শিলিগুড়ি: মহালয়ার আগে শেষ রবিবারের দুপুরে হাকিমপাড়ার অরুণোদয় সংঘের পুজো প্যান্ডেলের সামনে দাঁড়িয়ে কর্মকর্তারা ডেকোরেটারের কর্মীদের কিছু একটা বলছিলেন। সামনে গিয়ে জানা গেল, আড্ডার জায়গা ছোট হয়ে যাচ্ছে। তাই প্যান্ডেলের নকশা পরিবর্তন করে পুজোমণ্ডপের আয়তন বড় করতে হবে। নয়তো বড় পরিসরে আড্ডা সম্ভব নয়। পুজো আয়োজকদের কথা শুনে ডেকোরেটারের কর্মীরা প্যান্ডেলের আয়তন বাড়ানোর কাজ শুরু করে দিলেন।
বলতে গেল মণ্ডপে আড্ডা আর এলাকার সকলে মিলে চারদিন ধরে খাওয়া-দাওয়া, এই যেন হাকিমপাড়া এলাকার পুজোর ইউএসপি। এলাকার পুজো নিয়ে কথাবর্তায় তা স্পষ্ট হয়ে গেল। এলাকায় দুটি বারোয়ারি পুজো হলেও তাতে স্থানীয় বাসিন্দারের যোগদান প্রত্যেক বছর ঘরোয়া পুজোর আমেজ নিয়ে আসে। তা কম কিংবা বেশি দুই ধরনের বাজেটের পুজোর ক্ষেত্রেই থাকে। বারোয়ারি পুজো হলেও নিষ্ঠাসহকারে পুজোর ক্ষেত্রে কোনও খামতি রাখা হয় না। তবে পুজোর আড্ডাই যেন সবকিছুর মাঝে বাড়তি আকর্ষণ।
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য সরকারের পুজো অনুদান বর্জন করে শিরোনামে উঠে এসেছে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাকিমপাড়ার অতুলপ্রসাদ সরণির মহিলা পরিচালিত পুজো কমিটি ‘আহ্বান’। আরজি করের ঘটনার জেরে পুজোর জাঁকজমক কমলেও তাতে আড্ডার জায়গা কমেনি। বাজেটে কিছুটা কাটছাঁট হয়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক নীলি ভৌমিকের কথায়, ‘পুজোর ক’দিন মণ্ডপেই কেটে যায়। এখানেই খাওয়ার আয়োজন থাকে। এ বছর অষ্টমীতে সেই ব্যবস্থা থাকছে। পাড়ার প্রায় প্রতিটি বাড়ির মানুষ এখানে থাকেন। অঞ্জলি দেন। চলে আড্ডা। পুজোর জোগাড়ে সকলে হাত বাড়িয়ে দেন। একসঙ্গে আড্ডা, মজা করেই পাড়ায় কাটাই।’ পুজো কমিটির সদস্য কণিকা দে, মালা দে, মহুয়া মালাকারদের বক্তব্য, পুজোর দিন পাড়া ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে না। অনেকে পুজোর সময় বাইরে থেকে চলে যান। সকলে একসঙ্গে পুজোর সময় কাটানোর মজাটাই আলাদা। এবছর পুজোর বিসর্জন জাঁকজমক হবে না। তবে ছোটদের জন্য কিছু অনুষ্ঠান হবে।
অন্যদিকে, অরুণোদয় সংঘে এবছর সপ্তমী থেকে দশমী চারদিনই পাড়ার সকলের জন্য খাওয়ার আয়োজন করা হচ্ছে। পুজো কমিটির সম্পাদক সলিল চক্রবর্তীর কথায়, ‘পুজোর দিনগুলিতে ভাত, পোলাও, ডাল, ভাজা, নিরামিষ তরকারি, পনিরের মতো নিরামিষ পদ রান্না হয়। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মানুষ খান। দশমীতে বিসর্জনের পর আমিষ পদ হয়। সবেতেই পাড়ার মানুষেরা থাকেন।’ পুজোতে মহিলাদের আড্ডা চোখে পড়ে। পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বিদ্যুৎ সরকারের কথায়, ‘এলাকার মহিলারা ভোররাত পর্যন্ত মণ্ডপে আড্ডা দেন। কেউ মণ্ডপের আড্ডা ছেড়ে যেতে চান না। এমনটা খুব কম দেখা যায়। সেই কারণে এখানে আড্ডার জায়গাকে দারুণ গুরুত্ব দেওয়া হয়।’