মুর্শিদাবাদ: কেন্দ্র সরকার যদি রাজ্যের প্রাপ্য ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা দ্রুত মিটিয়ে না দেয় তাহলে ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচি এবং রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন শুরু করবে তৃণমূল কংগ্রেস। শনিবার ‘জনসংযোগ যাত্রা’ এবং ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মুর্শিদাবাদের রানিনগর শেখপাড়াতে একটি জনসভাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনই জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে তিনি লালবাগ, বহরমপুর এবং রানিনগরে ‘রোড শো’ করেন।
এদিনের জনসভাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেক বলেন, ‘২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পরাজয়ের পর গায়ের জোরে কেন্দ্র সরকার আবাস যোজনা খাতে রাজ্যের প্রাপ্য সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা এবং ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে রাজ্যের প্রাপ্য প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা আটকে রেখে দিয়েছে। কেন্দ্রের দাবি মেনে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ করেছেন এমন ১১.৩৬ লক্ষ লোকের তালিকা গত ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রের হাতে তুলে দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র সরকার এক পয়সাও দেয়নি। তাই রাজ্যের প্রাপ্য আদায় করতে আগামী দিনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দিল্লিতে অবস্থান-বিক্ষোভে বসব।‘
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘রাজ্যের মানুষ ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ করে টাকা না পেলেও অধীর চৌধুরী বা কংগ্রেস নেতারা দিল্লির কোনও আধিকারিকদের সঙ্গে এই নিয়ে বৈঠক করেননি। মুর্শিদাবাদের লোকেরা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে টাকা না পেলেও অধীর চৌধুরী বা কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদিকে একটিও চিঠি লেখেননি। অধীর চৌধুরী বা বামফ্রন্টের নেতারা কখনও মোদি বা অমিত শাকে আক্রমণ করেন না। তাঁদের আক্রমণের লক্ষ্য শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।‘
তৃণমূল দলকে বিজেপির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন বলে সম্বোধিত করে অভিষেক বলেন, ‘একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলাতে পরাজয়ের পর কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম কমাতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু হিমাচলপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন বা সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেস জেতার পর বিজেপি পেট্রোপণ্যের দাম এক টাকাও কমায়নি। সাগরদিঘি উপ নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী জেতাতে বিজেপি রাজ্যে অক্সিজেন পেয়েছে। ওই কেন্দ্রে তৃণমূল জিতলে রাজ্যে রামনবমীতে এবার যা ঘটনা ঘটেছে তেমন ঘটনা ঘটত না।‘
রাজ্যের বিরোধী দলনেতার গাড়ির কনভয়তে সম্প্রতি এক ব্যক্তির চাপা পড়ে মৃত্যুর ঘটনাতে বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে ‘নিষ্ঠুর’, ‘নির্মম’, ‘নির্লজ্জ’, ‘বিবেকহীন’ বলে আক্রমণ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বিরোধী নেতার কর্তব্য ছিল ওই ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তা না করে তিনি ১০০ কিলোমিটার বেগে ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। বিরোধী দলনেতা হিসেবে যদি এখন থেকেই মানুষকে মারতে থাকেন তাহলে ক্ষমতায় এলে এরা কী করবেন ভেবে দেখেছেন!’ রানিনগরে আজকের জনসভা থেকে অভিষেক ফের একবার মনে করিয়ে দেন তৃণমূল কংগ্রেস এই রাজ্যে এনআরসি হতে দেবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষকে জাত ধর্মে ভাগ হতে দেব না।’