প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: জাস্টিস উদয় ইউ ললিত, মদন লোকুর, ফলি নরিম্যান, মেনকা গুরুস্বামী। কেউ সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি, কেউ বা বিশিষ্ট আইনজীবী। দেশীয় আইনি ব্যবস্থার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত, তুখোড় সংবিধান এবং আইনপ্রণেতা এমনই ১৬ জন প্রথিতযশা আইনজ্ঞের নামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব পেশ করল বিরোধী জোট ইন্ডিয়া৷
সূত্রের খবর, বুধবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিষয়ক সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ন্যায় সংহিতা, নাগরিক সংহিতা ও সাক্ষ্য অধিনিয়ম সংহিতা সংক্রান্ত পর্যালোচনার সময়ে ‘ডমেইন এক্সপার্ট’ বা অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত, প্রাক্তন বিচারপতি মদন বি লকুর, খ্যাতনামা বর্ষীয়ান আইনজীবী ফলি নরিম্যান বা মানেকা গুরুস্বামীর মতো দেশের প্রথমসারির আইনজ্ঞদের থেকে সুপরামর্শ নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন সহ বিরোধী ইন্ডিয়া জোট সদস্যরা৷ এই পরামর্শ কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপি সাংসদ ব্রিজলাল গ্রহণ করবেন কিনা, তা সময়ই বলবে৷ তবে এই প্রস্তাবকে বুধবারের বৈঠকে খোলা মনে সমর্থন জানিয়েছেন প্রবীণ কংগ্রেস সাংসদ পি চিদম্বরম সহ বিরোধী শিবিরের অন্যান্য সাংসদরাও৷
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা’র নির্দেশে সংশ্লিষ্ট তিনটি বিল নিয়ে টানাপোড়েন অব্যাহত কেন্দ্রীয় শিবিরে৷ সরকারের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, বিশিষ্ট আইনজ্ঞ বা বিচারব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পরামর্শ নেওয়া হোক। কিন্তু এখানেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। বিরোধীদের অভিযোগ, বিশেষজ্ঞদের নামে যাদের কমিটিতে আহ্বান করা হয়েছে তাঁরা কেউই যথাযথ পারদর্শী নন। উলটে গেরুয়া শিবিরের ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে অনেকেই পরিচিত৷ এই প্রসঙ্গে অনামী, অখ্যাত, প্রাক্তন আমলা, পুলিশ, আইনজীবী নয়, দেশের অপরাধ আইনের সংজ্ঞা বদল করতে হলে পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত সুপ্রিম কোর্ট এবং বিভিন্ন হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি, খ্যাতনামা আইনজীবী তথা বিশিষ্ট সমাজসেবীদের থেকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ সংসদীয় কমিটিতে প্রস্তাব দিল তৃণমূল কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিরা। এ ক্ষেত্রেই ১৬ জন বিশিষ্ট আইনজ্ঞদের নাম ইন্ডিয়া জোটের প্রতিনিধিদের তরফে প্রস্তাব করা হয় বলে জানা গিয়েছে।
তাত্পর্যপূর্ণ হল, ভারতীয় দন্ডবিধি এবং ফৌজদারি অপরাধবিধি পরিবর্তন করে তিনটি নতুন বিল নিয়ে আসার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সোচ্চার তৃণমূল কংগ্রেস৷ যেভাবে অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে বিলগুলিকে পরিমার্জন করার চেষ্টা করা হচ্ছে তার সঙ্গেও একমত নয় তৃণমূল৷ এই প্রসঙ্গেই রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের দাবি, ‘দশকের পর দশক ধরে অপরাধ আইন এদেশে প্রচলিত আছে৷ এগুলির সঙ্গে দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের স্বার্থ জড়িত আছে৷ এই আইন পরিবর্তন করে নিয়ে আসা বিলগুলি বিশ্লেষণ করার সময়ে সর্বাধিক যত্ন নিয়ে বিবেচনা করা উচিত৷ কোনওরকম তাড়াহুড়ো এই ক্ষেত্রে কাম্য নয়৷
সংসদীয় সূত্রে খবর, এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই মর্মেই দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি, রাজ্যসভায় দলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন৷ এই প্রসঙ্গেই দলের তরফে আপত্তি জানানো হয়েছে অখ্যাত, অনামী বিশেষজ্ঞদের মনোনয়নে৷ সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে অপরাধ আইন এবং নতুন তিনটি বিলের কার্যকারিতার পক্ষে বক্তব্য রাখার জন্য কমিটির আমন্ত্রণে বৈঠকে হাজির হন আজমেরের নিম্ন আদালতের আইনজীবী জনৈক জগদীশ রাণা৷ মাত্র ২৪ ঘন্টার নোটিশে এই আইনজীবীকে তলব করে কমিটির সামনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়েছিল৷ এই অখ্যাত আইনজীবীকে কেউই চেনেন না, তিনি কিভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে অভিমত জানাতে পারেন? সূত্রের খবর, এই প্রশ্ন তুলে কমিটির বৈঠকেই দাবি জানান বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধিরা৷ এই মর্মেই ডেরেকের তরফে পেশ করা হয় ১৬ জন বিশেষজ্ঞের নামের তালিকা৷ দুপুরের পর কমিটির বৈঠকে নতুন তিনটি বিলের স্বপক্ষে বক্তব্য রাখেন বিজেপি নেত্রী হিসেবে পরিচিত প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল পিঙ্কি আনন্দ৷ সমাজের বিভিন্ন স্তরের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব, সমাজসেবী, আইনজীবী, বিদ্বজ্জন, অবসর প্রাপ্ত খ্যাতনামা বিচারপতি সহ বিভিন্ন ধর্মের গুরুজনের মতো সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের মাধ্যমেই নতুন বিল সম্পর্কে সঠিক অভিমত পাওয়া সম্ভব, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দাবি করেন ডেরেক।