Wednesday, July 3, 2024
HomeExclusiveSiliguri | প্রেমের পাতা ফাঁদ, তিন মাসে ঘরছাড়া শতাধিক নাবালিকা

Siliguri | প্রেমের পাতা ফাঁদ, তিন মাসে ঘরছাড়া শতাধিক নাবালিকা

মিঠুন ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: স্মার্টফোনের স্ক্রিনে হঠাৎ ভেসে ওঠা মেসেঞ্জারের নোটিফিকেশনটায় একপ্রকার ইচ্ছে করেই সাড়া দিয়েছিল বছর সতেরোর মেয়েটা। ওপ্রান্ত থেকে ভেসে আসা অপরিচিত ছেলেটার প্রোফাইল ছবি দেখে মন্দ লাগেনি তার। তাই হাই, হ্যালো থেকে কথাবার্তা এগোতে সময় লাগেনি খুব বেশি। এরইমধ্যে মোবাইল নম্বর দেওয়া নেওয়া থেকে শুরু করে কখন যে মন দেওয়া নেওয়াও হয়ে গিয়েছে তা মালুম হয়নি। ঘরে বাবা-মাও বিশেষ টের পাননি মেয়ের হালচাল। পাবেনই বা কী করে! তাঁদের যে সারাদিন বাড়িতে থাকারই জো নেই। কাজের তাগিদে সেই যে সাতসকালে বেরোতে হয়, ফেরেন তো সেই সূর্য ডুবলে। অগত্যা মেয়ে কার সঙ্গে কথা বলছে, কী করছে তার খোঁজ থাকবেই বা কী করে!

একদিন দুম করে বাবা-মা বাড়িতে ফিরে দেখলেন মেয়েটা নেই। পাড়া-প্রতিবেশীদের ঘরও তন্ন তন্ন করে খুঁজে হদিস মিলল না। একদিন যায়, দু’দিন যায় মেয়েটা আর ফেরে না। লোকলজ্জার ভয় কাউকে কিছু বলারও সাহস কুলোয় না। তবু, কোনওমতে থানায় গিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি ঠুকলেন অসহায় বাবা-মা। দিন দশেক বাদে পুলিশ সেই মেয়েকে খুঁজে বের করল অসম থেকে।

এই ঘটনা একটা উদাহরণ মাত্র। শুধুমাত্র রাজগঞ্জ (Rajganj) থানা এলাকাতেই গত তিন মাসে এমনভাবে বাড়ি থেকে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে জনা ১৫ নাবালিকা। শিলিগুড়ি (Siliguri) কমিশনারেটের সব থানা মিলিয়ে সংখ্যাটা একশোরও বেশি। শুধু নাবালিকা নয়, এর বাইরে রয়েছেন বিবাহিত তরুণীরাও। সব ক্ষেত্রেই ‘কমন ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রেম এবং পরকীয়া। কিছু ক্ষেত্রে আবার প্রেমের টোপ দিয়ে পাচারের ছক খুঁজে পাচ্ছে পুলিশ।

শিলিগুড়ি পুলিশ (Siliguri Police) কমিশনারেটের ডিসিপি (হেড কোয়ার্টার) তন্ময় সরকার বলছেন, ‘নাবালিকা নিখোঁজের ক্ষেত্রে ঘটনা যাই থাকুক অপহরণের মামলা রুজু করেই তদন্ত শুরু করতে হয়। পুলিশ সেটাই করে থাকে। তবে তদন্তে বেশিরভাগ সময় প্রেমের ঘটনা উঠে আসে। কিছু ক্ষেত্রে মানব পাচার বা অন্য ঘটনা থাকে না সেটা নয়।’ সমস্যা মেটাতে পুলিশের তরফে মানবপাচার বিরোধী সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

গত ৭ মে ফুলবাড়ি এলাকা থেকে এক নাবালিকা উধাও হয়ে যায়। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তবে এখনও হদিস মেলেনি নাবালিকার। ওই বাড়িতে এখনও কান্নার রোল স্পষ্ট। নাবালিকার এক আত্মীয় বলছেন, ‘মেয়ের শোকে মা-বাবা ও অন্যরা খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। ঘরে না ফেরা পর্যন্ত শান্তি নেই।’ পড়শিরা জানিয়েছেন, নাবালিকাকে এলাকায় সেভাবে কারও সঙ্গে আড্ডা দিতেও দেখা যেত না। বন্ধুবান্ধবও চোখে পড়েনি সেই অর্থে। তবে কি পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছে সে? কৌতূহল রয়েছে এলাকায়।

গত ১১ এপ্রিল  ভক্তিনগর থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় এক নাবালিকা। অভিযোগ দায়ের হওয়ার দু’দিন পর শিলিগুড়ি থানা এলাকা থেকে  উদ্ধার হয় সে। তার বাড়িতে এখনও ভরা আতঙ্ক। নাবালিকার বাবা বলছেন, ‘অসৎ উদ্দেশ্যে আমার মেয়েকে আটকে রাখা হয়েছিল।’ ঘটনায় এক তরুণ গ্রেপ্তার হয়ে আপাতত জলপাইগুড়ির জেলে বন্দি।

