শুভদীপ শর্মা, লাটাগুড়ি: জঙ্গলের রাস্তা ব্যবহার করে রিসর্টে (Jungle Resort) যেতে হলে এবার থেকে টাকা দিতে হবে। এই টাকা আদায়ের লক্ষ্যে জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) বন বিভাগ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। পূর্ব লাটাগুড়ির (Lataguri) একাধিক রিসর্টে যেতে হলে জঙ্গলের রাস্তাই একমাত্র ভরসা। এই রাস্তায় প্রাথমিকভাবে একটি চেকপোস্ট তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই বিভিন্ন গাড়ি থামিয়ে সেগুলি থেকে টাকা আদায় করা হবে। বন দপ্তর এবারে এই রাস্তা থেকে টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু করায় পরিবহণ ব্যবসায়ীরা চিন্তায় পড়েছেন। পাশাপাশি, পর্যটন মহলেও উদ্বেগ বাড়ছে। বন দপ্তর এই রাস্তা ব্যবহারের জন্য পরিবহণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তুললে আখেরে সেই কোপ পর্যটকদের ওপর পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফোরামের জয়েন্ট সেক্রেটারি বিপ্লব দে বললেন, ‘টাকা আদায়ের জন্য যেখানে এই চেকপোস্টটি তৈরি করা হয়েছে সেখান থেকে কয়েক মিটার দূরেই কয়েকটি রিসর্ট রয়েছে। সেখানে যেতে এভাবে টাকা নেওয়ার কোনও মানেই হয় না।’ জলপাইগুড়ি বন বিভাগের ডিএফও বিকাশ ভি বললেন, ‘কবে থেকে কত টাকা আদায় করা হবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। অনুমোদনের জন্য গোটা বিষয়টি ওপরমহলের কাছে পাঠানো হয়েছে। সংগৃহীত টাকা এই রাস্তা সংস্কারের কাজে লাগানো হবে। টাকা বাঁচলে তা জঙ্গলের নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করা হবে।’
লাটাগুড়ি বাজার পার করলে জঙ্গলের একটি রাস্তা রেললাইন পার করে পূর্ব লাটাগুড়ির দিকে কয়েকটি রিসর্টের দিকে চলে গিয়েছে। এই রিসর্টগুলিতে যাতায়াতে বহু বছর ধরে এই রাস্তাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তাটি খানাখন্দে ভরে থাকে। বর্ষায় এই রাস্তাটি প্রতিবার বেহাল হয়ে পড়ে। পর্যটক নিয়ে কোনও গাড়ি এই রাস্তাটি ব্যবহার করে রিসর্টের দিকে গেলে সেই গাড়ি থেকে টাকা আদায় করা হবে বলে বন দপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য এই রাস্তায় প্রাথমিকভাবে একটি চেকপোস্ট তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই গাড়ি থামিয়ে টাকা আদায় করা হবে। খবর ছড়াতেই বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
লাটাগুড়ি লাইট মোটর ভেহিকল ওনার্স কাম ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপুল দে বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে পর্যটকদের নিয়ে এই রাস্তাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এবারে হঠাৎ কী কারণে এই রাস্তাটি ব্যবহারের জন্য টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল তা কিছুতেই আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। এ বিষয় নিয়ে বন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’ এক ট্যুর অপারেটরের আশঙ্কা, ‘এভাবে টাকা আদায় করা হলে হয়তো শেষমেশ পর্যটকদেরই তা মেটাতে হবে। এতে পর্যটকদের সমস্যা বাড়লে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে। বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন।’ লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য বন দপ্তরের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বললেন, ‘সামান্য টাকা নিয়ে যদি তা ওই রাস্তাটি সংস্কারের কাজে লাগানো হয় তবে সামগ্রিকভাবে এলাকার উন্নয়ন হবে। আমরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।’