শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) কার্যকরী হওয়ায় তাঁদের যাতে কোনও হয়রানির মুখে পড়তে না হয়, এমনটাই চাইছেন উত্তরবঙ্গের বাংলাভাষী বৌদ্ধরা। নাগরিকত্ব যদি দেওয়া হয়, তবে সেক্ষেত্রে বিধিনিয়মের সরলীকরণ করার দাবিও তাঁরা তুলে ধরছেন। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও মালদা জেলা মিলিয়ে প্রায় দু’লক্ষ বাঙালি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের বাস বলে সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে। এখানে তাঁদের মন্দির রয়েছে ১৬টি।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর মূলত বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে উদ্বাস্তু হয়ে বহু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ উত্তরবঙ্গে পা রেখেছিলেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন চাকমা ও সিংহ পদবিধারীরাও। উত্তরের বাংলাভাষী বৌদ্ধদের সামাজিক সংগঠন বৌদ্ধ কল্যাণ পরিষেবার কার্যনির্বাহী সভাপতি বিজয় বড়ুয়া বলেন, ‘যতদূর জেনেছি, নাগরিকত্বের আবেদন করতে গেলে বেশ কিছু নথিপত্র দিতে হবে। বলাই বাহুল্য দেশভাগের পর আজ থেকে ৭৬ বছর আগে এখানে পাড়ি দেওয়া অনেকের কাছেই নথিপত্র খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে নিয়মের সরলীকরণ করে যদি আমাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয় তবে অবশ্যই তা স্বাগতযোগ্য।’
ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে এদেশে আসা হিন্দু সহ আরও যে কয়েকটি সম্প্রদায়কে নাগরিকত্ব প্রদানের কথা সিএএ-তে বলা আছে সেই তালিকায় বৌদ্ধরাও রয়েছেন। বরাবরই শান্তিপ্রিয় হিসেবে পরিচিত বৌদ্ধসমাজ জানাচ্ছে, বড়ুয়া, মুৎসুদ্দি, তালুকদার, চৌধুরী পদবিধারীদের মতো অনেক বৌদ্ধ বাংলাদেশ থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে এপারে এসেছিলেন। তারপর থেকে আর পাঁচটা সম্প্রদায়ের মতো তাঁরাও মিশে গিয়েছেন এখানকার মূলস্রোতে। এখনও বাংলাদেশের চট্টগ্রামের শতাধিক গ্রামীণ এলাকায় বহু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস রয়েছে। সিএএ কার্যকরী হতেই এখানকার বৌদ্ধদের মধ্যেও নানা ধরনের জল্পনা ছড়িয়েছে।
তবে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির উত্তরবঙ্গের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও এবারে আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনে দলের প্রার্থী মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, ফের বলছি। সিএএ কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার আইন নয়। এটা নাগরিকত্ব প্রদানের আইন। কেউ কেউ এটাকে নিয়ে অপপ্রচার করছেন। তবে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বোকা বানানো অতটা সোজা নয়। মানুষ সবকিছুই বুঝতে পারছে। যে কারণে সিএএ নিয়ে বিপুল সাড়া মিলতে শুরু করেছে চারদিক থেকে।’