গয়েরকাটা: গা ঘেঁষে বিনোদন পার্ক গড়তে গিয়ে নদীর স্বাভাবিক গতিকে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন বানারহাট ব্লকের দক্ষিণ সাঁকোয়াঝোরা গ্রামে কালুয়া নদীপাড়ের বাসিন্দারা। সেচ দপ্তরকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে পাড় বাঁধাই করে নদীর গতিকে বাধা দেওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি, একেবারে নদীর পাড়ে বিশাল এলাকাজুড়ে জলাশয় তৈরি করার ফলে বানভাসি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এলাকায়। শাসকদলের নেতাদের একাংশের মদতে ধূপগুড়ির কয়েকজন ব্যবসায়ী ওই প্রকল্পের কাজ চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। মাসতিনেক ধরে বিশাল এলাকায় জলাশয় খনন, বোল্ডার দিয়ে পুকুর ও জলাশয়ের পাড় বাঁধানোর কাজ হলেও তা কীভাবে স্থানীয় প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গেল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নেতা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে ‘সেটিং’ হওয়ার জেরেই একাধিক সরকারি দপ্তরের নির্দেশিকা ও নিয়মকে কার্যত শিকেয় তুলে দিনের পর দিন এই কাজ বহালতবিয়তে হয়েছে। সেচ দপ্তরের নিয়মে নদীর পাশে কোনও ব্যক্তিগত জমিতে কোনওরকম নির্মাণকাজ করতে হলেও দপ্তরের অনুমতি নেওয়া আবশ্যিক। তাছাড়া কেউ নিজের ইচ্ছেমতো নদীর পাড় বাঁধানো কিংবা বাঁধ নির্মাণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে তাও মানা হয়নি। সেচ দপ্তরের মুখ্য বাস্তুকার (উত্তর–পূর্ব) কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, ‘সেচ দপ্তরের অনুমতি না নিয়ে নদীর গা ঘেঁষে এভাবে জলাশয় খনন বা পুকুর করা উচিত নয়। এব্যাপারে আমরা একটি নির্দেশিকা জারি করেছি। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখব।’
নদীর স্বাভাবিক গতি এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যে জাতীয় নদী কমিশন এবং গ্রিন ট্রাইবিউনালের নির্দেশিকাও অমান্য হয়েছে এই নির্মাণকাজে। উপরন্তু পাড় বাঁধাতে আনা বোল্ডারবোঝাই ডাম্পারের দাপটে সদ্যনির্মিত প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার বিটুমিন রোডও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ নদীর পাড়ে আর্থমুভার নামিয়ে চলছে নির্মাণকাজ৷ টাকা এবং ক্ষমতায় বলীয়ান নির্মাণকারীদের দাপটে মুখ বুজে থাকলেও সম্প্রতি নির্মাণকাজের বোল্ডারবোঝাই ডাম্পারের চাপে এলাকার একটি কালভার্টের অ্যাপ্রোচ রোড ধসে যাওয়ায় এলাকাবাসীর ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসে। যৌথ প্রকল্প হলেও বিশাল ওই নির্মাণকাজের মূল অংশীদারি ধূপগুড়ির এক বড় সুপারি কারবারির স্ত্রীর নামে। এছাড়াও এতে ভাগ রয়েছে ধূপগুড়ির আরও এক-দুজনের। স্ত্রীর নামে গড়া প্রকল্পের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক গুরুতর অভিযোগ নিয়ে ব্যবসায়ী শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘আমরা কোনও বেআইনি কাজ করিনি৷ ওখানে প্রকল্প হলে অনেকের রোজগার হবে। কেউ কেউ হিংসে করে মিথ্যে অভিযোগ করছেন।’ স্থানীয় বাসিন্দা প্রদ্যুৎ রায় বলেন, ‘গাড়িতে করে বোল্ডার নিয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের এখানে একটি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুনেছি পার্ক বানানোর জন্য এই পাথর প্রতিদিন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এভাবে নদীর পাশে জলাশয় তৈরি হলে বর্ষায় এলাকা বানভাসি হতে পারে।’
তৃণমূল পরিচালিত বানারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি অরবিন্দ রায় সরকার বলেন, ‘ওই নির্মাণকাজ নিয়ে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠছে। পুরো বিষয়টির তদন্ত হবে। কোনওরকম বেআইনি কাজ বরদাস্ত করা হবে না।’