রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়িঃ এক রোগী, এক ইউনিফর্ম প্রথা চালু হচ্ছে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শনিবার রোগী কল্যান সমিতির বৈঠকে একথা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান গৌতম দেব। তিনি জানিয়েছেন, এখন থেকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রোগী এলে তাঁকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক, বিছানার চাদর দেওয়া হবে। ওই রোগীর ছুটি হয়ে গেলে তার শয্যার চাদর, মশারি, পোশাক উত্তরবঙ্গ মেডিকেলের মেকানাইজড লন্ড্রিতে পাঠানো হবে। সেখান থেকে সেই পোশাক পরিষ্কার করে ইস্তিরি করে আবার হাসপাতালে চলে আসবে। সেই সাফসুতরো পোশাক দেওয়া হবে নতুন রোগীকে। এরফলে স্বাস্থ্যসম্মত চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন রোগীরা। এছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সদের আবাসন মেরামত, হাসপাতালের বহির্বিভাগ সংস্কার সহ বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের পোশাক, শয্যার চাদর সহ অন্যান্য সমস্ত কাপড় হাতে পরিষ্কার করার দিন ফুরোচ্ছে। এখন থেকে মেশিনেই সমস্ত কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ, ও হাসপাতালে এই পরিষেবা চালু হচ্ছে। আগামী ১২ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মেকানাইজড লন্ড্রির উদ্বোধন করবেন। শুধু উত্তরবঙ্গ মেডিকেলই নয়, এই মেকানাইজড লন্ড্রিতে দার্জিলিং জেলার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের মোট পাঁচ জেলার ১৬টি হাসপাতালের কাপড় পরিষ্কার করা হবে। এই পরিষেবা দেওয়ার জন্য বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবন থেকে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই কথা ঘৌষণা করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের সব সরকারি হাসপাতালেই রোগীদের বিছানার চাদর থেকে শুরু করে অপারেশনের সময় ব্যবহৃত পোশাক সমস্ত কিছুই হাতে পরিষ্কার করার রীতি রয়েছে। কোনও হাসপাতালেই রোগীদের ব্যবহৃত সরঞ্জাম ভালো করে সাফসুতরো হয় না বলে অভিযোগ। একজন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরে নতুন রোগীকে ওই শয্যায় ঠাঁই দেওয়া হয়। কিন্তু সেই রক্তমাখা বিছানার চাদর, তোষক, দুর্গন্ধযুক্ত বালিশই রোগীরা ব্যবহার করতে বাধ্য হন। একই অবস্থা অপারেশনের সময় দেওয়া পোশাকেরও। সেগুলি মাসের পর মাস ব্যবহার হলেও পরিষ্কার করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসকরাও অনেক সময় এই অস্বাস্থ্যকর পোশাক নিয়ে সরব হয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কিছু রোগী বাড়ি থেকে বিছানার চাদর, বালিশ নিয়ে আসেন ঠিকই, কিন্তু সিংহভাগের কপালে জোটে সেই দুর্গন্ধযুক্ত, রক্তমাখা পোশাক।
সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৫ ডিসেম্বর থেকে এই পরিষেবা চালুর কথা বলা হয়েছে। তবে, মুখ্যমন্ত্রী ১২ ডিসেম্বর শিলিগুড়ির সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে এর উদ্বোধন করবেন বলে জানা গিয়েছে। মেডিকেলের সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক বলেছেন, ‘যন্ত্র পরিচালিত এই লন্ড্রি চালু হলে হাসপাতালের কাপড় আরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হবে। প্রতি ঘণ্টায় এই লন্ড্রিতে প্রায় ২৫ কেজি কাপড় ধুয়ে ইস্তিরি করার ব্যবস্থা থাকছে। ফলে প্রতিদিন প্রচুর কাপড় পরিষ্কার করার পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় ইস্তিরির কাজও হয়ে যাবে। রোগী পরিষেবা এবং বিশেষ করে স্বাস্থ্যসম্মত বিষয়গুলি নজরে রাখার ক্ষেত্রে এটা অনেকটাই। সহায়ক হবে।’