বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: ঘটনা অন্যরকম হলেও স্মৃতিতে যেন নাড়া দেয় আমির খান-জুহি চাওলার ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ সিনেমার প্লট। পালিয়ে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখেছিলেন দুজনেই। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তরুণীর। গুরুতর জখম অবস্থায় প্রেমিককে বুধবার রাতে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসারত অবস্থায় এদিন সকালে মৃত্যু হয়।
এদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিকেলে তরুণীর দেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেয় রায়গঞ্জ থানার পুলিশ। তরুণের পরিবারের সদস্যরা না আসা পর্যন্ত মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে না বলে জানানো হয়েছে থানার তরফে। রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে মৃত তরুণীর নাম সনি কুমারী (২০)। বাড়ি উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরে। স্থানীয় হাইস্কুলের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। মৃত তরুণের নাম সিঙ্কু দুবে (২৪) পেশায় গৃহশিক্ষক। তাঁর ওই এলাকায় একটি কোচিং সেন্টার ছিল। বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলায়। দুই বছর ধরে ওই কোচিং সেন্টারে পড়তে যেতেন সনি কুমারী। কোচিং সেন্টারের অধ্যক্ষ সিঙ্কু দুবের সঙ্গে প্রেমের খবর জানাজানি হওয়ার পর মেয়ের পরিবারের তরফ থেকে সম্প্রতি অন্যত্র বিয়ে ঠিক করা হয়।
দশদিন পর সনি কুমারীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই চলতি মাসের ৭ তারিখ ভোররাতে উত্তরপ্রদেশ থেকে বাইকে ওই তরুণ-তরুণী কলকাতায় সিঙ্কুর মামার বাড়িতে পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। ৭ জানুয়ারি ভোর চারটা নাগাদ প্রেমিকাকে নিয়ে উত্তরপ্রদেশ থেকে বিহারের পূর্ণিয়ায় মাসির বাড়িতে এসে রাত্রিযাপন করেন সিঙ্কু। বুধবার সকালে পূর্ণিয়া থেকে কলকাতার কালীঘাটে মামার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। অবশ্য পূর্ণিয়ায় মাসির বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় বিহারের আড়ালিয়া গ্রামে আর এক মাসির বাড়িতে গিয়েছিলেন তরুণ। কিন্তু দুই মাসিই এরকম ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সম্মতি দেননি। তাঁদের সাফ জবাব ছিল, মেয়ের পরিবারের তরফ থেকে নিখোঁজ ও অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাই এত বড় ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব নিতে তাঁরা নারাজ। দুই মাসি এরপর মামার বাড়ির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়ার পর কলকাতার উদ্দেশে বাইকে করে ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দেন সিঙ্কু। কালীঘাটে তাদের বিয়ে দেওয়ারও কথা ছিল ছেলের মামার পরিবারের তরফ থেকে। কিন্তু তার আগেই মর্মান্তিক পরিণতি। মৃত্যু হল দুজনের।
বাইকে দুজন আসার পথে করণদিঘির ঝাড়বাড়ি এলাকায় একটি লরির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়, প্রেমিকার। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয় প্রেমিকের। রায়গঞ্জ থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে।
অন্যদিকে, ওই তরুণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে করণদিঘি থানায়। ঘটনাপ্রসঙ্গে মৃত তরুণীর বাবা কৃষ্ণ গুপ্তা বলেন, ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় আমার মেয়ে। এরপর থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করি।’ মেয়ের মৃত্যুতে প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন বাবা কৃষ্ণ গুপ্তা। তার বক্তব্য, ‘আমার মেয়ের অন্যত্র বিয়ে ঠিক করার জন্যই এই মর্মান্তিক পরিণতি। সবকিছু মেনে নিলে এই ধরনের ঘটনা ঘটত না।’