রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: সবজির গাড়িতে চাপিয়ে বিহার সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় মদ পাচার হচ্ছে। আর এই কারবার চালিয়ে একটি চক্র লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করছে। শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে এই কারবার নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নিয়ন্ত্রিত বাজারের সচিব অনুপম মৈত্র বলেছেন, ‘আমাদের নিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে সবজির সঙ্গে মদ পাচার হচ্ছে এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে নেই। এমন অভিযোগও আমি পাইনি।’ শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, এমন কোনও অভিযোগ নেই। তবুও নিয়ন্ত্রিত বাজারে নজর রাখা হবে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম বড় নিয়ন্ত্রিত বাজার শিলিগুড়িতে রয়েছে। এখান থেকে উত্তরবঙ্গ তো বটেই বিহারেও প্রচুর সবজি, ফল প্রতিদিন যাচ্ছে। অভিযোগ, সবজি এবং ফলের গাড়িতেই দেশি এবং বিদেশি মদ পাচার করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে ঘোষপুকুরে পুলিশ একটি সবজির গাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিদেশি মদ উদ্ধার করেছিল। গত মাসে পাঞ্জিপাড়াতেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। নিয়ন্ত্রিত বাজার সূত্রের খবর, বাজারে প্রতিদিন গাড়ি ভর্তি করে বিদেশি মদ ঢুকছে। এর মধ্যে কিছু ভেজাল মদও থাকতে পারে বলে সন্দেহ। বাজারের একাংশ এবং শিলিগুড়ি ও সিকিমের কয়েকজনের মিলিত সিন্ডিকেটই এই কারবার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।
সূত্র জানাচ্ছে, রায়গঞ্জ, ইসলামপুর, মালদার গাড়িগুলি সবজি নিতে রাতের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত বাজারে ঢুকে যায়। রাতে আবার মদবোঝাই গাড়িও বাজারে ঢুকছে। গাড়িতে সবজিবোঝাই করার সময় মদ ভর্তি কার্টন ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় দামি মদের বোতল মিষ্টি কুমড়ো, তরমুজ কেটে ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গাড়িতে ৫০০টি কুমড়ো বা তরমুজ থাকলে তার মধ্যে ১০০-১৫০টির মধ্যে মদের বোতল ভরা হচ্ছে।
নিয়ন্ত্রিত বাজারে কর্মরত একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বছর খানেক ধরে এখানে এই কারবার চলছে। বিহারে মদ নিষিদ্ধ হওয়ায় সেখানে চোরাপথে প্রচুর মদ ঢুকছে এবং দ্বিগুণ, তিনগুণ দামে তা বিক্রি হচ্ছে। ফলে সিকিম এবং উত্তরবঙ্গ থেকে মদ বিহারে পাচার করে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছে চক্রটি। চক্রের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত বাজারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অনেকেই যুক্ত রয়েছে বলে খবর। অভিযোগ, মদ নিয়ে গাড়িগুলি বাজারে ঢোকার সময় পকেটে ১০০০-১৫০০ টাকা গুঁজে দিলেই কাজ হাসিল। গাড়ির টোল নেওয়া বা জিনিসপত্র পরীক্ষা করার কোনও প্রয়োজনই হচ্ছে না। সম্প্রতি ঘোষপুকুরে পুলিশ এমনই একটি সবজিবোঝাই গাড়িকে আটক করে তল্লাশি চালায়। সেই গাড়ি থেকে মিষ্টি কুমড়োর মধ্যে মদের বোতল পাওয়া গিয়েছিল।
সূত্রের খবর, শাসকদলের শিলিগুড়ির সেবক রোডের এক যুব নেতা এই চক্রের মূলে রয়েছেন। তাঁর কথাতেই এখানে সমস্ত কারবার বিনা বাধায় চলছে। পুলিশকর্তাদের অনেকেই বলছেন, পাচারের বিষয়টি অজানা নয়। কিন্তু সমস্ত সবজির গাড়ি দাঁড় করিয়ে তল্লাশি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। একেকটি সবজির গাড়ি তল্লাশিতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। সেই সময় গাড়ি আটকে রাখলে সবজি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যা নিয়ে অশান্তিও হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট খবর পেলে তবেই পুলিশ সেই গাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে। এব্যাপারে তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষের বক্তব্য, ‘এবিষয়ে কিছু জানা নেই, খোঁজ নেব।’