নাগরাকাটা: চায়ের মতো বাগিচা ফসলকে বিমার আওতায় নিয়ে আসার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার আওতায় বাগিচা ফসলকে নিয়ে আসা হতে পারে। চায়ের ক্ষেত্রে এব্যাপারে নীতিমালা ঠিক করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করতে চলেছে টি বোর্ড। জলবায়ুভিত্তিক ওই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার আওতায় আসতে পারে।
টি বোর্ডের এই উদ্যোগে সন্তুষ্ট ক্ষুদ্র চা চাষিরা (Small tea growers)। তাঁদের সর্বভারতীয় সংগঠন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিস্টা)-এর সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘আবহাওয়ার আমূল পরিবর্তনের ঢেউ চা বাগানের ওপর আছড়ে পড়ার কুপ্রভাব থেকে রক্ষা করার অন্যতম হাতিয়ার ফসল বিমা যোজনা। একথা আমরা সংশ্লিষ্ট নানা মহলে বারবার বলে আসছি। দাবির কথা ক্ষুদ্র চাষিদের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারকে একাধিকবার জানানো হয়েছিল। এনিয়ে তৎপরতাকে আমরা স্বাগত জানাই।’ জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সভাপতি রজত রায় কার্জির বক্তব্য, ‘কখনও অনাবৃষ্টি আবার কখনও অতিবৃষ্টি, গত কয়েক বছর ধরে মূলত ওই দুই কারণে ক্ষুদ্র চা চাষিদের পরিস্থিতি সঙ্গিন হয়ে উঠেছে। চা-কে ফসল বিমা যোজনার আওতায় নিয়ে আসা সময়ের চাহিদা ছিল। আশা করছি দ্রুত সেটা হয়ে যাবে।’
বর্তমানে কাঁচা পাতার ওপর সরকারি স্তর থেকে নিখরচার কোনও ফসল বিমা যোজনা নেই। কয়েকদিন আগে জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি একটি বিমা কোম্পানির সঙ্গে এব্যাপারে গাঁটছড়া বাঁধে। এজন্য বিঘা প্রতি বার্ষিক প্রিমিয়াম ৭৮৭ টাকা দিতে হয়। কয়েকশো চাষি ওই বিমার আওতায় নিজেদের নিয়ে এলেও এখনও সবাই আসতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার আওতায় চলে এলে প্রিমিয়াম দেওয়ার বিষয়টি আর থাকবে না।
গত ৯ মার্চ শিলিগুড়ির কাওয়াখালির একটি জনসভায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষুদ্র চা চাষিদের পিএম ফসল বিমা যোজনা, কিষান ক্রেডিট কার্ড ও কৃষি সিঞ্চাই যোজনায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভোটপর্ব মিটতেই ফসল বিমা যোজনা নিয়ে টি বোর্ডের অভ্যন্তরে তৎপরতা শুরু হওয়ায় সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের ইঙ্গিত মিলছে বলে মনে করা হচ্ছে। নর্থবেঙ্গল স্মল টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ভরত জয়সওয়াল বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অন্যান্য ফসলের মতো কাঁচা পাতা নষ্ট হয়ে যাওয়াও এখন ফি বছরের নিয়মে পরিণত হয়েছে। এই যোজনার আওতায় এলে দুঃস্থ চা চাষিদের অনেকটাই স্বস্তি মিলবে।’
অন্যদিকে, আইটিপিএর নিউ অ্যান্ড প্রোজেক্ট টি গার্ডেন ফোরামের আহ্বায়ক জয়ন্ত বণিকের বক্তব্য, প্রোজেক্ট বাগানগুলি এসবের আওতায় কোনওকালেই নেই। নিজেদের পকেট থেকে খরচ চালিয়ে কোনওরকমে বেঁচেবর্তে আছে। এই বিষয়টিও এবার বিবেচনা করা প্রয়োজন। নয়তো গোটা চা শিল্প উপকৃত হবে না।