শিলিগুড়ি: হলমার্ক সোনার দোকানের আড়ালে আন্তর্জাতিক সোনার পাচার চক্রের(Gold Smuggling) হদিশ। আমেরিকা, সুইজারল্যান্ডের থেকে পাচার হয়ে আসা সোনা বাংলাদেশের পথ ধরে আনা হত ইসলামপুর বাজারের ওই সোনার দোকানে। এরপর সেটা চলে যেত তমলুক, কলকাতায়। শেষমেষ ফিল্মি কায়দায় গোটা চক্রের ফাঁস করল শিলিগুড়ি কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা দপ্তর (DRI)। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ওই সোনার দোকানের মালিক ভিমা সুভাষ বিভূতি সহ সোনা পাচারের সময় হাতে না হাতে ধরা পড়েছে সুরোজ শিবাজী পাওয়ার নামের এক যুবক। জানা গিয়েছে, সুরোজ তমলুকে গোল্ড পিউরিটির চেকের কাজ করে। সেখান থেকে ওই সোনা বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয় বলে জেরায় স্বীকার করেছে সুরোজ। দুইজনের কাছ থেকে মোট ৫ কেজি ১৭৩ গ্রাম সোনা উদ্ধার হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য তিন কোটিরও বেশি। ভিমার কাছ থেকে নগদ ৩৪ লক্ষ ৬৬ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার দুই ধৃতকে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা দপ্তরের আইনজীবী রতন বণিক বলেন, ‘একটা বড় আন্তর্জাতিক চক্রের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। এরসঙ্গে আরও কিছু জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। সবটাই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
ডিআরআই সুত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার রাতে গোপন সূত্রে খবর আসে, এক যুবক বাসে করে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিদেশি সোনা তমলুকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। খবর পাওয়া মাত্র ডিআরআই-এর একটি প্রতিনিধি দল ইসলামপুরে চলে যায়। যদিও ইসলামপুরে পৌঁছোনোর পর খোঁজখবর নিয়ে ওই প্রতিনিধি দল জানতে পারে, তাঁরা পৌঁছোনোর কিছুক্ষণ আগেই ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে তমলুকের বাসে ওই যুবক রওনা দিয়ে দিয়েছে। এরপরই ওই বাসের খোঁজখবর নিতে শুরু করে প্রতিনিধি দল। শেষমেষ দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর রায়গঞ্জের কাছে ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে ওই বাসটি আটকানো হয়। এরপর সুরোজ শিবাজী পাওয়ার নামের ওই যুবককে চিহ্নিত করে জিজ্ঞাসাবাদের পর স্পট সমন করা হয়। ভোরের মধ্যে শিলিগুড়ি ডিআরআই অফিসে আসতে বলা হয়। যদিও নিরাপত্তা চেয়ে সে ওই সময়ই শিলিগুড়ি ডিআরআই অফিসে আসার সিদ্ধান্ত নেয় সুরোজ। এরপর ডিআরআই অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর কাছ থেকে ৩ কেজি ৬৬০ গ্রামের তিনটে বার উদ্ধার হয়। ওই সোনার বারগুলো সে কোমড়ে বিশেষ বেল্টের পকেটে রেখেছিল। যদিও তার কাছে এই বিদেশি সোনা এল কিভাবে! সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই ইসলামপুরের রামকৃষ্ণ পল্লির জীবন মোড়ের বাসিন্দা ভিমা সুভাষ বিভূতির নাম উঠে আসে।
এরপর বৃহস্পতিবার ভোরেই ডিআরআই-এর আর একটি টিম তাঁর বাড়িতে চলে যায়। বিএসএফ-এর সহযোগিতায় বাড়ি ঘিরে নেওয়া হয়। এরপর তাঁর বাড়িতে তল্লাশি করে সবমিলিয়ে আটটি সোনার বার উদ্ধার হয়। সোনা উদ্ধার হয় ৯৩২.৮০ গ্রাম। ২৪ ক্যারেটের ওই সোনার বারগুলোতে আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ডের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়, ১৪ লক্ষ টাকা। যা পাচার করে আনা সোনা বিক্রি করেই পাওয়া বলে স্বীকার করে ভিমা। এরপর তাঁর ইসলামপুরের সোনার দোকান থেকে আরও ৫৭০ গ্রাম সোনা উদ্ধার হয়। পাশাপাশি ২০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়।
জেরায় ভিমা জানায়, আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ হয়ে পাচার করে নিয়ে আসা সোনা কলকাতা, তমলুকে সে পাঠাত। প্রসঙ্গত, ভিমা ও সুরোজ দুইজনেই মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। সুরোজ বর্তমানে তমলুক গৌরিশংকর মোড় এলাকায় থাকে। বৃহস্পতিবার রাতে যাবতীয় সোনা, টাকা বাজেয়াপ্ত করে শিলিগুড়িতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।