হরিশ্চন্দ্রপুরঃ অভিযোগ তিনি ভারতীয় (Indian) নন। আদতে তিনি বাংলাদেশী নাগরিক (Bangladeshi citizen)। ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্রবার করে তিনি পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জেতার পর তিনি পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি হরিশ্চন্দ্রপুর থানার (Harischandrapur Thana) রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের নবনির্বাচিত প্রধান লাভলী খাতুন (Lovely Khatun)। সম্প্রতি তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court) দ্বারস্থ হয়েছিলেন জনাকয়েক গ্রামবাসী। সেই মামলায় চাঁচল মহকুমা শাসকের কাছে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধানের জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা (Justice Amrita Sinha)।
জানা গিয়েছে, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের প্রতীকে জয়ী হন লাভলী খাতুন। পরে তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে লাভলি প্রধান নির্বাচিত হন। তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জনাকয়েক গ্রামবাসী। তাঁদের অভিযোগ, লাভলী খাতুনের জন্ম বাংলাদেশে। পরবর্তীতে তিনি এদেশে আসার পর এক ভারতীয় সঙ্গে বিয়ে হয়। কাগজে-কলমে তার বাবা হিসেবে কুশিদার এক ব্যক্তির নাম রয়েছে। তিনি তার জন্মদাতা পিতা নন। দত্তক পিতা হিসেবে সেই ব্যাক্তির নাম রয়েছে। কিন্তু মুসলিম আইনে দত্তক গ্রহণযোগ্য নয়। এবং এক্ষেত্রেই নথি বিকৃত করে লাভলী খাতুন জাল ওবিসি শংসাপত্র বার করেছেন। সেই জাল ওবিসি শংসাপত্র দাখিল করেছিলেন মনোনয়ন পত্রের সঙ্গে। অভিযোগকারীদের দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই বিষয়টি জানিয়েছিলেন তৎকালীন হরিশ্চন্দ্রপুর এক নম্বর ব্লকের বিডিওর কাছে। কিন্তু তাতে কোন সুরাহা হয়নি।
অভিযোগকারীদের মধ্যে খাইরুল আলম বলেন, কংগ্রেস থেকে জিতলেও লাভলি বোর্ড গঠনের সময় তৃণমূলের ১০ জন সদস্যের সমর্থনে প্রধান হয়ে যান। এর ফলে রসিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত জোটের হাত থেকে ফসকে যায়। এমনকি এই কাণ্ডের জন্য বোর্ড গঠনের দিন লাভলী খাতুনের দিকে জুতো পর্যন্ত ছোড়া হয়। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের মেম্বার ইবনে মাসুদ জানান, লাভলী কংগ্রেস থেকে জিতেছিল। বোর্ড গঠনের আগে আমাদের শিবিরে ছিলেন, কিন্তু বোর্ড গঠনের দিন ও তৃণমূলের সমর্থনে প্রধান হয়ে যান। এরপরই আমাদের কর্মীরা ওর বিরুদ্ধে মামলা করে। এখন এই মামলা দল পরিচালনা করছে। যদিও লাভলি খাতুনের আইনজীবীর পাল্টা দাবি, তিনি ভারতীয় নাগরিক এবং তাঁর কাছে যাবতীয় প্রমাণপত্র রয়েছে।
পাঁচ অভিযোগকারী লাভলি খাতুনের নাগরিকত্ব ও জাল শংসাপত্রের অভিযোগ এনে দ্বারস্থ হন কলকাতা হাইকোর্টে। মঙ্গলবার মামলাটি ওঠে অমৃতা সিনহার বেঞ্চে। এদিন উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশ দেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি উভয় পক্ষের হিয়ারিং করে অভিযোগ শুনতে হবে মালদহের চাঁচলের মহকুমা শাসক সৌভিক মুখার্জিকে। পাশাপাশি লাভলী খাতুন কে তাঁর প্রমাণ পত্রের সমস্ত নথি হলফনামা আকারে জমা দিতে হবে আদালতে। আগামী কুড়ি ফেব্রুয়ারি মহকুমা শাসক কে হলফনামা আকারে এ ব্যাপারে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিনহা।
এই মামলা প্রসঙ্গে সিপিএম রাজ্য কমিটির সদস্য জামিল ফেরদৌস জানান, “আদালতের নির্দেশ আমরাও শুনেছি। কুড়ি দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইনের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে।” যদিও এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মর্জিনা খাতুন বলেন, “বিচারাধীন বিষয় মন্তব্য করব না। আইন আইনের পথেই চলবে। প্রশাসন নিশ্চই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।”