নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট: জলদাপাড়ার বেতাজ বাদশা এখন বিশাল আকারের সেই মাকনা হাতি (Elephant)। দাঁতালকে ‘খুন’ করার পর এই মাকনা এখন বনকর্মীদের পাশাপাশি মাদারিহাটের বাসিন্দাদের কাছেও ত্রাস হয়ে উঠেছে।
এমনিতে জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা বছরের সব সময়েই তো হাতির হানার আশঙ্কা নিয়েই জীবনধারণ করেন। তবে এই মাকনার মেজাজটাই খুনে। বনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ঘরবাড়ি ভাঙা তো পরের কথা, এই মাকনার সবার আগে টার্গেট হল, কোনও মানুষ পেলেই আক্রমণ করা। স্বভাবতই যখন-তখন হাতির হানার (Elephant Attack) ভয়ে তাই সিঁটিয়ে রয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
তার মানে এমন নয় যে, কেবল মানুষের উপর হামলা চালাবার দিকেই তার নজর রয়েছে। বন দপ্তরের (Forest Department) সঙ্গে কথা বলেই জানা গেল, সেই বুনো তো ইতিমধ্যেই কার্যত ঘর ভাঙার রেকর্ড গড়ে ফেলেছে। বনকর্মী জানালেন, ‘হাতিটা তো আমাদের দেখলেও তেড়ে আসছে।’ এদিকে মঙ্গলবার রাতে সেই মাকনাই তাণ্ডব চালায় মাদারিহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব খয়েরবাড়িতে। পাঁচজনের ঘর ভেঙে ফেলেছে। দেওয়াল চাপা পড়া থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছে দুই বোন। বুধবার সকালে জলদাপাড়া নর্থ রেঞ্জের বিট অফিসার তারক রায় ওই এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। তাঁকে প্রায় দুই ঘণ্টা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন।
চন্দন বিশ্বকর্মা নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘প্রথমে আমার ঘরের বারান্দার দেওয়াল ভেঙে ফেলে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে দিয়েছে। আমি প্রতিবেশী সীমা মাঝিকে ফোন করে সাহায্য চাইছিলাম। তখন ওদের বাড়িতেও হামলা চালায়। সীমাদের বাড়ি ঢুকে ওদের থাকার ঘরটিও ভেঙে দিয়েছে। এরপর আবার আমার বাড়ি এসে আমার থাকার ঘর ভেঙে দেয়।’ এখানেই ক্ষান্ত দেয়নি। আবার চলে যায় সীমাদের বাড়ি। ভেঙে ফেলে সীমাদের ঘরের বারান্দা।
পূর্ব খয়েরবাড়ির বাসিন্দা সীমা মাঝি জানালেন, ‘আমি ও আমার দিদি ভগবতী মাঝি একটি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার অসুস্থ মা ও বাবা অন্য ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎই রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ আওয়াজ পাই। ঘুম থেকে দিদিকে ডাকতে না ডাকতেই ঘরের পাকা দেওয়াল আমাদের বিছানার উপর ভেঙে পড়ে। বিছানার উপর উলটে পড়ে আলমারি।’ সীমার কথায়, তাঁরা দুই বোন অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন। গত সোমবার তাঁদের গ্রামের আরও তিনজনের ঘর ভেঙেছিল সেই মাকনাই।
এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান হাসিমারা বিটের বিট অফিসার তারক রায়। তাঁকে ঘিরে ক্ষোভ উগরে দেন ক্ষতিগ্রস্তরা। তারক জানিয়েছেন, আবেদন করলে সরকারি নিয়মে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে ঘেরাও করার কথা অস্বীকার করেন তিনি।