উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ইরানের পর কি ইজরায়েলের (Israel) লক্ষ্য পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি? সমাজমাধ্যমে ইজরায়েলের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেইর মাসরির (Meir Masri) একটি পোস্ট ঘিরে এই জল্পনা জোরদার হয়েছে। মাসরি দাবি করেছেন, ইরানের পর এখন ইজরায়েলের চোখ পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির (Pakistan Nuclear Programme) দিকে। অর্থাৎ ইরানের পর পাকিস্তানের পারমাণবিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করা যেতে পারে। উর্দু ও ইংরেজিতে এক্স হ্যান্ডল (সাবেক টুইটার) পোস্টে মাসরি বলেছেন, ‘ইরানের পর আমরা পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি তছনছ করে দিতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান ইরান থেকে খুব একটা দূরে নয়, আশা করি আমার ইঙ্গিত বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না।’ মাসরি এই মুহুর্তে ইজরায়েলে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই। তবে ইজরায়েলের রাজনৈতিক মহলে ও নীতি নির্ধারকদের মধ্যে তাঁর প্রভাব রয়েছে।
সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ইরানের এক সেনা কমান্ডার তথা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য মহসিন রেজাই জানান, পাকিস্তান ইরানের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। তেহরানকে সমর্থন করেছে। প্রয়োজনে ইরানের হয়ে পারমাণবিক যুদ্ধে নামবে ইসলামাবাদ। রেজাইয়ের কথায়, ‘পাকিস্তান আমাদের বলেছে, ইজরায়েল যদি ইরানে পারমাণবিক হামলা চালায়, তাহলে ওরাও ইজরায়েলে আণবিক বোমা ফেলবে।’ পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে সঙ্গে সঙ্গেই এক্স হ্যান্ডেলে বিবৃতি দেন পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খোয়াজা মহম্মদ আসিফ। তিনি সাফ জানান, ইসলামাবাদ এমন কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি। সম্প্রতি পাকিস্তানের সেনা প্রধানও আমেরিকা সফরে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন। এচে মুখে ইরানকে সমর্থনের কথা জানালেও পাকিস্তানের দৌড় যে খুব বেশিদূর হবে না তা পরিষ্কার।
ফলে ইজরায়েলের এই প্রাক্তন মন্ত্রীর দাবি, ইসলামাবাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। মেইর মাসরির বিবৃতি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা চরমে। দিনরাত উভয় দিক থেকেই ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে পাকিস্তানের আতঙ্ক বাড়িয়ে ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর একটি পুরনো ভিডিও ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে, যেখানে তাকে ইরানের পর পাকিস্তানে আক্রমণের কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক তীব্র হয়েছে। মানুষ প্রশ্ন তুলছে, যে ইজরায়েল কি সত্যিই এখন পাকিস্তানের পারমাণবিক ঘাঁটি লক্ষ্য করতে পারে? এটা কি কেবল মানসিক চাপ নাকি সত্যিকারের কোনও প্রস্তুতি চলছে? পাকিস্তানের সামরিক মহলেও আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির অভ্যন্তরীণ বৈঠকে নিরাপত্তা প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেছেন। অপারেশন সিঁদুরের পর থেকে পাকিস্তান বিমান বাহিনী পুরোমাত্রায় সতর্ক রয়েছে।’
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরদারিতে রয়েছে। কিন্তু ইজরায়েল আশঙ্কা করছে যে পাকিস্তানের এই কর্মসূচি মৌলবাদী শক্তির হাতে পড়তে পারে, অথবা এটি তৃতীয় কোনও দেশের মাধ্যমে ইরানের কাজে লাগতে পারে। মেইর মাসরির এই বক্তব্য এই কারণেই আরও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে যে তিনি ইজরায়েলি পররাষ্ট্রনীতির সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং ইজরায়েলের কৌশলগত চিন্তাভাবনা খুব ভালোভাবে বোঝেন। তিনি বলেছেন, যে ইরানের পরে যদি কোনও দেশ ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে, তবে তা হল পাকিস্তান। তবে ইজরায়েলের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে মাসরির দাবিতে যদি সামান্যতম সত্যতা থাকে, তাহলে পশ্চিম এশিয়ার পরে, দক্ষিণ এশিয়ায়ও বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।