সানি সরকার, শিলিগুড়ি: পদাতিক এক্সপ্রেস যখন নিউ জলপাইগুড়ি জংশনে পৌঁছোল, তখন সূর্য মধ্যগগনে। পাঁচ ঘণ্টারও বেশি দেরি। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছেছে দার্জিলিং মেল। দ্রুত গন্তব্যে কীভাবে পৌঁছোনো সম্ভব, সেই চিন্তায় মগ্ন ক্লান্ত ও ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পড়ন্ত পর্যটন মরশুমে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠল গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে। তাঁদের পালটা যুক্তি, ‘বিকেল-সন্ধ্যায় পাহাড়ে পৌঁছে ফেরা যায় না। ফলে বাড়তি টাকা তো নিতেই হবে।’
শিয়ালদা স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের মাশুল যে তাঁদের গুনতে হল, বলছেন যাত্রীরা। যদিও এই সমস্যা সাময়িক বলে দাবি রেলকর্তাদের। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বললেন, ‘কিছু লোকাল ট্রেন বাতিল করার পরেও প্রচুর ট্রেন (Train service) চালাতে হয়েছে নির্দিষ্ট কয়েকটি স্টেশন থেকে। ফলে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। সোমবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি। কারণ, নির্দিষ্ট সময় দুপুর ২টা থাকলেও সমস্ত কাজ এদিন ১২টার মধ্যে শেষ করে দেওয়া হয়েছে।’ প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণ যে যাত্রী সুবিধার্থে, সেই কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
উত্তরবঙ্গগামী দুটি ট্রেনকে শিয়ালদার (Sealdah) পরিবর্তে কলকাতা স্টেশন থেকে চালিয়েও সমস্যা এড়ানো গেল না। ভোগান্তি হল কয়েক হাজার যাত্রীর। কলকাতা স্টেশন থেকে শনিবার রাতে ছাড়া উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস এদিন এক ঘণ্টা দেরিতে এনজেপি এবং বামনহাট স্টেশনে পৌঁছোলেও বাকি একাধিক ট্রেন অস্বাভাবিক দেরিতে চলেছে। যেমন, মধ্যরাত ২টা ১০ মিনিটে পৌঁছোনোর কথা থাকলেও এনজেপিতে তিস্তা-তোর্ষা পৌঁছোয় সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে। ফিরতি পথেও ট্রেনটি এক ঘণ্টা দেরিতে রওনা হয়েছে। হলদিবাড়িতে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের পরিবর্তে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে পৌঁছোয় দার্জিলিং মেল। এনজেপিতে পদাতিক এক্সপ্রেস যখন পৌঁছোয়, তখন দুপুর প্রায় দেড়টা। ফিরতি পথেও ট্রেনটি দেরিতে চলছে। আগরতলাগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস চলছে প্রায় ১২ ঘণ্টা দেরিতে।
এনজেপিতে (NJP) নেমে পদাতিকের যাত্রী বেলঘরিয়ার বাসিন্দা সুবিমল ঘোষ বলছেন, ‘ট্রেন যে দেরিতে ছাড়বে, তা অ্যাপের মাধ্যমে জেনে গিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা দেরি হওয়ায় দার্জিলিং যেতে গাড়িভাড়া এত বেশি চাওয়া হবে, তা ভাবতে পারিনি।’ ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ের থেকে দেরিতে ছাড়বে, সেই কথা রেলের মাধ্যমে মেসেজে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন অনেক যাত্রী। কিন্তু শিয়ালদা পৌঁছে কয়েক ঘণ্টা তাঁকে বসে থাকতে হয়েছে বলে জানালেন উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বাসিন্দা অশোক চৌধুরী।
তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘হাতেগোনা কিছু লোকাল চলছে। বিকেলের একটি ট্রেনে ওঠার পর জানতে পারি দার্জিলিং মেল দেরিতে ছাড়বে। সেসময় ট্রেন থেকে নেমে গেলে ঝুঁকি হয়ে যেত। তাই শিয়ালদায় বসে থাকতে হয়েছে।’ পরিবার নিয়ে দার্জিলিং যাওয়ার সময় তিস্তা-তোর্ষার যাত্রী কনক ভট্টাচার্য, পদাতিকের যাত্রী শান্তনু পালদের মতো বাড়তি টাকা গুনতে হয়েছে আরও অনেককে। এনজেপির এক চালকের পালটা দাবি, ‘বৃষ্টির মধ্যে সন্ধ্যায় পাহাড় থেকে খালি গাড়ি নিয়ে কে আসবে? তাই কিছু বেশি টাকা নেওয়া হল।’