বর্ধমান: জন্মের সময় থেকেই দুটি হাত থেকেও যেন নেই। খর্বকায় দুটি হাতে নেই তালু, নেই আঙুল। কিন্তু তাতে আর কি যায় আসে। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর জগন্নাথ মাণ্ডি পা দিয়ে লিখেই এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। পরীক্ষা দিয়ে পাস করার ব্যপারেও দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিল জগন্নাথ। আর সেটাই হয়েছে। শুক্রবার মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হওয়ার পর জগন্নাথ জানতে পারে সে ২৫৮ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। বিশেষভাবে সক্ষম দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের এক ছাত্রের এই সাফল্যকে কুর্নিশ জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক সহ এলাকার মানুষজন।
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জগন্নাথ মাণ্ডির বাড়ি পূর্ব বর্ধমাণের মেমারি থানার সিমলা গ্রামের আদিবাসী পাড়ার। তাঁর শৈশব জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মেছে জেনে ছোটবেলাতেই তাঁকে ছেড়ে চলে যায় মা। তবে বাবা, ঠাকুমা এবং পিসি ও দাদার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়নি জগন্নাথ। তাঁরাই লেখাপড়া শেখার প্রতি জগন্নাথকে ছোট থেকেই আগ্রহী করে তোলেন। ভর্তি করেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তখন থেকেই পা দিয়ে বাংলায় লেখা রপ্ত করতে শুরু করে জগন্নাথ। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জগন্নাথ পা দিয়ে লেখাতে সাবলীল হয়ে ওঠে। একের পর এক ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। জগন্নাথই ছিল সিমলা আদিবাসী পাড়া থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া একমাত্র ছাত্র। তাই জগন্নাথের মতো পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দিতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য সবরকম সহযোগিতা করেছিল মেমারির বাগিলা পূর্ণচন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের পরীক্ষকরা।
নুদীপুর ভূপেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক কিশোর ঘোষাল বলেন, ’জগন্নাথ খুব ভালো ছেলে। লেখাপড়ার ব্যাপারেও ও খুব সচেতন। ওর ব্যবহার মুগ্ধ করে স্কুলের সকল শিক্ষক ও সহপাঠীদের।‘ বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের কথায়, ‘ভালো ফুটবলও খেলার পাশাপাশি জগন্নাথ পা দিয়ে খুব ভালো ছবিও আঁকে।‘
জগন্নাথ এদিন জানায়, যখনই সময় পেতাম পড়তে বসতাম। মাত্র একজন প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়তে যাওয়ার সৌভাগ্য কোনরকমে হয়েছিল। স্কুলের শিক্ষকরাই সাহায্য করেছেন।‘