শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: দলের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন কার্সিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। দলীয় লাইনের বিরুদ্ধে গিয়ে অনেকদিন থেকেই তিনি নানা কথা বলছিলেন। এবার স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, লোকসভা ভোটে বিজেপি দার্জিলিং কেন্দ্রে ভূমিপুত্রকে প্রার্থী না করলে তিনি নিজে প্রার্থী হিসাবে দলের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। বিষ্ণুপ্রসাদের কথায়, ‘রাজু বিস্ট বা হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে প্রার্থী করা হলে আমি তাঁদের বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র জমা দেব। কেউ আটকাতে পারবে না। এক্ষেত্রে কারও কথা শুনব না।’
কার্সিয়াংয়ের বিধায়কের হুঁশিয়ারি নিয়ে দলীয় নেতারা সেভাবে মুখ খুলতে রাজি নন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘পৃথক রাজ্য নিয়ে দলের অবস্থান আগেই স্পষ্ট করা হয়েছে। আমরা সেই অবস্থান মেনেই কাজ করছি।’ দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মনের বক্তব্য, ‘যে কেউ প্রার্থী হতে চাইতেই পারেন বা পছন্দের লোককে প্রার্থী করার দাবি তুলতেই পারেন। সেটা দোষের নয়। তবে আমাদের প্রত্যেককেই দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলা উচিত।’
বিষ্ণুপ্রসাদ দু’দিন আগেই গঙ্গারামপুরে দলের অন্য দুই বিধায়ককে নিয়ে বৈঠক করেছেন। পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিকে আরও জোরদার করতেই যে সেই বৈঠক তা কার্সিয়াংয়ের বিধায়ক ঘুরিয়ে স্বীকারও করেছেন। এদিন তিনি ময়নাগুড়ি ও ধূপগুড়িতে গিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, দুই জায়গায় তিনটি বৈঠক করেছেন। বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও কী নিয়ে কাদের সঙ্গে বৈঠক তা তিনি খোলসা করেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘সময় এলেই সব স্পষ্ট হবে। শুধু আমি উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করতে চাইছি তা নয়। দলের আরও অনেক বিধায়কও তাই চাইছেন। নানা কারণে তাঁরা প্রকাশ্যে সেকথা বলতে পারছেন না। তাই বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কাজটা আমিই করেছি। উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিতে কিছুদিনের মধ্যে শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকায় আরও একটি বৈঠক হবে। সেখানে বিজেপির আরও কয়েকজন বিধায়ক উপস্থিত থাকবেন।’ যদিও কোন কোন বিধায়ক থাকবেন তা বিষ্ণুপ্রসাদ এখনই বলতে রাজি নন।
পদ্ম শিবির সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিষ্ণুপ্রসাদের সঙ্গে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির বিক্ষুব্ধ বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতার বৈঠক হয়েছে। দল যদি রাজ্য বিভাজনকে সমর্থন না করে তাহলে কেন আলাদা রাজ্যের দাবিদার নগেন রায়কে রাজ্যসভার সদস্য করা হল বলে বিষ্ণুপ্রসাদ প্রশ্নও তুলেছেন। তিনি যে তলে তলে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন তা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব ভালোই বুঝতে পেরেছে। সেই খবর কলকাতায় পৌঁছোতেই রাতেই ফোনে কয়েকজনকে সতর্ক করা হয়েছে। শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষের বক্তব্য, ‘বিষ্ণুপ্রসাদ আমার সহকর্মী ও ভালো বন্ধু। তবে সাংসদ হিসাবে রাজু বিস্ট যে কাজ করছেন তাতে আমরা দার্জিলিং কেন্দ্রে বিকল্প কাউকেই চাইছি না।’