সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি : এনিয়ে তিনবার। সেরা সেবিকা হিসেবে ধূপগুড়ি ফের দেশে এক নম্বরে। মঙ্গলবার ভারতীয় নার্সিং ফেডারেশনের তরফে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এরাজ্যের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ধূপগুড়ির অবিস্মিতা ঘোষ ২০২২ সালের ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন। অবিস্মিতা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ১৪ জন এই তালিকায় আছেন।
এর আগে ২০২০ সালে নাগরাকাটা ব্লকে কর্মরত ধূপগুড়ির সুনীতা দত্ত এবং ২০২১ সালে ফালাকাটা ব্লকে কর্মরত ধূপগুড়ি শহরের স্মিতা কর রাজ্যের হয়ে সর্বভারতীয় এই সম্মান পেয়েছেন। এবারের বিজয়ী অবিস্মিতা বর্তমানে ধূপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলের পূর্ব আলতাগ্রাম সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কমিউনিটি হেলথ অফিসার হিসেবে কর্মরত। ১৪ বছরের পেশাগত জীবনের সেরা স্বীকৃতি হিসেবে জুন মাসের মাঝামাঝি নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু অবিস্মিতার হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন।
২০০২ সালে অবিস্মিতা জলপাইগুড়ি আনন্দ চন্দ্র কলেজে ভূগোল অনার্স পড়া ছেড়ে জিএনএম ট্রেনিংয়ে যোগ দেন। ২০০৫ সালে প্রশিক্ষণ শেষের পর ২০০৯ সালে ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে স্টাফ নার্স হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু। টানা ১০ বছর সফলভাবে নার্সিং করার পর ২০১৯ সালে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে কমিউনিটি হেলথ অফিসার পদে যোগ। মৌলিক ন্যূনতম স্বাস্থ্য নীতি ও পরিষেবা বাস্তবায়নের পাশাপাশি টিকাকরণ থেকে প্রসূতি ও সদ্যোজাতদের দেখভালের মতো বিষয়গুলি তাঁর হাতে। আশাকর্মী থেকে স্বাস্থ্যকর্মী, সকলকে নিয়ে গ্রামের টিকাকরণের চেহারা বদলে দিয়ে দেশের সেরা নার্সের স্বীকৃতি মিলেছে। স্কুল শিক্ষক স্বামী এবং দুই সন্তান সামলে অবিস্মিতা সমানতালে নিজেকে স্বাস্থ্য পরিষেবায় সঁপে দিয়েছেন।
অবিস্মিতার দেশের সেরা হওয়ার খবরে গতবার এই সম্মান পাওয়া স্মিতা কর বললেন, আমরা যাঁরা এই পেশায় রয়েছি, তাঁদের কাছে এই সম্মান গোটা জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা। এটা যে কতটা আনন্দের তা নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝেছি। একই শহরের কেউ সেই সম্মান পেলে আনন্দের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
সেরা সম্মানে সম্মানিত অবিস্মিতা বললেন, একটা নিশ্চিত সরকারি চাকরির লক্ষ্যেই উচ্চমাধ্যমিকের পর কলেজ ছেড়ে নার্সিং ট্রেনিংয়ে গিয়েছিলাম। নার্সিং যে শুধুমাত্র একটি পেশা নয়, তা কাজে যোগ দেওয়ার পর বুঝতে পারি। একজন দক্ষ নার্স একজন মানুষের জীবন ও মৃত্যুর ফারাকটা গড়তে পারেন। এই উপলব্ধির পর ১৪টা বছর সমানে লড়ে গিয়েছি। আজ মনে হচ্ছে সেই লড়াই বিফলে যায়নি।