Sunday, July 7, 2024
Homeকলামহাতে হুমকি ছাড়া কোনও অস্ত্র নেই রাজ্যপালের

হাতে হুমকি ছাড়া কোনও অস্ত্র নেই রাজ্যপালের

 

  • আশিস ঘোষ

কত কাণ্ড রাজভবনে! কে কোন দিন ভেবেছিল রোজ খবরের কাগজের পাতায় পাতায় রাজ্যের সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের লড়াই দেখতে হবে। এমন ঝামেলা আগে যে হয়নি তা নয়। তবে এখন তা যে পর্যায়ে নেমেছে তা বোধহয় কেউ ভাবতেও পারেনি। তলানির চেয়েও তলায় কিছু থাকলে এটা সেই স্তরের। জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত।

আগেকার রাজ্যপাল, অধুনা উপরাষ্ট্রপতি, জগদীপ ধনকরের সময়ে তৃণমূল সরকারের সঙ্গে লড়াই বেশ জমেছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ‘উদ্ধার’ করতে খোদ রাজ্যপালের সটান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হওয়া থেকে যার সূত্রপাত। তারপর যত বেলা গড়িয়েছে, তিক্ততা ততই বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। রোজ রাজভবন থেকে হুমকি দেওয়া বিবৃতি বলতে গেলে গা-সওয়া হয়ে গিয়েছিল আমাদের। তৃণমূলের প্রচারে রাজ্যপাল হয়ে উঠলেন পদ্মপাল, বিজেপির দালাল। বস্তুত, দেখাও গেল কথায় কথায় ধনকরের কাছে গিয়ে বঙ্গ বিজেপির নকড়া-ছকড়ার নেতারা মোটামুটি রাজভবনকে নিজেদের দপ্তর বানিয়ে তুলেছেন।

‘তারপর কোথা হইতে কী হইয়া গেল, ধনকর দিল্লি গিয়ে উপরাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেন এবং তৃণমূল ভোটাভুটির সময় গরহাজির থাকল। কারণ বিরোধী প্রার্থী বাছাইয়ের সময় তাদের পরামর্শ নেওয়া হয়নি। সে যাই হোক, তৃণমূল ভাবল যাক, আপদ বিদায় হল। কথায় কথায় পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া বোধহয় মিটল। আগে রেড রোডের প্যারেডে তাঁকে ভালো করে টিভিতে দেখানো হয়নি কেন থেকে শুরু করে বিধানসভায় তিনি ভাষণে কী বলবেন তা নিয়ে বখেড়ার অন্ত ছিল না। ধনকর দিল্লিবাসী হতেই কোথায় স্বস্তির শ্বাস নেবে তৃণমূল, তা নয় এসে পড়লেন সিভি আনন্দ বোস।

যে কেউ নন, রীতিমতো কেওকেটা। সাতাত্তর ব্যাচের এই আমলা যে মোদিজির বিশেষ স্নেহভাজন কানাঘুষোয় সে খবরও এসে পৌঁছাল হুগলি নদীর তীরে। বিশেষ সাহিত্যরসিকও বটে তিনি। খান সত্তর বই লিখেছেন। তার মধ্যে আছে উপন্যাস, ছোট গল্প, মাতৃভাষা ছাড়াও আরও খান তিনেক ভাষায়। সংস্কৃতির পীঠস্থানে কেন্দ্রের উপযুক্ত প্রতিনিধিই বটে। তিনি শুরুও করেছিলেন আমলাসুলভ হিসেবি চালে। এ রাজ্যে তিনি নেহাত নতুন নন। প্রথম জীবনে জলপাইগুড়িতে ব্যাংককর্মী ছিলেন। এমনকি পরে এ রাজ্যে তৃণমূলের ‘হিংসা’ দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দলের হয়েও এসেছিলেন তিনি।

গোড়ায় স্লেট চকখড়ি হাতে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। বাংলায় তাঁর হাতেখড়ি হল৷ তিনি বাংলা শিখবেন। কতটা শিখে উঠেছেন কে জানে। তবে আর পাঁচটা প্যাঁচপয়জারে তিনি ক্রমেই দড় হয়ে উঠলেন অচিরেই। গোলমাল দেখতে জেলায় জেলায় ঘুরতে শুরু করলেন। সেইসঙ্গে গরম গরম বিবৃতির বহর। তিনি চুপ করে বসে থাকবেন না। শেষ দেখে ছাড়বেন ইত্যাদি ইত্যাদি। বহু ক্ষেত্রে বিজেপির থেকেও চড়া সুরে। ফলে তাঁর নামেও তৃণমূল বিজেপির দালাল তকমা লাগিয়ে দিল। বঙ্গপ্রেমী থেকে হয়ে উঠলেন প্রতিপক্ষ। নেতাজির নাম থেকে বোস শব্দটা ধার করা এই মালয়ালিও আস্তে আস্তে চলে এলেন খবরের শিরোনামে।