১২ এপ্রিল ফুলবাড়ি এলাকা থেকে এক নাবালিকা নিখোঁজ হয়। নিউ জলপাইগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের হতেই পুলিশি তৎপরতায় খোঁজ মেলে তার। পরিবারটির সন্দেহ, তাদের মেয়ে মানব পাচারের খপ্পরে পড়েছিল। নাবালিকার ট্রমা এখনও কাটেনি। চলছে কাউন্সেলিংও। এই ঘটনার দু’দিন বাদে ১৪ এপ্রিল নিউ জলপাইগুড়ি থানায় আরও এক নাবালিকা নিখোঁজের অভিযোগ জমা পড়ে। নাবালিকার এক আত্মীয় বলছেন, ‘আমাদের পরিবারের মেয়েকে ভুল বুঝিয়ে অসমে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। পুলিশের তরফে কোনও সহযোগিতা পাইনি। বিভিন্ন সূত্র কাজে লাগিয়ে নিজেরাই মেয়েকে উদ্ধার করেছি। পুলিশ এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’

এ তো গেল নাবালিকা ফেরারের কাহিনী। পুলিশের তথ্য বলছে, এর বাইরে নিউ জলপাইগুড়ি, প্রধাননগর, বাগডোগরা, শিলিগুড়ি মহিলা থানা মিলিয়ে পঞ্চাশের বেশি বিবাহিত তরুণী নিখোঁজের অভিযোগ এসেছে গত তিন মাসে।

কেন এধরনের ঘটনা বাড়ছে? মনস্তত্ববিদ ডাঃ উত্তম মজুমদার মনে করছেন, ‘পরিবারগুলিতে খোলামেলা আলোচনা, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ না থাকার জেরেই এমনটা ঘটছে। আজকাল হাতে হাতে মোবাইল থাকা এবং সামাজিক সচেতনতার অভাব এর জন্য অনেকটা দায়ী।’

দীর্ঘদিন এমন সমস্যা নিয়ে কাজ করছে দার্জিলিং জেলা লিগ্যাল এইড ফোরাম। সংগঠনটির সভাপতি অমিত সরকারের মতে, অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে থানা-পুলিশ এড়িয়ে যান। ফলে এই নিখোঁজের সংখ্যাটা যে ঢের বেশি তা নিয়ে দ্বিমত নেই। তাঁর কথায়, ‘শিলিগুড়ি মহকুমার ত্রিহানা, পানিঘাটা, গঙ্গারাম সহ বিভিন্ন চা বাগান এলাকা থেকে তিন মাসে প্রায় ২৫-৩০ জন নাবালিকা উধাও হয়েছে। দিনকে দিন সংখ্যাটা বাড়ছেই।’

Kuhelika Barman
Kuhelika Barmanhttps://uttarbangasambad.com/
Kuhelika Barman is working as Sub Editor Since 2016. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Digital. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

Gangarampur | খাবারের গুণগত মান যাচাই করতে গঙ্গারামপুরে দোকান-রেস্তোরাঁয় অভিযান খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের

0
গঙ্গারামপুরঃ শহরে বিভিন্ন নামী রেস্তোরাঁ, মিষ্টির দোকান কিংবা বেনামি খাবারের দোকানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে চক্ষুচড়কগাছ সরকারি আধিকারিকদের। কোথাও বিষাক্ত রং সহ নিষিদ্ধ কেমিক্যাল ব্যবহার...

Nagrakata | ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রীকে আনন্দ দিতে সহায় সম্বলহীনদের সঙ্গে ৪০ তম বিবাহবার্ষিকী পালন...

0
নাগরাকাটাঃ ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রী কে নিয়ে সহায় সম্বলহীনদের সঙ্গে নিজের ৪০ তম বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করলেন নাগরাকাটার আংরাভাসা এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সমাজসেবী রাজেন...

Stampede Death | ধর্মপ্রচারের জন্য গোয়েন্দার চাকরি ছাড়েন স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলেবাবা, সৎসঙ্গে মৃত বেড়ে...

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ উত্তরপ্রদেশের হাথরসের সিকান্দরারাউ এলাকায় চলছিল ‘সৎসঙ্গ’। সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট (Stampede Death) হয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১১৬ জনের। এমনটাই জানিয়েছে...

Chopra Assault case | চোপড়ার বিধায়ক হামিদুলকে ফোন মুখ্যমন্ত্রীর, সালিশি সভা আটকাতে নির্দেশ

0
চোপড়া: চোপড়াকাণ্ডের জেরে বিধায়ক হামিদুল রহমানকে ফোন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন হামিদুল নিজে থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ফোনের কথা স্বীকার করেছেন। হামিদুল বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী আমাকে...

Chopra | আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জেসিবি গ্যাঙের ছবি প্রকাশ্যে, এখনও চাপা আতঙ্ক চোপড়ায়

0
চোপড়া: যুগলকে নিগ্রহের ঘটনায় তৃণমূল নেতা তাজমুল ওরফে জেসিবি গ্রেপ্তার হলেও এখনও চাপা আতঙ্ক রয়েছে চোপড়ায়। অভিযোগ, দাপুটে তাজমুল গ্রেপ্তার হলেও তার গ্যাঙের অনেকেই...

Most Popular