মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ারের(Alipurduar) খারাপ ফল হজম করতে পারছে না তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। এবার অন্তর্ঘাতের ফলেই এমন খারাপ ফল হয়েছে বলে একেবারে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানালেন নেতারা। শনিবার কলকাতায় সেই অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর।
লোকসভা ভোটে জেলার কোন নেতার কেমন ভূমিকা ছিল, সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য নেতৃত্ব খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে। জনপ্রতিনিধি তো বটেই, এমনকি দলীয় পদে থেকেও কেউ কেউ লোকসভা ভোটে সুকৌশলে দলবিরোধী প্রচার ও নানা কার্যকলাপে মদত জুগিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগ গিয়েছে কলকাতা অবধি।
যদিও শাসকদলের জেলা সভাপতি প্রকাশ চিকবড়াইক এবিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি। হারের প্রসঙ্গে জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, ‘দল সবকিছুই খতিয়ে দেখছে। শনিবার বিকেলে কলকাতায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলিপুরদুয়ার জেলা নেতৃত্বের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে লোকসভা ভোটের ফলাফলের প্রসঙ্গটি উঠেছিল।’ ওই বৈঠকে লোকসভার প্রার্থী তথা দলের জেলা সভাপতি প্রকাশ ও দলের জেলা চেয়ারম্যান গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা উপস্থিত ছিলেন। সাংগঠনিক বিষয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়েছেন দলের গঙ্গাপ্রসাদ।
দলেরই জেলা নেতাদের একাংশের দাবি, আলিপুরদুয়ার বিধানসভা, কুমারগ্রাম ও মাদারিহাট বিধানসভা এলাকায় জেলার প্রতিষ্ঠিত দুই নেতার অনুগামীরা সুকৌশলে অন্তর্ঘাত চালিয়েছেন। লোকসভায় রাজ্যে বিজেপির ফল ভালো হলে, তাঁরা নাকি দলত্যাগের ব্যাপারেও তলে তলে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। আলিপুরদুয়ারে শাসকদলের(TMC) গোষ্ঠী লড়াই নতুন নয়। তবে প্রকাশ জেলা সভাপতি হওয়ার পর সেসব ধামাচাপা দিয়ে গত পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে সাফল্য পেয়েছিলেন। লোকসভা ভোটে যদিও আর সেই সাফল্য পেলেন না।
এবারের ভোটে শহর, শহরতলি ও কৃষি বলয়ে দলের অন্তর্কলহ প্রকাশের জয়ের পথে কাঁটা হয়েছে। শহরে কেন পিছিয়ে পড়লেন প্রকাশ? জেলার প্রতিষ্ঠিত একঝাঁক নেতার বসবাস যে শহরে, সেখানে একটি ওয়ার্ডেও শাসকদল জয়ের মুখ দেখতে পায়নি। আলিপুরদুয়ার শহরতলির গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতেও একইরকম ফল হয়েছে। শাসকদলের জনাকয়েক নেতাকে এবার ভোটের আগে বেসুরো গাইতে শোনা গিয়েছে। তাঁরা প্রকাশকে জেলা সভাপতি হিসেবে মানতে পারেননি। লোকসভা ভোটে শাসকদল প্রকাশকে প্রার্থী করায় সেই নেতারা কৌশলে শাসকবিরোধী প্রচারকেই ধুঁয়ো দিয়েছেন।
কুমারগ্রামে শাসকদলের দুই প্রভাবশালী নেতা-নেত্রী লোকসভা ভোটে হাত গুটিয়ে বসেছিলেন। তাঁদের অনুগামীরাও দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে উৎসাহ দেখাননি। মাদারিহাটে জেলার জনপ্রতিনিধি এক প্রভাবশালী নেতার অনুগামীরা দলীয় প্রার্থীর হয়ে কাজ করেননি। এসবই জেলা নেতৃত্বের ভাষায় ‘অন্তর্ঘাত’। কারা কারা এর পিছনে রয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে দল কোনও ব্যবস্থা নেয় কি না, সেদিকেই তাকিয়ে প্রকাশ-অনুগামীরা।