দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জ: দালালের খপ্পরে পড়ে ভুটানে রাজমিস্ত্রি ও শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে আটক ৮ তরুণ। তাঁদের নাম উকিল বর্মন, দুমেন বর্মন, শংকর বর্মন, প্রদীপ বর্মন, রতন বর্মন, ভোলা বর্মন, রমেশ বর্মন এবং দর্শন বর্মন। রায়গঞ্জ ব্লকের কমলাবাড়ির বাসিন্দা ওই ৮ তরুণ ৪২ দিন আগে কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়ির এজেন্ট জাহিদুল রহমানের সঙ্গে ভুটানে যান। তাঁদের পৌঁছেই অবশ্য ফিরে আসেন জাহিদুল। মিস্ত্রি এবং শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ঠিক করা হয় যথাক্রমে ৯০০ টাকা ও ৭০০ টাকা। শর্ত ছিল দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার।
ভুটানে পৌঁছেই শুরু হয় উলোট পুরাণ। পরিবারের লোকজনদের ফোন করে ওই শ্রমিকরা জানান, তাঁদের শর্ত মতো মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। কাজের সময়ও ৮ ঘণ্টার বদলে ১০ ঘণ্টা করে দেওয়া হয়েছে। থাকার সুব্যবস্থা নেই। প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন তাঁরা। এমন অভিযোগ শোনার পর কন্ট্রাক্টর জাহিদুল রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পরিবারের সদস্যরা। তিনি তাঁদের আশ্বাস দেন, সব ঠিক হয়ে যাবে, এটা একটা সাময়িক অসুবিধা। এরপরে কেটে যায় প্রায় ১ মাস। পরিবারকে কোনও টাকা পাঠাননি ওই শ্রমিকেরা। অবশেষে সোমবার স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে অভিযোগ জানায় ওই ৮ শ্রমিকের পরিবার।
তড়িঘড়ি জাহিদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। উত্তরে, সুর পালটে জাহিদুল বলেন, ‘কোম্পানির চুক্তি মতো তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভুটানে। তাঁদের পাঠাতে মাথাপিছু কোম্পানির ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তাই তাঁরা কাজ না করলে কোম্পানি ছাড়বে না। তবে ভোটের আগেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’
ইতিমধ্যে ছটপড়ুয়া গ্রামের বাসিন্দা রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা দ্বারিকনাথ বর্মন ওই ৮ জনকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কন্ট্রাক্টরকে আমি ফোন করেছিলাম, কিন্তু তিনি আমাদের কথার কোনও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। উলটে গরম দেখিয়েছেন।’
পরিযায়ী শ্রমিক ভোলা বর্মনের বৃদ্ধ দিদি এদিন বলেন, ‘ভাই বিদেশে গিয়ে দালালের হাতে পড়ে গিয়েছে। বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছে তাদের আসতে দিচ্ছে না।’ আরেক শ্রমিক রতন বর্মনের বাবা দিগেন বর্মন বলেন, ‘ওদের আসতে দিচ্ছে না। ঠিক মতো মজুরি দিচ্ছে না। ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করাচ্ছে। তাই ওদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য প্রধানকে জানিয়েছি।’ রতনের মা তিতারু বর্মন জানান, তাঁর ছেলেকে সিকিমে কাজে নিয়ে যাওয়ার মিথ্যে কথা বলে ভুটানে নিয়ে গিয়েছে। দুই মাস হতে চলল এক টাকাও দেয়নি। বৌমা ও নাতি নাতনিদের নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েছেন।
প্রধান রেখা বর্মন বলেছেন, ‘প্রশাসনের মাধ্যমে ওঁদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করব। আজই কর্ণজোড়া পুলিশ ফাঁড়িতে বিষয়টি জানাব।’ এখন পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা কবে মেটে, সেটাই দেখার।