সানি সরকার, শিলিগুড়ি: নিউ জলপাইগুড়ি জংশন, বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে গ্যাংটকের পথে ‘শেয়ার ক্যাব’ চালুর সিদ্ধান্ত নিল সিকিমের(Sikkim) পরিবহণ দপ্তর। পাহাড়ি রাজ্যের এমন সিদ্ধান্তে পর্যটকদের(Tourist) মুখে হাসি ফুটলেও, আশঙ্কায় সমতলের পরিবহণ ব্যবসায়ী এবং গাড়িচালকরা।
এই ইস্যুতে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। শুরু হয়েছে আন্দোলনের সলতে পাকানো। সিকিমের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে রাজ্য সরকারের কাছে দরবার করা শুরু হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ট্যাক্সি অ্যান্ড প্রাইভেট কার ড্রাইভার ইউনিয়নের (এনজেপি ইউনিট) সভাপতি উদয় সাহার বক্তব্য, ‘এই ব্যবসার ওপর সমতলের কয়েক হাজার ছেলে নির্ভরশীল। সকলের পেটে লাথি পড়বে। এই সিদ্ধান্ত কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
সিকিমের পরিবহণ দপ্তরের সচিব রাজ যাদব এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করেছেন। ওই নির্দেশিকা অনুসারে, ক্যাব চলবে শেয়ারে। নিউ জলপাইগুড়ি জংশন (এনজেপি) এবং বাগডোগরা থেকে জেড সিরিজের ডিলাক্স গাড়িতে যাত্রীপিছু ভাড়া লাগবে এক হাজার টাকা। পাঁচজনের বেশি গাড়িতে নেওয়া যাবে না, সেটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
পর্যটন মরশুমে গ্যাংটক যেতে সম্পূর্ণ গাড়ি রিজার্ভ করতে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ করতে হয় পর্যটকদের। সেখানে সিকিমের গাড়িভাড়া বাবদ পাঁচ হাজার খরচ করলেই পাঁচজন শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক পৌঁছে যেতে পারবেন। তাই নিঃসন্দেহে পর্যটকদের পকেটকে স্বস্তি দিতে চলেছে সিকিমের প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। কিন্তু মুদ্রার উলটো পিঠে নজর রাখলে দেখা যাবে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সমতলের ব্যবসায় বড়সড়ো থাবা বসাতে চলেছে পড়শি রাজ্য।
দুই রাজ্যের পরিবহণ চুক্তি অনুসারে, সিকিমের গাড়ির চাকা সমতলের সর্বত্র গড়ালেও, এখানকার গাড়ি পাহাড়ের নির্দিষ্ট গণ্ডি অতিক্রম করতে পারে না। অনেকেই কটাক্ষ করে বলেন, ইদানীংকালে সিকিমের গাড়ি শিলিগুড়ির পাড়ায় পাড়ায় ঢুকে পড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায় ভাটা পড়ছে সমতলের পরিবহণ ব্যবসায়ীদের। উল্লেখ্য, পবনকুমার চামলিং সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন পরিবহণ চুক্তি নিয়ে তাঁর সঙ্গে উত্তরকন্যায় বৈঠক করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেসময় চুক্তির সংশোধন এবং সংযোজনের কথা বলা হলেও বাস্তবে কিছু হয়নি। ফলে সিকিমের গাড়ি অনায়াসে সমতলে চলাচল করতে পারলেও, পাহাড়ি রাজ্যে সেই ছাড়পত্র পাচ্ছে না সমতলের যানবাহন। এমনকি মাঝেমধ্যে সেখানে পুলিশি হেনস্তার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ চালকদের।
এমন পরিস্থিতিতে সিকিমের নতুন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না সমতলের পরিবহণ ব্যবসায়ী এবং চালকরা। বাগডোগরা ট্যাক্সি ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিলন সরকারের কথায়, ‘সিকিমে যাত্রী পৌঁছে দিয়ে আমাদের অধিকাংশ সময় খালি গাড়ি নিয়ে ফিরতে হয়। এখান থেকে ওরা যাত্রী নিয়ে গেলেও এতদিন কিছু বলিনি। কিন্তু এখন আর চুপ করে থাকব না। বিষয়টি নিয়ে অন্য ইউনিয়নগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। বিষয়টি আমরা এইচএইচটিডিএনকে জানিয়েছি। সহমতের ভিত্তিতে সকলে মিলে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের (এইচএইচটিডিএন) সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল আশ্বাস দিয়েছেন, ‘সঠিক জায়গায় আমরা সঠিক বক্তব্য তুলে ধরব।’ রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী ফোন না ধরায় তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।