প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ নয়া সংসদ ভবনে স্থাপিত মোদি সরকারের ‘অখণ্ড ভারত’ মুরাল চিত্র নিয়ে ক্রমে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এদিন এ নিয়েও মুচলেকা দেওয়া হয়েছে। বলে রাখা প্রয়োজন, ‘অখন্ড ভারতের’ এই মানচিত্র দেখে একদিকে বিরোধীরাও যেমন রে রে করে তেড়ে এসেছে, ঠিক তেমনই ভারতকে সরাসরি টার্গেট করেছে নেপাল ও পাকিস্তান।
বিরোধীদের দাবি, আসলে মানচিত্রটি হল আরএসএসের ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর এজেন্ডা। এদিকে বিতর্কিত মানচিত্র নিয়ে তোপ দেগেছে নেপাল। মানচিত্রে গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনী ও কপিলাবস্তুকে ভারতের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। নেপাল মারাত্মক ক্ষুব্ধ ঠিক এখানেই। নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি ও বাবুরাম ভট্টরাই রীতিমত হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। ভারতের এমন পদক্ষেপে এবার নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।
অন্যদিকে রাগে ফুঁসে উঠেছে পাকিস্তানও। পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অংশ সেখানে ভারতের অংশভূত। ইসলামাবাদে এই নিয়ে প্রতিবাদও হয়েছে। পাক সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধি ছুঁড়ে দিচ্ছেন হুঁশিয়ারি। তবে এ বিষয়ে ঐতিহাসিক মহলের দাবি, এটা এখনকার কোন পরিকল্পনা নয়। আসলে সংসদ ভবনে থাকা এই মানচিত্র সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে ভারতের মানচিত্র। শুক্রবার সেই তত্ত্বই শোনা গেল বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের কণ্ঠে।
মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এদিন জানিয়েছেন, ‘সম্রাট অশোকের শাসনাধীন ভারতবর্ষের চিত্র এটি। এর উপর পালি ও খরোষ্ঠী ভাষায় লেখা সুশাসন কী ভাবে সম্ভব! এ নিয়ে অযথা বিতর্ক হওয়া উচিত নয়।’ তিনি এও বলেন, পাকিস্তানে এ নিয়ে কোথায় কী প্রতিবাদ হচ্ছে তা কেন্দ্র সরকারের অজ্ঞাত, তবে এ মুহূর্তে ভারত সফরে আসা নেপাল প্রধানমন্ত্রী পুস্পকমল দহল ‘প্রচন্ডে’র সঙ্গে এ নিয়ে ভারত সরকারের কোনো আলোচনা হয়নি। উল্লেখ্য, আরএসএসের ‘অখণ্ড ভারত’ এবং সনাতন ধর্মগুরুদের ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ তথা সেই রাষ্ট্রের প্রস্তাবিত নতুন সংবিধান, খসড়া, মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের ভোটাধিকার না থাকার মতো বিষয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপির শীর্ষনেতারা আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। কেন্দ্রীয় বা রাজ্য পর্যায়ের কোনো নেতাই মোহন ভাগবত বা প্রহ্লাদ জোশির বক্তব্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। হায়দরাবাদের আইমিম নেতা ও সাংসদ আসাউদ্দিন ওয়েইসি অবশ্য টিপ্পনী কেটে বলেছেন, ‘আগে চীন ও পাকিস্তানের কবজা থেকে জমি উদ্ধার করে দেখাক সরকার, তার পর না হয় অখণ্ড ভারতের কথা ভাবা যাবে।’