তমালিকা দে ও শুভাশিস বসাক, ধূপগুড়ি: রাস্তার পাশে চপ, সিঙ্গাড়া বিক্রি করা মেয়েটা যে একদিন সিরিয়াল করবে তা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। তাও আবার জি বাংলায়। তবে শুধু সিরিয়াল নয়, মডেলিং করেও কলকাতা (Kolkata) শহর মাতাচ্ছেন ধূপগুড়ির সুপ্রিয়া দেব।
সম্প্রতি কলকাতায় আয়োজিত একটি ফ্যাশন শোতে সুপার মডেল মালাইকা অরোরার (Malaika Arora) থেকে সেরা মডেলের পুরস্কার নিয়েছেন তিনি।
যাঁরা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন সাফল্য বোধ হয় তাঁদেরকেই ধরা দেয়। ছোট থেকেই দীপিকা পাডুকোন, প্রিয়াংকা চোপড়ার মতো সুপার মডেলদের দেখে মডেলিং করার ইচ্ছে ছিল ধূপগুড়ির (Dhupguri news) বিদ্যাশ্রম দিব্যজ্যোতি বিদ্যানিকেতনের এই প্রাক্তনীর। আর্থিক সাচ্ছল্য না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও কোনও মডেলিং ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ভাগ্য হয়নি তাঁর। তবে ওই যে অদম্য জেদ থাকলে আটকানো মুশকিল।
ঠিক এমনটাই হয় সুপ্রিয়ার সঙ্গে। তিনি শিক্ষার মাধ্যম করে নেন মুঠোফোনকে। ইউটিউব ঘেঁটে সেখান থেকে র্যাম্প ওয়্যাক, গ্রুমিংয়ের তালিম নেন। তবে কীভাবে মডেলিংয়ের সুযোগ এল তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ছলছলে চোখ নিয়ে সুপ্রিয়া বলেন, ‘বুঝতেই পারছেন আমার মতো আর্থিক দিক থেকে অসচ্ছল পরিবারের মেয়ের পক্ষে কতটা চ্যালেঞ্জিং মডেলিংয়ের প্রতিটি পর্যায়ের জন্য নিজেকে তৈরি করা। তবে আমি হেরে যাইনি। সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাক্টিভ থাকতাম কোথায়, কখন মডেলিং শো হচ্ছে। দু’বছর আগে ইনস্টাগ্রামে একটি জনপ্রিয় ফ্যাশন শো গোয়াতে আয়োজিত হচ্ছে সেটার বিজ্ঞাপন দেখে ফর্ম ফিলআপ করেছিলাম। সেখান থেকেই পর পর সাফল্য। অনেক কঠোর পরিশ্রম করেই আজকের জায়গায় পৌঁছেছি।’
পাটকিদহ এলাকার টিনের বাড়িতেই এখন দিনরাত লোকের ভিড়। কেউ আসছেন সেলফি নিতে, কেউ আবার ফুলের তোড়া, মিষ্টি নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে। সুযোগ পেলেই ঘিরে ধরছেন ইউটিউবাররাও। ইতিমধ্যেই সিরিয়ালের পাশাপাশি বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও দেখা যাচ্ছে সুপ্রিয়ার মুখ।
বাবার সঙ্গে চপ, সিঙ্গাড়া বিক্রি করা মেয়েটি যে এত কম বয়সে পরিবারের নাম উজ্বল করবে তা ভাবতেই পারেনি কেউই।
সুপ্রিয়ার বাবা সন্তোষ দেব বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে মেয়ের এই সাফল্য দেখে। অনেক গুণী মানুষ শুভেচ্ছা জানাতে আসছেন।’ খুশি সুপ্রিয়ার মা আন্না দেবও।
নিজের সাফল্যে কতটা খুশি সুপ্রিয়া সেটা তাঁকে কাছ থেকে না দেখলে বোঝানো মুশকিল। এখন তিনি ব্যস্ত বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের শ্যুট নিয়ে।
দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে স্বপ্ন পূরণ করা সুপ্রিয়া এখন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন এলাকার আরও অনেকের কাছে।