তাঁর হুংকার ফলবতী হয়নি, হওয়ার কথাও ছিল না। ক্রমেই বলবান হয়ে নবান্নে জাঁকিয়ে বসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত একটা সরকারের সঙ্গে লড়ার মতো তেমন কোনও অস্ত্র সংবিধানই দেয়নি তাঁকে। বড়জোর রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের জন্য তদ্বির করতে পারেন তিনি। ৫৭ বছর আগে ধরমবীরের পর আর কেউ তা করেননি। সেই সঙ্গে আনন্দ বোস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে শুরু করলেন তাঁর আচার্যের ক্ষমতা দেখানো। একটা অভূতপূর্ব অচলাবস্থা চতুর্দিকে। রাজ্য সরকারের সমান্তরাল একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালানো শুরু হল। সে অবস্থা চলছে এখনও। এপি শর্মার পর এমন অবস্থা এই প্রথম।

ঢালতলোয়ার না থাক তাঁর যে একটা শিখণ্ডী আছে তা বোঝা গেল অতি সম্প্রতি। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অপরাধেরই কোনও তদন্ত করা যাবে না। অথচ তিনি চাইলে যে কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। অতীতে এমন কাণ্ড কখনও হয়নি। হতে চলেছে এবার। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে চলেছেন বলে নিজেই ঘটা করে জানিয়েছেন। যা নিয়ে এত কাণ্ড সেই যৌন লাঞ্ছনা নিয়ে! কিছুই করা যাবে না, এমনই তাঁর রক্ষাকবচ।

আর এসব নিয়ে তোলপাড় হতেই পুরো বিবাদটা হয়ে গেল নিছকই ব্যক্তিগত। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান যে এমন ধরনের অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু হবেন তাই বা কে ভেবেছিল! এখন তা আড়াল করতে তাঁর সব রাগ গিয়ে পড়েছে উপনির্বাচনে জেতা দুই বিধায়কের ওপর। কোথায় তাঁদের শপথ হবে তা নিয়ে স্পিকারের সঙ্গে চলছে তাঁর ইগোর লড়াই। মাঝে পড়ে দুই বিধায়ক প্ল্যাকার্ড হাতে বসে রয়েছেন বিধানসভায়।

সংবিধান রাজ্যপালের ক্ষমতা বেঁধে দিয়েছে। তিনি কী কী করতে পারেন বলা আছে তাও। একটা নির্বাচিত রাজ্য সরকার আর কেন্দ্রের নিযুক্ত একজন আমলার ক্ষমতার সীমানা লেখা রয়েছে পরিষ্কার। তিনি সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে পারেন না। শুধু এ রাজ্যই নয়, দিকে দিকে বিরোধীদের সরকারকে পদে পদে বিব্রত করাই একালে রাজ্যপালদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আনন্দ বোস সেই কাজই করছেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে এতদিন নানা রকমের হুমকি দেওয়ার পর এখন হঠাৎই তাঁর মনে হয়েছে এখানকার অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। তাই তিনি দিল্লি গিয়ে নির্মলা সীতারামনের কাছে নালিশ জানিয়ে এসেছেন।

সুকুমার রায়ের লড়াই ক্ষ্যাপা ছড়াটা মনে পড়ল। ‘সাত–জার্মান, জগাই একা, তবুও জগাই লড়ে।’ নিধিরাম সর্দার লড়েই চলেছেন।

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

চপ-সিঙারার বদলে খেতে পারেন স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস, জানুন কী কী…

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: বাঙালির খাবারের প্রতি টান অদম্য। আর তাতে যদি হয় চপ, সিঙারা আর তেলে ভাজা তবে তো আর কথাই নেই। কোলেস্টেরল,...

Satyendar Jain | আরও বিপাকে জেলবন্দি সত্যেন্দ্র! ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আপ নেতার বিরুদ্ধে

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: জেলবন্দি অবস্থাতেই আরও বিপাকে পড়লেন আপ নেতা তথা দিল্লির প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন (Satyendar Jain)। তাঁর বিরুদ্ধে ৭ কোটি টাকা...

Alipurduar Hospital | জেলা হাসপাতালে হচ্ছে আলাদা অক্সিজেন প্ল্যান্ট, হাইব্রিড সিসিইউ চালুর তোড়জোড়

0
অভিজিৎ ঘোষ, আলিপুরদুয়ার: অবশেষে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে (Alipurduar Hospital) শুরু হতে চলেছে হাইব্রিড সিসিইউ (Hybrid CCU)। বছর দুয়েক আগে হাইব্রিড সিসিইউয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি...

রথের দিন সন্ধ্যায় বাড়িতেই বানিয়ে নিন জিলিপি, জানুন রেসিপি…

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: রথের দিন জিলিপি খাবে না, এরম বাঙালি বোধহয় খুব কমই আছে। রথের মেলায় গিয়ে একটু জিলিপির দোকান আর লটকার দোকানে...

Alipurduar | পরিদর্শন এড়াচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা, মাদারিহাটে নদীভাঙনে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা

0
মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, রাঙ্গালিবাজনা: আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের খয়েরবাড়ি ও রাঙ্গালিবাজনায় একের পর এক মহল্লা গ্রাস করে চলেছে মুজনাই নদী (Mujnai River)। ১৬ জুন...

Most Popular