মিঠুন ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: চোপড়ায় ছায়া এবার ফুলবাড়িতে (Fulbari)। পরকীয়ার অভিযোগে একই কায়দায় সালিশি সভা ডেকে মহিলা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মারধরের অভিযোগ উঠল (Assault Case)। এক্ষেত্রেও ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। স্থানীয় এক পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী ঘটনার মূল মাথা বলে অভিযোগ। শনিবার রাতে এই ঘটনার পর অপমানে মহিলা আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার।
সোমবার সন্ধ্যায় নিউ জলপাইগুড়ি থানায় (NJP Police Station) এই মর্মে লিখিত অভিযোগও করেছেন মৃতার ভাই। তাঁর অভিযোগ, ‘আইন হাতে তুলে নিয়ে কাউকে মারধর করা যায় না। অপমান সহ্য করতে না পেরে দিদি আত্মঘাতী হয়েছেন। যদিও তুমুল মারধর করায় আগেই ও আধমরা হয়ে গিয়েছিল।’ পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় দুজনকে রবিবার গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হয়েছিল। বর্তমানে তারা জেল হেপাজতে রয়েছেন।
ফুলবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা এক তরুণের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ওই তরুণীর। পরবর্তীতে অন্য এক তরুণের সঙ্গে তিনি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। প্রেমের টানে দিনদশেক আগে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান। সেইসময় নিউ জলপাইগুড়ি থানায় তাঁর নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করেন স্বামী। ঘটনার আটদিন পর গত শনিবার হদিস মেলে তাঁর। এরপর স্থানীয় কিছু মাতব্বর মিলে এলাকায় সালিশি সভা ডাকেন। তরুণীর স্বামী বলছেন, ‘তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা মালতী রায়ের স্বামী শম্ভু বর্মন বলাতেই গ্রামবাসীর সামনে স্ত্রীকে নিয়ে আসা হয়। এরপর গ্রামবাসী বিচারসভা বসায়। সেখানেই মারধর করা হয় স্ত্রীকে।’
স্ত্রী ফিরে আসায় সবকিছু মিটমাট করে নিয়ে সংসার করতে রাজি হয়েছিলেন স্বামী। কিন্তু মাতব্বররা তাতে সায় দেননি। পরকীয়া করার অভিযোগে সালিশি সভার মাঝেই বেধড়ক মারধর শুরু করা হয় তরুণীকে। স্ত্রীকে বাঁচাতে এসে মার খান স্বামী ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও। একই এলাকায় কিছুটা দূরে তরুণীর বাপের বাড়ি। সেই কারণে সালিশি সভায় হাজির হয়েছিলেন তাঁর বাড়ির লোকেরাও। কিন্তু সকলের সামনেই তরুণী ও অন্যদের মারধর করতে থাকে নীতিপুলিশরা। মূল অভিযুক্ত শম্ভু সেইসময় সালিশি সভায় উপস্থিত না থাকলেও তাঁর অঙ্গুলিহেলনেই সবটা হয়েছে বলে অভিযোগ। শম্ভু অবশ্য মারধরের পক্ষেই মন্তব্য করেছেন সংবাদমাধ্যমে। তাঁর যুক্তি, ‘ওরা আমার অফিসে এসেছিল, আমি বলেছি এখানে কোনও সালিশি হবে না। এরপর অন্য জায়গায় লোকজন জড়ো হয়। সেখানে প্রতিবেশীরা ঝামেলা করে। ওই মহিলা আগে এসব কারবার করেছে। সেই কারণে কেউ দু-একটা চড়থাপ্পড় মারতেই পারে।’
তাঁর স্ত্রী স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা মালতী আবার নিজের পিঠ বাঁচাচ্ছেন। তাঁর সাফাই, ‘ঘটনার সময় আমি ছিলাম না।’
তরুণীর পরিবারের দাবি, শনিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনার পর সকলেই বাড়িতে চলে যায় চুপচাপ। এরপরই অ্যাসিড জাতীয় কিছু খেয়ে তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি নজরে আসতেই তাঁকে প্রথমে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও আশঙ্কাজনক অবস্থা থাকায় তাঁকে সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করা হয়। চিকিৎসায় সাড়া না দিয়ে ওই রাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার সন্ধ্যায় ময়নাতদন্তের পর দেহ এলাকায় নিয়ে আসা হয়।
ঘটনায় সুর চড়াতে শুরু করেছে বিরোধীরা। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। তাঁর শাসনকালে সবচেয়ে বেশি মহিলা নির্যাতিত হচ্ছেন। অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। সালিশিতে ডেকে মারধর করা চরম অন্যায়।’
প্রতিবেশীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে মহিলার স্বামী তাঁকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছিলেন, সেখানে কেন অন্যরা মাতব্বরি করতে গেল। দেশে আইন বলে কি কিছু নেই! পুলিশ অবশ্য এই ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছে।