মিঠুন ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: তীব্র অচলাবস্থা চালু হয়েছে শিলিগুড়ির (Siliguri) ফুলবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে। বর্তমানে পরিষেবা নিতে আসা মানুষ অসুবিধের কথা কাকে জানাবেন সেটাই বুঝতে পারছেন না। কারণ এই মুহূর্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ নেই এই গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে।
কেন হল এমন অবস্থা?
গ্রাম পঞ্চায়েত (Fulbari Gram Panchayat) প্রধান সুনিতা রায় চক্রবর্তী গত মঙ্গলবার কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন। মাতৃকালীন ছুটি না নিলেও এই মুহূর্তে তাঁর (Panchayat Pradhan) পক্ষে অফিস করা কার্যত অসম্ভব। পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েতি আইন মোতাবেক, পাঁচদিনের বেশি সময় প্রধান ছুটিতে থাকলে উপপ্রধানকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সেরকম কিছু করা হয়নি। এছাড়াও আরও একটি সমস্যা রয়েছে এই গ্রাম পঞ্চায়েতে। কয়েক মাস আগে গ্রাম পঞ্চায়েতের এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট অনিরুদ্ধ ঘোষ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন। সেই সময় তাঁর কার্যভার সামলেছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব জেসমিন পারভিন। বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর প্রায় দেড় মাস আগে অনিরুদ্ধ অফিসে যোগ দিলেও তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ঠিক সেই সময় জেসমিনের বিরুদ্ধে টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। জেলাশাসকের নির্দেশে তাঁকে অন্য ব্লকে বদলি করে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপর থেকেই ছুটিতে চলে যান জেসমিন। এখনও পর্যন্ত এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। ফলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি আধিকারিক, কেউই এই অফিসের দায়িত্বে নেই।
সোমবার অফিসে গিয়ে পরিষেবা নিতে আসা মানুষকে নাজেহাল হতে দেখা গেল। তীব্র নিকাশি সমস্যায় ভুগছে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বহু পাড়া-গ্রাম। সোমবার এই বিষয়ে উত্তরবঙ্গ সংবাদে খবরও প্রকাশিত হয়। আর এদিনই হরিপুর এলাকা থেকে বাসিন্দাদের একটি দল নিকাশি সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে চিঠি দিতে আসেন। সেই দলে থাকা প্রীতি মণ্ডল, দূর্গা মণ্ডলরা জানান, রাস্তায় জল জমে রয়েছে। ঘরে জল ঢুকে পড়ছে। টোটো, বাইক চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সুপ্রিয়া বিশ্বাসকে বলতে গেলেও লাভ হয় না। বাড়িতেই পাওয়া যায় না তাঁকে। উলটে পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী গেট আগলে দাঁড়িয়ে স্ত্রী বাড়িতে নেই বলে দেন। সেই কারণে সমস্যার কথা জানাতে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে এসেও বিপাকে পড়েন তাঁরা। এছাড়াও আরও বেশ কিছু নাগরিককে এদিন পরিষেবা নিতে এসে বিপাকে পড়তে দেখা গিয়েছে।
কিন্তু কী করে চলছে পঞ্চায়েত অফিস?
প্রধানের আগে থেকে সই করে রেখে যাওয়া রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট, ইনকাম সার্টিফিকেট নথি-তথ্য দেখে প্রদান করছে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মী। পুরো বিষয়টিকেই অনৈতিক বলে দাবি করেছেন অনেকে। এদিন পঞ্চায়েত অফিসে উপস্থিত ছিলেন উপপ্রধান আনন্দ সিনহা। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আধিকারিকদের কাজের বিষয়ে কিছু বলব না সেটা প্রশাসনিক ব্যাপার। প্রধানের মাতৃত্বকালীন বিষয় আছে। তবে উনি যদি নিজে থেকে ছুটি না নেন সেক্ষেত্রে আমি তো জোর করে কিছু বলতে পারি না।’ এদিন বাসিন্দাদের পঞ্চায়েত অফিসে আসার বিষয়টি জানতে পেরে অফিসে ছুটে আসেন হরিপুরের পঞ্চায়েত সদস্য সুপ্রিয়া নিজেও। এরপর তিনিও অচলাবস্থা কাটানোর পক্ষে মন্তব্য করেন।