উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় করমণ্ডল দুর্ঘটনায় মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছিল ওডিশার বালেশ্বর। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ২৭৮ জন যাত্রীর। দেহ রাখার জায়গা নেই হাসপাতালের মর্গে। বাধ্য হয়ে স্থানীয় এক স্কুলের মেঝেতে রাখা হয়েছে সারি সারি দেহ। আর এই দেহের মধ্যেই ফিরে এল প্রাণ। উদ্ধারকারী এক ব্যাক্তির পা টেনে ধরল একটি রক্তমাখা হাত। ভয়ে বুক কেঁপে উঠল তাঁর। ক্ষীণ কণ্ঠে জল চাইল সাদা কাপড়ে জড়ান দেহ। জীবন বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করেছিল। উদ্ধারকারীরা বুঝে যায় সে মৃত নয় জীবিত। এরপর ওকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাঁর দু’পা হারিয়ে সে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৭৮ জনের। হাসপাতালের মর্গে দেহ রাখার জায়গা হচ্ছে না। এই অবস্থায় বিভিন্ন স্থানীয় স্কুলে দেহ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এরকমই এক স্কুলের কক্ষে পড়ে থাকা দেহগুলি হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যেতে গিয়ে আঁতকে উঠেছিলেন এক উদ্ধারকর্মী। সার দিয়ে পড়ে থাকা লাশের স্তূপের মধ্যে, আচমকা কে তাঁর পা চেপে ধরল? তাকিয়ে দেখেন একটি হাত। আর একটা ক্ষীণ কন্ঠ, ‘আমি বেঁচে আছি, একটু জল দিন।’ এভাবেই মৃতদের মধ্য থেকে ‘বেঁচে উঠেছিলেন’ ৩৫ বছরের রবিন নাইয়া। উত্তর ২৪ পরগণার চরনেখালি গ্রামের বাসিন্দা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন তিনি। শুক্রবার রাতের দুর্ঘটনার পর একটি ট্র্যাকের উপর সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। উদ্ধারকারীরা তাঁকে মৃত ভেবে বালেশ্বরের ওই স্কুলের কক্ষে কয়েকশ মৃতদেহের সঙ্গে সাদা কাপড়ে মুড়ে রাখা হয়েছিল তাঁকে।
উদ্ধারকারী সেই ব্যাক্তি প্রথমে তিনি বিশ্বাসই করতে পরেননি, অতজন মৃতের মধ্যে জীবিত কেউ থাকতে পারেন। কয়েক মুহুর্ত থমকে গিয়েছিলেন তিনি। প্রথমে, কে তাঁর পা চেপে ধরেছে, তা দেখার সাহসই পাননি। একটু পরে, তিনি সাহস করে ঘুরে দেখেন নড়াচড়া করছে দেহটি। বুঝতে পারেন প্রাণ আছে তাঁর দেহে। ওই কর্মী জানিয়েছেন, রবিনের সামান্য নড়াচড়া করতেও কষ্ট হচ্ছিল। এরপরই তিনি বাকি উদ্ধারকারীদের ডেকে আনেন। রবিনকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসার পর, রবিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তিনি দুই পা-ই হারিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, রবিন নাইয়া গ্রামের আরও সাত ব্যক্তির সঙ্গে কাজের সন্ধানে অন্ধ্রপ্রদেশে যাচ্ছিলেন। বাকি ছয়জনের এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। গুরুতর আহত রবিনকে বালেশ্বর থেকে নিয়ে আসা হয়েছে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে তাঁর।
রবিনের মামা মানবেন্দ্র সর্দার বলেছেন, “রবিন, আমার ভাগ্নে। পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে অন্ধ্রে যাচ্ছিল। ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জ্ঞান হারিয়েছিল ও। পরে দেখে ওকে লাশের স্তূপের সঙ্গে রেখে দেওয়া হয়েছিল। এক উদ্ধারকারীর পা চেপে ধরে জল খেতে চেয়েছিল। ওর জীবন বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করেছিল। উদ্ধারকারীরা এরপর ওকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়।”
তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, রবীন নাইয়ার পরিবারে এর আগেও বড় মাপের ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু এড়ানোর ইতিহাস রয়েছে। ২০১০ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরে নাশকতার মুখে পড়েছিল জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। সেই ঘটনায় ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই ট্রেনে ছিলেন তাঁদের পরিবারের আরেক সদস্য। তিনিও সেই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। সেই পরিবারেই ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়ার দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত তৈরি করল রবীন নাইয়া।
কোচবিহারঃ কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের দ্বন্দ্ব কিছুতেই মিটছে না। এ যেন অনেকটা…
গয়েরকাটাঃ শুক্রবার রাত নটা নাগাদ গয়েরকাটা বানারহাট রাজ্য সড়কের উপর দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির।…
শিলিগুড়ি: শহর আধুনিক হয়েছে। তবে পণ প্রথা কি দূর হয়েছে? উত্তরটা বোধহয় ‘না’। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন…
রায়গঞ্জঃ বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও বর্তমানে ভারতের নাগরিক। রয়েছে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, র্যাশন কার্ড এমনকী…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: বড় ধাক্কা খেলেন যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং।…
অনির্বাণ চক্রবর্তী, কালিয়াগঞ্জ: বালি মাফিয়াদের (Sand Mafia) দাপটে ত্রস্ত কালিয়াগঞ্জ। গ্রীষ্মের মরশুমে টাঙন এখন চোরাকারবারিদের…
This website uses cookies.