রাজ্য

ব্লকের স্কুলেই এবার পড়ুয়াদের জন্য আধার কার্ড

গৌরহরি দাস, কোচবিহার : ক্যাফেতে গিয়ে পয়সা দিয়ে অনলাইনে নাম রেজিস্ট্রেশন। তারপর বাড়ি থেকে দূরে সরকার অনুমোদিত কোনও সেন্টারে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা লাইন দিয়ে আর আধার কার্ড করাতে হবে না গ্রামের স্কুল পড়ুয়াদের। এবার থেকে ব্লকের নির্দিষ্ট স্কুলে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় ছাত্রছাত্রীরা আধার কার্ড করাতে পারবে। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের এভাবে কার্ড করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শহরে আধার কেন্দ্রের সংখ্যা তুলনায় বেশি থাকায় প্রাথমিকভাবে শহরের স্কুলগুলিকে এই প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পরবর্তী পর্যায়ে বাংলা সহায়তা কেন্দ্রগুলি থেকে শুধুমাত্র শহরের স্কুল পড়ুয়াদের আধার কার্ড করানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোচবিহার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সমরচন্দ্র মণ্ডল বলেন, কোচবিহার জেলার ১২টি ব্লকের মোট ২৪টি স্কুলে এই সেন্টার হচ্ছে। এর জন্য ২৭ জন কম্পিউটার শিক্ষককে বেছে নেওয়া হয়েছে। আধার তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম কলকাতা থেকে চলে এসেছে। রাজ্য থেকে ভার্চুয়াল কনফারেন্স করে দেখিয়ে দিচ্ছে সেগুলি কীভাবে ইনস্টল করতে হবে। এখন ইনস্টলেশনের কাজ চলছে। সেন্টারগুলিতে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় ছাত্রছাত্রীরা এই কার্ড করাতে পারবে।

ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলাতেই কলকাতা থেকে আধারের সমস্ত যন্ত্রপাতি চলে এসেছে। গ্রীষ্মের ছুটিতে সেন্টারগুলিতে সেই যন্ত্রপাতি ইনস্টলেশনের কাজও জোরকদমে শুরু হয়েছে। গরমের ছুটি শেষে স্কুল খোলার পর ছাত্রছাত্রীদের আধার কার্ড তৈরির কাজ শুরু হবে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর ও ইউআইডিআই-এর উদ্যোগে জেলা শিক্ষা দপ্তরগুলির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি বৈঠকও হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, প্রতিটি ব্লকের দুটি করে স্কুলের প্রতিটি সেন্টারে দিনে ২০টি করে আধার কার্ড তৈরি হবে। তবে শুধু নতুন কার্ড তৈরিই নয়, পাশাপাশি সেন্টারগুলিতে আপগ্রেডেশনের কাজও হবে। কোনও ছাত্রছাত্রীর যদি আগে আধার কার্ড থাকে এবং তাতে কোনওরকম ভুল থাকে সেক্ষেত্রে এই সেন্টারগুলিতে নাম সংশোধন, বায়োমেট্রিক আপডেশন, মোবাইল নম্বর রেজিস্ট্রেশন সহ সবরকম সংশোধন করা যাবে।

আলিপুরদুয়ার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আহসানুল করিম জানিয়েছেন, জেলার ছয়টি ব্লকের ১২টি স্কুলে এই সেন্টার তৈরির জন্য ১৪ জন কম্পিউটার টিচারকে বেছে নেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ির বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রাজীব প্রামাণিক বলেন, আমাদের এখানে আগেই কিছু কাজ হয়েছে। এখন চারটি ব্লকে আটটি সেন্টারে এই ইনস্টলেশনের কাজ চলছে।

এই কাজ করার জন্য স্কুলগুলিতে যে সব আইসিটি কম্পিউটার টিচার রয়েছেন তাঁদের মধ্যে থেকে পরীক্ষা নিয়ে ও প্রশিক্ষণ দিয়ে নির্বাচন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলাতে যতগুলি সেন্টার হচ্ছে তার থেকে  দুই-তিনজন করে বেশি শিক্ষক বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি সেন্টারে মাসে এই শিক্ষকদের ৪০০টি করে আধার কার্ড তৈরির টার্গেট রয়েছে। টার্গেট মোটামুটি পূরণ করতে পারলে মাসে তাঁদের ৮০০০ টাকা করে সাম্মানিক দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা এই আধার কার্ড তৈরির কাজ করবেন তাঁদের স্কুলে যাতে কম্পিউটার ক্লাস বাদ না যায় সেজন্যও ভাবনাচিন্তা করা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, সোমবার করে তাঁরা নিজেদের স্কুলে ক্লাস নেবেন।

