রায়গঞ্জ: রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আজও শোনা যায় অভিনব পায়রা দৌড়ের কথা। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে মালদা জেলায় পায়রা দৌড়ের চল আছে। রায়গঞ্জ শহরে আগে মাঝেমধ্যে পায়রা দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলেও এখন একেবারেই সেই প্রতিযোগিতা চোখেই পড়ে না। তবে রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগর কালিবাড়ির বাসিন্দা পেশায় সোফা মিস্ত্রি রাজকুমার মণ্ডল(৪২) সেই ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখেছে। বছরে দুই থেকে তিন বার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন তিনি। সেজন্য কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে বিচারকরা আসেন সেই প্রতিযোগিতায়।
মালদা জেলার বাসিন্দা রাজকুমার মণ্ডল পেশার কারণে এখন রায়গঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা। বেশ কয়েক বছর হল মালদা থেকে রায়গঞ্জে চলে এসেছেন। বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির পায়রা পোষেন। তবে পেশা যেহেতু তার সোফা তৈরি, তাই মাঝেমধ্যে বাইরে চলে যেতে হয় তাকে। সেই সময় সমস্ত দায়িত্ব সামলাতে হয় স্ত্রী ঝুমা মণ্ডলকে। বাড়িতে রয়েছে প্রায় ১৫ প্রজাতির ১০০ পায়রা। প্রতিটি পায়রা পোষ মানানো। বাড়ির ছাদে পায়রাদের জন্য বিভিন্ন মাপের খাঁচা রয়েছে। মাঝেমধ্যে রাজকুমার তাদের প্রশিক্ষণের জন্য খাঁচার বাইরে নিয়ে আসেন।
রাজকুমার বাবু জানান, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে রায়গঞ্জে পায়রা পোষার পাশাপাশি পায়রা দৌড়ের আয়োজন করেন। হোমার পায়রা নিয়ে শুরু করেন প্রথম পায়রা দৌড়। এই দৌড় কিন্তু ঘোড়া দৌড়ের মতো নয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পায়রা কোনও মাঠে নয়, তারা উড়ে যায় ভিন দেশে বা ভিন রাজ্যে। আট থেকে দশ ঘণ্টা পর আবার ফিরে আসে নিজের জায়গায়। যেখান থেকে দৌড় শুরু হয় সেখানেই চলে আসে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী পায়রাদের রং করা হয়।
রায়গঞ্জে আজ থেকে আট-দশ বছর আগে পায়রা দৌড়ে অংশ নিতেন বেশ কয়েকজন। কিন্তু নতুন প্রজন্ম আগ্রহী না হওয়ায় তা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। রাজকুমার মণ্ডল রায়গঞ্জের সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতেই প্রতি বছর দুই থেকে তিনবার পায়রা দৌড়ের আয়োজন করেন। দৌড়ের জন্য একমাত্র রেসিং হোমার পায়রাদেরই ট্রেনিং দেওয়া হয়। রেসিং মাদ্রাস হোমার পায়রা জন্মানোর সাত দিনের মধ্যে মেটালের রিং পরিয়ে দেওয়া হয় সদ্যোজাতের পায়ে। পায়রাকে প্রথমে চেনানো হয় তার নিজের বাসস্থান। তার পর ধীরে ধীরে তার আশপাশের কিছু জায়গা। মাদ্রাস হোমার পায়রা এক বার জায়গা চিনে গেলে সহজে ভুলে যায় না। এদের স্মৃতিশক্তি প্রখর। যেখানেই পাঠানো হোক, ঠিক ফিরে আসে বাসস্থানে।
রাজকুমার বাবুর স্ত্রী ঝুমা মণ্ডল বলেন, ‘এত বিপুল পরিমাণ পায়রা দেখভাল একার পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই আমাকেও হাত লাগাতে হয়। তাদের খাবার দেওয়ার পাশাপাশি ওষুধপত্র দিতে হয়। স্বামী প্রতিবছর পায়রা দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বলেই পরিশ্রম করতে হয়।‘ স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক উত্তম মিত্র বলেন, ‘এত পরিশ্রমের পরেও রাজকুমার ও তাঁর স্ত্রী ঝুমা পায়রাদের যেভাবে যত্ন ও প্রশিক্ষণ দেয় তা ভাবা যায় না। মাঝেমধ্যে দৌড়ের আয়োজন করে বলেই এলাকার বাচ্চারা পায়রা দৌড় দেখতে পায়।‘
উল্লেখ্য, আমেরিকান ফ্রাঙ্কটাইল, টেল মার্ক, আমেরিকান শ্যাটেল, ফিল ব্যাক সহ একাধিক প্রজাতির পায়রা পোষেন রাজকুমার। দৌড় হয় তিন থেকে এগারো পায়রার। দৌড়ের পায়রাদের নাম রাখা হয় তাদের গতির সঙ্গে মিলিয়ে। যেমন, এফ-টেন, লাকি থার্টিন, ফার্স্ট ফরোয়ার্ড ইত্যাদি।