Friday, March 29, 2024
Homeউত্তরবঙ্গআলিপুরদুয়ারদুয়ারে কাঠ পাচার ঠেকাতে হিমশিম প্রশাসন

দুয়ারে কাঠ পাচার ঠেকাতে হিমশিম প্রশাসন

আলিপুরদুয়ার: কয়েকদিন পরপর অভিযান। স্পেশাল রেইড। ট্রেন, বাস কিংবা কোনও বাড়ি বা কারখানায় অভিযান করে চোরাই কাঠ উদ্ধার। কাঠ পাচার আটকাতে বন দপ্তরের এই রকম সাফল্যের গাঁথা হিসেব করতে বসলে হয়তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কেটে যাবে। আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা টাইগার রিজার্ভের বনকর্মীরা হোক কিংবা জলদাপাড়া‌ জাতীয় উদ্যানের। কাঠ পাচার আটকাতে দুই জায়গার বনকর্মীদের রেকর্ড কিন্তু বেশ ভালো। তবুও কিন্তু জঙ্গল থেকে কাঠ চুরি বা কাঠ পাচার কমছে না। এটাই বড় মাথা ব্যথার কারণ বনকর্মীদের কাছে।

আদতে জেলার বিভিন্ন জায়গার এই ‘কুটির শিল্প’ ঠেকানো অনেকটাই মুশকিল বন দপ্তরের। কখনও সেটা কমলেও, একদম শেষ হয় না। এটার মূল কারণ কাঠ পাচারটা এমন জায়গায় গিয়ইয় দাঁড়িয়েছে যে, বিভিন্ন বনবস্তিতে প্রচুর লোক কাঠ পাচারের কৌশলে পারদর্শী। আর গোটা জেলাতেই যে কাঠ পাচারের একজনই মাথা এমন বিষয় নেই। যদিও সেই রকম বিষয় হলে মাথাকে আটকে দিলেই পুরো নেটওর্য়াক বন্ধ হয়ে যেত বলে মত বন কর্তাদের। আসলে আলিপুরদুয়ার জেলায় কাঠ পাচারের ছোট ছোট অনেক সিন্ডিকেট রয়েছে। সেখানে যুক্ত রয়েছে বেশ কিছু প্রভাবশালীও। তবে নীচু স্তরে অনেকেই রয়েছে যাঁদের নিজেদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। জঙ্গল থেকে গাছ কেটে অর্ডার অনুযায়ী সেগুলো সঠিক মাপে কেটে জায়গা মতো পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে লোকেরা কাজ করে। এভাবেই যেখানে প্রয়োজন এক অর্ডারে সেখানেই পৌঁছে যাচ্ছে দুয়ারে কাঠ। যদিও বন দপ্তর বলছে, কাঠ পাচার আটকাতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বক্সা টাইগার রিজার্ভের ফিল্ড ডাইরেক্টর অপূর্ব সেনের যেমন এবিষয়ে বক্তব্য, ‘আমাদের যে লোক রয়েছে এবং যতটুকু সীমানা রয়েছে, সেটা আমরা ঠিক রাখার চেষ্টা করি। কাঠ পাচার ঠেকাতে নিয়মিত টহল চলে জঙ্গলে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযানও করা হয়।’

জেলার বিভিন্ন জঙ্গলের কাঠের জেলাজুড়ে যেমন ব্যাপক চাহিদা থাকে, তেমনই পাশের জেলা কোচবিহারেও ভালো চাহিদা। বক্সা টাইগার রিজার্ভ থেকেই এই কাঠগুলো বিভিন্ন জায়গায় যায়। বিশেষ করে এই জঙ্গলের সেগুন কাঠ পাচার হয় বেশি। বক্সা টাইগার রিজার্ভ সংলগ্ন কালচিনি ব্লকের গাঙ্গুটিয়া এবং চিলচিলা চা বাগান এলাকায় জঙ্গল থেকে বড় কাঠের লক কেটে আনার প্রবণতা বেশি রয়েছে বর্তমানে। এছাড়াও কালচিনি ও কুমারগ্রাম ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় কাঠ কাটার পুরোনো ইতিহাস তো আছেই। কোনও গোপন ডেরায় ওই গাছ অর্ডার অনুযায়ী সাইজ করে চেরাই করা হয়। সেখান থেকে সাইকেলে করে এগুলো বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছোয়। কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী এই ব্যবসায় মোটা অংকের টাকা কামিয়ে নেয়। তারা শ্রমিক খাটায়। কখনও এই কাঠ সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য চুক্তি করা হয়, কখনও বা দৈনিক মজুরির মধ্যে দিয়েও এই কাজ করানো হয়।

সাইকেলের রুট বললে কালচিনি থেকে এই চেরাই কাঠ কখনও ১২ এ রাজ্য সড়ক ধরে নিমতিতে আসে।আবার কখনও গ্রামের ভিতরের পথ ধরে। নিমতি থেকে এই সাইকেলগুলো ৩১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে চিলাপাতা জঙ্গল লাগোয়া মেন্দাবাড়ি গ্রামের রাস্তা ধরে আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকে ঢোকে। সেখান থেকে নিমতি জঙ্গল লাগয়া পাটকাপাড়া গ্রাম হয়ে তপশিখাতা আসে। তপশিখাতা থেকে ওই সাইকেলেই চেরাই করা কাঠ মরিচবাড়ি হয়ে কোচবিহার জেলায় প্রবেশ করে। অন্য বাহনের থেকে সাইকেল অনেকটা নিরাপদ বলে মত পাচারকারীদের। সাইকেলে সহজেই যেকোনও রাস্তায় যাওয়া যায়, সেটা গ্রামের সরু রাস্তাই হোক না কেন। আর বন দপ্তরের খবর পেয়ে বিপদ মনে হলে সাইকেল লুকিয়ে রাখতেও অনেকটা সুবিধা হয়। সাইকেলেই তাই এগিয়ে যাচ্ছে জেলার অন্যতম ‘কুটির শিল্প’।

Sucharita Chanda
Sucharita Chandahttps://uttarbangasambad.com/
Sucharita Chanda is working as Sub Editor Since 2020. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img
[td_block_21 custom_title="LATEST POSTS"]

Most Popular