার করেন মানিক। মানিকের তৎপরতায় মৃত্যুর হাত থেকে প্রাণে বাঁচলেন আজার ওরাও নামে এক যুবক।
শনিবার গভীর রাত থেকেই মালবাজার এবং লাগোয়া এলাকাগুলিতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। নদী ফুলে ফেঁপে ওঠে। তেশিমলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় কুমলাই নদীতে জলোচ্ছ্বাস ঘটে। ভোরে খবর পাওয়া যায় এক যুবক কুমলাই নদীর বক্ষে জলোচ্ছ্বাসে আটকে পড়েছেন। মাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রবীন থাপা, মাল থানার আইসি সুজিত লামার কাছেও খবর পৌঁছায়। তারা তৎক্ষণাৎ বিষয়টি পশ্চিম তেসিমলা নিবাসী মোঃ মানিককে জানান। কাল বিলম্ব করেন নি মানিক। ছুটে গিয়ে ফের নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এবার তাকে উদ্ধার কার্যে সহযোগিতা করেন রুপেশ ওরাও নামে আর এক যুবক। পাহাড়ি নদীর প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে লড়াই করে নদীবক্ষে আটকে পড়া যুবককে উদ্ধারও করেন তাঁরা।
জানা গেছে উদ্ধার হওয়া যুবকের নাম আজার ওরাও। বাড়ি কুমলাই নদীর অন্য ধারে বেতগুড়ি চা বাগানের চৈতি লাইনে। কোনও এক সে নদীতে এসেছিল। জল বাড়াতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। আজার বলেন, ‘মহম্মদ মানিক আমাকে উদ্ধার করেছে। উদ্ধার করেই থেমে থাকে নি মানিক। জলে ভিজে ঠান্ডায় কাতর আজারকে শুকনো পোশাক পরিয়ে দেন। তারপর নিজের বাইকে করে তাকে মাল বাজারে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরী বিভাগে তার চিকিৎসা হয়। তারপর তাকে থানাতেও নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চা বাগান থেকে আসা পরিবারের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়েছে।
মহকুমা পুলিশ আধিকারিক এবং আইসি দুজনেই মহ: মানিকের প্রশংসা করেছেন। মানিক অবশ্য এর জন্য আলাদা কোনও কৃতিত্বের দাবি করেন নি। মানিক বলেন, ‘মানুষ হিসেবেই বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। এর জন্য কোন কৃতিত্বই চাই না’। মানিক বর্তমানে মাল থানাতে সিভিক ভলেন্টিয়ারে কর্মরত। দশমীর সন্ধ্যায় মাল নদীর বিসর্জন ঘাটে হড়পা বানে ভেসে যাওয়া বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীকে প্রাণে বাঁচিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নজর কেড়েছিলেন। আর তার নির্দেশেই মানিক সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি পান মাল থানায়।