মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, বীরপাড়া: দিল্লি বা মুম্বই পুলিশ নয়! পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ! তবে ১০ মিনিটের তড়িৎ পদক্ষেপে বীরপাড়া থানার অ্যান্টি ক্রাইম টিম বোঝাল, ‘হাম কিসিসে কম নেহি!’ সোমবার রাতে বীরপাড়া থানার পুলিশই (Birpara police) বাঁচাল আত্মহত্যা (Suicide) করতে প্রস্তুত এক কলেজ পড়ুয়ার প্রাণ!
সোমবার রাত তখন ৯.৪০ মিনিট। বীরপাড়ার যুবক মুকেশ জয়সওয়াল ও ধনঞ্জয় তালুকদারের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ আসে। তাতে একটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট ছিল। দেখা যায়, বীরপাড়ারই এক তরুণ আত্মহত্যা করতে চলেছেন। তিনি স্পষ্টভাবেই লিখেছিলেন, ‘কিছুক্ষণ পরই আত্মহত্যা করব। এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব।’
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সঙ্গে সঙ্গে বীরপাড়া থানার ইনস্পেকটর পালজার ছিরিং ভুটিয়াকে মেসেজটি ফরওয়ার্ড করার পাশাপাশি ফোন করে পদক্ষেপ করার অনুরোধ করেন মুকেশ। পালজারবাবু সঙ্গে সঙ্গে বীরপাড়া থানার ওসি নয়ন দাসকে পদক্ষেপ করতে বলেন। নয়নবাবুর নির্দেশে ১০ মিনিটে ওই যুবকের বাড়ি খুঁজে বের করে ফেলেন অ্যান্টি ক্রাইম টিমের ওসি প্রকাশ মিঞ্জ ও এএসআই নরেন্দ্রনাথ বর্মা।
ততক্ষণে এলাকায় হইচই পড়ে গিয়েছে! ওই তরুণটিকে নিরস্ত করে ঘটনার কারণ অনুসন্ধান শুরু করে পুলিশ। তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন বীরপাড়া থানার ওসিও। পরে পুলিশ জানায়, ওই যুবকের বাবা প্রয়াত হয়েছেন। দিদির বিয়ে হয়েছে। আর্থিক পরিস্থিতি ততটা সচ্ছল নয়। এদিকে আধুনিক জীবনযাপনের জন্য তরুণের বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনার দাবি মেটাতে অক্ষম মা সোমবার নাকি একটু বকাবকিও করেন। এতেই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ওই তরুণ।
সোমবার রাতে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন অনেকেই। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তরুণের মা-ও। মুকেশ জয়সওয়াল বলেন, ‘পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ না করলে যে কোনও ধরনের বিপত্তি ঘটতে পারত। এই ধরনের ঘটনা রুখতে প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। ছেলেটির ফেসবুক ফ্রেন্ডরাই দ্রুত মেসেজটি চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়ায় পুলিশের কাছে খবর পৌঁছে যায়।’
ওসি নয়ন দাস বলেন, ‘প্রয়োজন হলে যে কোনও সময় ওই যুবকটির মা-কে আমরা থানায় যোগাযোগ করতে বলেছি। দরকার হলে তরুণের কাউন্সেলিং করাতে পুলিশ পদক্ষেপ করবে।’
গত ২৫ জানুয়ারি রাতে মাদারিহাট থানার (Madarihat police station) দক্ষিণ খয়েরবাড়ির তরুণ রাজেশ রায় প্রেমিকাকে মেসেজ পাঠিয়ে গলায় দড়ি দেন। গত বছরের অক্টোবর মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি থানা এলাকার বিজন পাইক নামে এক ২৫ বছর বয়সি তরুণ স্ত্রীকে ভিডিও কল করে আত্মঘাতী হন। গত বছরেরই জুলাই মাসে ঝাড়খণ্ডের নৃত্যশিল্পী প্রীতি হাঁসদা মুম্বইয়ে ইনস্টাগ্রামে লাইভ স্ট্রিমিং করে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন।
বীরপাড়া কলেজের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক শেখ কামরুজ্জামান বলেন, ‘পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসনের ফলে দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে। বর্তমানে অনুশাসনের জায়গা নিচ্ছে সংস্কার এবং সংশোধনমূলক দায়বদ্ধতা। সামাজিক শাসনের পরিবর্তনে অনুশাসন প্রবণতাও কমছে। এর পেছনে রয়েছে আত্মকেন্দ্রিক এবং অন্তর্মুখী জীবন ব্যবস্থা। এর ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। আত্মহত্যারও নানা প্রকারভেদ রয়েছে। এগুলির মধ্যে একটি হল আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা। মানুষ যখন নিজেকে সমাজের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে ব্যর্থ হয় তখন আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়।’