রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: একেই দুর্ঘটনায় (Train Accident) মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছে ছেলে। তার ওপর প্রথম থেকেই দুর্ঘটনার যাবতীয় দায়ভার ছেলের ওপর চাপাতে চাইছে রেল। এই পরিস্থিতিতে বাড়িছাড়া থাকতে হচ্ছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত মালগাড়ির সহকারী লোকো পাইলট (Assistant Loco Pilot) মন্নু কুমারের মা-বাবাকে। মুখ লুকোনোর জায়গা পাচ্ছেন না স্ত্রীও। ঘরে তালা দিয়ে আপাতত এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে থাকছেন তাঁরা। বাইরের কেউ কথা বলতে গেলেই পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে নার্সিংহোমের বাইরে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দেখে রীতিমতো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন মন্নুর পরিবার। ছেলের নামে অভিযোগ হওয়ায় বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাঁদের, জানিয়েছেন মন্নুর মা দ্রৌপদী দেবী। তাঁর বক্তব্য, ‘আমার ছেলে নির্দোষ। ছেলেটা প্রাণে বেঁচে ফিরেছে এটাই আমাদের কাছে অনেক। এখন আর কারও সঙ্গে কোনও কথা বলতে চাই না আমরা। ছেলের সঙ্গে দেখা করতে এলে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।’
মন্নুর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে বৃহস্পতিবার খালপাড়ার নার্সিংহোমে যান নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে হাসপাতালের সিএমএস (কম্বাইন্ড মেডিকেল সার্ভিসেস)। তিনি মন্নুর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাও বলেন বলে জানা গিয়েছে। ডিআরএমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মন্নু এখন ক্লিনিকালি ফিট রয়েছেন। তবে মানসিক দিক থেকে এখনও একটু সমস্যা রয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হলেই মন্নুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শিলিগুড়ি (Siliguri) পুরনিগমের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের সূর্য সেন কলোনির একটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন মন্নু। ঘটনার পর থেকেই এলাকার সকলে মন্নুর খোঁজ নিচ্ছে পরিবারের কাছে। কিন্তু দুর্ঘটনার পর রেল সরাসরি মালগাড়ির চালক এবং সহকারী চালককে ‘দোষী’ সাজিয়ে দেওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছে মন্নুর পরিবার। তদন্তের আগে কি এভাবে কাউকে দোষী সাজিয়ে দেওয়া যায়, প্রশ্ন তুলেছেন মন্নুর প্রতিবেশীরাও।
এদিন নার্সিংহোমে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দেখতেই স্ত্রী কিরণ কুমার সোজা চলে যান মন্নুর কেবিনের দিকে। মা অন্য পথ দিয়ে একপ্রকার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। অনেক জোরাজুরিতে কয়েক সেকেন্ড কথা বলেই বেরিয়ে যান তিনি। তবে মন্নুর বাবা নিরঞ্জন কুমারকে এদিন সেখানে দেখা যায়নি। বাড়িতে গেলে সেখানেও তাঁর দেখা মেলেনি। ঘরে তালা ঝুলছিল।
এলাকায় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দেখে রেগে যান প্রতিবেশীরাও। লোকলজ্জার ভয়েই নাকি এখন অন্যত্র গিয়ে থাকছেন মন্নুর পরিজনরা, দাবি প্রতিবেশীদের। পড়শি এক মহিলা বলছেন, ‘দুর্ঘটনার পর থেকে ওঁরা এমনিতেই ভেঙে পড়েছেন। তার ওপর বাইরের লোক আসায় আরও ভয় পেয়ে গিয়েছেন। বাড়িতে থাকতেই পারছেন না।’