অভিজিৎ ঘোষ, আলিপুরদুয়ার : রাজ্য সরকারের উদ্যোগে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ক্যানসার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ক্যানসার স্ক্রিনিং করা হচ্ছে জেলা হাসপতালগুলোয়। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালেও ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। এই হাসপাতালে কেমোথেরাপির বন্দোবস্তও রয়েছে। কিন্তু নেই রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা।
এই পরিষেবা পেতে এখনও জেলার রোগীদের ছুটতে হয় শিলিগুড়ি। উত্তরবঙ্গের একমাত্র উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ এবং মালদা মেডিকেল কলেজে এই পরিষেবা মেলার কথা। তার মধ্যে আবার গত প্রায় দু’বছর থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে এই পরিষেবা বন্ধ। এজন্য আলিপুরদুয়ার জেলা সহ কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি সহ পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকার রোগীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কাউকে যেতে হচ্ছে মালদায়। আর যদি কারও পক্ষে মালদা যাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে বাধ্য হয়ে মোটা টাকা খরচ করে রেডিওথেরাপি করাতে হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি জেলায় তো কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এই পরিষেবা মেলে না। তাই এখানকার রোগীদের শিলিগুড়ির নার্সিংহোমগুলির ভরসায় থাকতে হয়।
উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, দ্রুত তারা পরিষেবা ঠিক করার চেষ্টা করছে। মেডিকেল কলেজের এমএসভিপি ডাঃ সঞ্জয় মল্লিকের কথায়, ‘বর্তমানে বেশিরভাগ রোগীকে রেফারেল সিস্টেম অনুযায়ী মালদায় পাঠানো হচ্ছে। কীভাবে দ্রুত রেডিওথেরাপি শুরু করা সেটা দেখা হচ্ছে।’ সেই মেডিকেল কলেজের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ডাঁ সম্রাট দত্ত জানিয়েছেন, রেডিওথেরাপি বিভাগে বিভিন্ন কাজ চলছে। ভবন সংস্কার করা হচ্ছে। পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা হচ্ছে। তাই এই সমস্যা।
ব্রেস্ট ক্যানসারের জন্য কয়েকমাস আগে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে রেডিওথেরাপি করাতে মাকে নিয়ে গিয়েছিলেন পুঁটিমারির বাসিন্দা পায়েল বর্মন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন মেডিকেল কলেজে এই পরিষেবা আপাতত বন্ধ। তাই একটি নার্সিংহোমে রেডিওথেরাপি করাতে হয়। পায়েলের কথায়, ‘স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করিয়েছি। তবে ডাক্তার দেখানো, যাতায়াত খরচ, বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য মোটা টাকা খরচ হয়েছে।’
একই রকম কথা শোনা গেল খোয়ারডাঙ্গার বাসিন্দা পুষ্পা রায়ের কাছে। প্রায় একমাস শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতে হয়েছে তাঁকে। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে এই পরিষেবা থাকলে অনেক খরচ বাঁচত বলে মত পুষ্পার।
সরকারি হাসপাতালে এই পরিষেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। বেসরকারি হাসপাতালে রেডিওথেরাপির বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে। খরচ হয়ে যায় লক্ষাধিক টাকা।
কিন্তু আলিপুরদুয়ার জেলায় কেন এই পরিষেবা চালু হচ্ছে না? জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন, এই পরিষেবা মেডিকেল কলেজ থেকেই দেওয়া হয়। এখনও উত্তরবঙ্গের একাধিক মেডিকেল কলেজেই রেডিওথেরাপি চালু হয়নি। তাই জেলা হাসপাতলে সেটা চালু হওয়ার কথা ভাবাও হচ্ছে না।