গাজোল: উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী ছাত্র উত্তম মার্ডির আত্মহত্যার ঘটনায় জোরকদমে তদন্ত শুরু করেছে গাজোল থানা। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। সোমবার গভীর রাতে গাজোল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন উত্তমের জ্যাঠামশাই জোনাস মার্ডি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে গাজোল থানার পাঁচ সদস্যের একটি তদন্তকারী দল রওনা দেয় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে। বুধবার সারাদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তদন্ত চালায় পুলিশের এই দলটি। সেখান থেকে বেশ কিছু জিনিস সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
আগামী দিনে তদন্তের স্বার্থে বিদ্যাসাগর এবং রামকৃষ্ণ দুটি ছাত্রাবাসের বেশ কিছু ছাত্রকে সমন করা হতে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে সিসিটিভি ফুটেজ। তদন্তের স্বার্থে উত্তমের ফোনটিকেও পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে। তবে সুবিচার চেয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং চিফ সেক্রেটারিকে পরিবারের পক্ষ থেকে যে মেল করা হয়েছিল তার কোনও সদুত্তর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে এদিন থানা মোড়ে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনায় বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেছিল গাজোল থানার পুলিশের একটি তদন্তকারী দল। সেখানে বিদ্যাসাগর এবং রামকৃষ্ণ ছাত্রাবাসের বেশ কিছু আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। কথা হয়েছে হোস্টেল সুপারের সঙ্গেও। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে হোস্টেলের রেজিস্টার।তবে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশের হাতে সিসিটিভি ফুটেজ তুলে দিতে পারেনি। অবিলম্বে সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। ছুটি থাকার জন্য ছাত্রাবাসের সমস্ত ছাত্রের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ছাত্রাবাসের বেশ কিছু ছাত্রের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি তদন্তের স্বার্থে আগামী দিনে এই সমস্ত ছাত্রদের সমন করা হবে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে।
তদন্তের জন্য উত্তমের জ্যাঠামশায়ের পরিবারের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখে চলেছে পুলিশ। এছাড়া উত্তমের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য গ্রামেও যাবে গাজোল থানার পুলিশ। পুলিশ মনে করছে, উত্তমের ফোনে হয়তো বেশ কিছু তথ্য লুকিয়ে থাকতে পারে। ফোন থেকে তথ্য উদ্ধারের জন্য উত্তমের ফোনটিকে পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে।
উত্তমের জেঠতুতো দিদি পাঞ্চালি জানালেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি পুলিশ ঘটনার তদন্তে শিলিগুড়ি গিয়েছে। তবে ছুটি থাকার জন্য সমস্ত ছাত্রের সঙ্গে কথা বলতে পারেনি। সিসিটিভি ফুটেজও পায়নি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ জমা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। গাজোল থানার পুলিশ প্রাথমিকভাবে তদন্ত ভালোভাবেই করছে। আমরা চাই সঠিকভাবে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করুক পুলিশ। এদিন বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন গাজোল থানার আইসি। তদন্তের স্বার্থে উত্তমের গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলেছে পুলিশ। তদন্তের জন্য আমরা পুলিশকে সবরকম ভাবে সহযোগিতা করতে রাজি আছি।’
ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনার প্রতিবাদে এদিন থানা মোড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং পথসভা করল বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। সংগঠনের মালদা জেলা সংযোজক সুজিত মণ্ডল জানান, ‘উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র উত্তম মার্ডিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে যেভাবে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল তা সহ্য করতে পারেনি ওই মেধাবী ছাত্র। আর সহ্য করতে না পারায় বাড়ির বাথরুমে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন উত্তম। এই ঘটনার প্রতিবাদে এদিন আমরা বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং পথসভা করছি। তবে পুজোর মরসুম চলার জন্য আমরা বড় আকারের বিক্ষোভ থেকে এখন বিরত থাকছি। পুলিশি তদন্ত ঠিকঠাক না হলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে এবিভিপি।’