প্রথম পর্যায়ে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের এই কার্ড করা হবে। পরে ধাপে ধাপে পঞ্চম থেকে অষ্টম এবং তারপর প্রাক প্রাথমিক থেকে চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের আধার কার্ড করা হবে। শিক্ষা দপ্তর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের এই কার্ড তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর বেসরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরও এই কার্ড করানো হবে।

জলপাইগুড়ি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বালিকা গোলে জানান, জেলায় ৯টি ব্লকে ১৮টি সেন্টার হয়েছে। এর জন্য ২০ জন কম্পিউটার টিচার বেছে নেওয়া হয়েছে। সেন্টারগুলিতে ইনস্টলেশনের কাজ চলছে।

কোচবিহার জেলায় যে ২৪টি স্কুলে এই সেন্টার হচ্ছে তার মধ্যে কোচবিহারের বাপুজি হাইস্কুল, উত্তর খাপাইডাঙ্গা হাইস্কুল, দিনহাটার জোরপাকুড়ি হাইস্কুল, মাথাভাঙ্গার রামঠেঙ্গা হাইস্কুল, মেখলিগঞ্জের জামালদহ নম্বর ২ আপার প্রাইমারি, তুফানগঞ্জের বালাকুঠি হাইস্কুল সহ প্রমুখ স্কুল রয়েছে। একইভাবে জলপাইগুড়ির সাহুডাঙ্গি হাইস্কুল ও ওদলাবাড়ি রয়েছে এই তালিকায়। আলিপুরদুয়ারের চেপানী হাইস্কুল, বারবিশা হাইস্কুল এবং শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়া হাইস্কুল, নন্দপ্রসাদ হাইস্কুলের নামও রয়েছে সেন্টার হিসেবে।

কোচবিহারে ইউআইডিআই-এর অপারেশন ম্যানেজার যিশু ভৌমিক জানান, পুরো বিষয়টি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর রাঁচি থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

Sourav Roy

Sourav Roy working as a Journalist since 2013. He already worked in many leading media houses in this few years. Sourav presently working in Uttarbanga Sambad as a Journalist & Sud Editor of Digital Desk from March 2019 in Siliguri, West Bengal.

Recent Posts

সামসী: পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা বোর্ড পরিচালিত হাই মাদ্রাসা, আলিম ও ফাজিল পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হল শুক্রবার।…

10 mins ago

OC changed | ডায়মন্ড হারবার ও আনন্দপুরের ওসি বদল করল কমিশন, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ মমতার

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ফের রাজ্যের আরও দুটি থানার ওসি বদল করল নির্বাচন কমিশন। এই…

23 mins ago

SSC Recruitment Scam | ‘যোগ্য-অযোগ্য বিভাজন সম্ভব’, নয়া দাবি এসএসসি চেয়ারম্যানের

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ‘যোগ্য-অযোগ্য বিভাজন করা সম্ভব।’ শুক্রবার এমনটা জানালেন এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার…

36 mins ago

SSC Verdict | সুবিচারের আশায় ফের রাস্তায় চাকরিহারারা, উত্তাল সল্টলেক

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ফের কলকাতার রাজপথে চাকরিহারারা (Ssc Jobless)। ন্যায্য চাকরির দাবিতে শুক্রবার তীব্র…

53 mins ago

Fire | চোখের সামনে পুড়ে ছাই লক্ষ লক্ষ টাকা! বাঁচাতে গিয়ে বাবা-ছেলে যা করলেন…

মানিকচক: গোপালপুরের মতিউল শেখ ছোট ব্যবসায়ী। শুক্রবার হাটে যাবে বলে বাড়িতে চার লক্ষ টাকা গচ্ছিত…

1 hour ago

Madhyamik Result 2024 | মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ মাত্র ৫ টোটো

নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট: মাদারিহাটের (Madarihat) টোটো জনজাতির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এবার মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হল মাত্র পাঁচজন।…

1 hour ago

This website uses cookies.